হাওর বার্তা ডেস্কঃ ধূ ধূ মরুভূমির মধ্যে পাথুরে পাহাড়। আশপাশে ছোট ছোট ঝোপঝাড়। সেখানে বসে রয়েছেন এক পর্যটক। পাশে ভারবাহী গাধার দিকে চোখ পড়লেই দেখা যাবে, সেখানে দাঁড়িয়ে এক বেদুইন নারী। নাম তার উম্ম ইয়াসির। স্থানীয় এই উদ্ভিদগুলো কীভাবে চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয় তা বাতলে দিচ্ছেন তিনি। বিদেশি পর্যটকদের একটা দলের গাইড হিসেবে কাজ করছিলেন ইয়াসির।
এমন ঘটনা সত্যিই দেখা যায় না, চিন্তাই করা যায় না। মিশরের সিনাই উপদ্বীপের বেদুনন নারীরা কঠোরভাবে রক্ষণশীল। তারা কখনোই ঘরের বাইরে কাজ করেন না। আগন্তুকের সাথে তাদের কথা বলা বা দেখা হওয়া রীতিমতো বিরল ঘটনা। কাজেই সেখানে উম্ম ইয়াসিরের বিদেশি পর্যটক দলের গাইড হওয়া বিস্ময়কর ঘটনা তো বটেই।
তবে এ বিষয়ে ৪৭ বছর বয়সী উম্মর বক্তব্য পরিষ্কার। বলেন, এটা (তার গাইড হওয়ার কাজ) আমাদের সংস্কৃতিবিরোধী কাজ। কিন্তু আয়ের জন্যে নারীদের কাজ দরকার। অন্যরা আমাকে বিদ্রুপ করে। কিন্তু এতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি শক্ত মনের নারী।
এরা আসলে সিনাই ট্রেইলের অংশ। এটা অনন্য এক প্রজেক্ট যার মাধ্যমে স্থানীয় বেদুননরা একযোগে তাদের নিজস্ব পর্যটনব্যবস্থা গড়ে তুলছে।
সিনাই পেনিনসুলার পাহাড়ি অঞ্চলের প্রায় ৩৩০ মাইলের আভিযানিক পথ ধরে ২০১৫ সালে গড়ে উঠেছে এই প্রজেক্ট। পুরোটা পাড়ি দিতে ৪২ দিন সময় লাগবে। এ পথে গেলে বসবাসরত ৮টি গোত্রের এলাকা ঘোরা হয়ে যাবে। স্ব স্ব গোত্রের লোকেরা থেকে নিজ এলাকার গাইড হিসেবে কাজ করবে। এ প্রজেক্টের মাধ্যমে গোত্রগুলোর আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। এদের অনেকের অভিযোগ ছিল, সিনাইয়ের দক্ষিণাংশের মূল পর্যটন উন্নয়ন থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে।
এ প্রজেক্টের সব গাইডরাই পুরুষ ছিলেন। কিন্তু সিনাই ট্রেইলের সহ প্রতিষ্ঠাতা একজন ব্রিটিশ, বেন হফলার। তার কাছে মনে হলো, এ প্রজেক্টে নারীদেরও আনতে হবে। কিন্তু তার কয়েক বছর প্রচেষ্টার পরও সব গোত্রে নারীদের এ কাজে যুক্ত করতে নারাজ। যদিও বা রাজি হয় তো অনেক শর্ত রয়েছে। যেমন-পর্যটক নারী হতে হবে, সারারাতের ভ্রমণ হবে না ইত্যাদি। পর্যটকদেরও পরামর্শ দিয়ে দেন প্রজেক্ট আয়োজকরা। বলে দেন যে, নারী গাইডের ছবি কেবলমাত্র মুখ ঢাকা অবস্থায় তোলা যাবে।
গাইড হিসেবে উম্ম ইয়াসির প্রথম যোগ দিয়েছেন। বলেন, সেই ছোটবেলা থেকেই তিনি এসব পাহাড়ে চড়তেন। কাজেই পাহাড়ি অঞ্চলটা তার পুরোপুরি জানা। তিনি নিজের পরিবারকে কাজটি করতে রাজি করিয়েছেন।
সূত্র: এশিয়ান এজ