ঢাকা ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুখবর : বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে উঠছে আরেক বাংলাদেশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০৫:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯
  • ৩১৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সিংহভাগ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঠিক তখনই বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা ছোট ছোট ভূমিকে ঘিরে অভাবনীয় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছ। এ যেন আরেক বাংলাদেশ!

বঙ্গোপসাগর ও উপকূলবর্তী বিভিন্ন নদীতে এখন বছরে গড়ে প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটারের বেশি নতুন ভূমি জেগে উঠছে। তথ্যমতে, প্রতি বছর যে পরিমাণ ভূমি নদীভাঙন ও ভূমিধসের কারণে বিলীন হয়, প্রতি বছর জেগে ওঠা ভূখণ্ড তার চেয়ে বেশি!

গত চার দশকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি যুক্ত হয়েছে। চরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ব্যাপক। এক একটি চর হয়ে উঠতে পারে এক একটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্র! এ ছাড়া নতুন ভূমিতে কৃষিকাজ ও মাছ চাষের সম্ভাবনাকেও কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রতিটি চর ও দ্বীপকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিকাশের কথা বিবেচনা করতে হবে।

সম্প্রতি দৈনিক বাংলাদেশের খবর এর একটি বিশেষ প্রতিবেদনে সাধন সরকার এসব তথ্য তুলে ধরেন। ২০১৩ সালে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বিভিন্ন উপকূলীয় অংশে প্রায় ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি জেগে উঠেছে।

নতুন এসব ভূমি জেগে ওঠার ফলে মূল ভূখণ্ডের পরিমাণই বাড়বে না, তৈরি হয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনার হাতছানি। এখন শুধু দরকার পরিকল্পনা ও কার্যকর উদ্যোগ।

150px-Hakaluki_Hawor_Sylhet_Bangladesh_46

গবেষকদের মতে, নতুন ভূমি বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের ১০ ভাগের ১ ভাগেরও বেশি। গত কয়েক দশকে উপকূলের জেলাগুলোতে (চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, ফেনী, ভোলাসহ অন্যান্য উপকূলীয় জেলা) আনুমানিক ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। অনেক আগেই নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠে নিঝুম দ্বীপ, স্বর্ণ দ্বীপ, ভাসানচরসহ আরো অনেক দ্বীপ।

মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় যে পরিমাণ ভূমি বিলীন হচ্ছে, তার বিপরীতে এর চারদিকে কয়েকগুণ ভূমি জেগে উঠছে।

নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় প্রতি বছর প্রায় ৭০ হাজার নতুন ভূমি জেগে উঠছে। হাতিয়ায় জেগে ওঠা স্বর্ণদ্বীপের আয়তন একটি উপজেলার আয়তনের সমান! স্বর্ণদ্বীপের প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ভাসানচর। ভাসানচরের আয়তন প্রায় ২৫০ বর্গকিলোমিটার। ভাসানচরের দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে প্রায় ১০০ কিলোমিটার বিশাল আয়তনের গাঙ্গুরিয়া চরের অবস্থান। এ ছাড়া হাতিয়ার দক্ষিণে আরো বেশ কয়েকটি চর জেগে উঠেছে।

এগুলো হলো- পশ্চিমে ঢাল চর, চর মোহাম্মদ আলী, সাহেব আলীর চর, চর ইউনুস, চর আউয়াল, মৌলভীর চর, তমরদ্দির চর, উত্তরে নলের চর, জাগলার চর, কেয়ারিং চর, জাহাইজ্জার চর ইত্যাদি। এ ছাড়া ৩০-৪০টির বেশি ডুবোচর (ভাটার সময় জেগে ওঠে, জোয়ারের সময় ডুবে যায়) রয়েছে, যেগুলো জেগে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে।

হাতিয়ার কোনো কোনো চরে জনবসতি গড়ে উঠেছে। শুরু হয়েছে চাষাবাদ। সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীর আশপাশেও ছোট ছোট চর জেগে উঠেছে। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের ১৫০ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপকে ঘিরে চারপাশে নতুন ভূমি গড়ে উঠেছে এর দ্বিগুণ। এ ছাড়া মেঘনা নদীর পাড় ঘিরে বিভিন্ন সময় সৃষ্টি হওয়া আরো ৬০টির বেশি চর জেগে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সে হিসাবে সব মিলিয়ে আগামী দুই দশকে বর্তমান বাংলাদেশের অর্ধেক পরিমাণ নতুন ভূমি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে!

বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন ভূমিকে পরিকল্পিত ও পরিবেশসম্মতভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সদ্য প্রণীত ‘শতবর্ষব্যাপী বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ এর মাধ্যমে জেগে ওঠা চরগুলো অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

যদিও জেগে ওঠা নতুন ভূমিকে কেন্দ্র করে সরকার ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা করেছে। নতুন ভূমিতে ব্যাপকভিত্তিকি বনায়ন সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। জেগে ওঠা এসব নতুন চরে বসতিহীন প্রান্তিক মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই দেওয়ার পরিকল্পনা করা যেতে পারে।

জেগে ওঠা চরগুলোকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ক্রসড্যাম বা আড়াআড়ি বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সুখবর : বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে উঠছে আরেক বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ০৩:০৫:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সিংহভাগ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঠিক তখনই বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা ছোট ছোট ভূমিকে ঘিরে অভাবনীয় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছ। এ যেন আরেক বাংলাদেশ!

বঙ্গোপসাগর ও উপকূলবর্তী বিভিন্ন নদীতে এখন বছরে গড়ে প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটারের বেশি নতুন ভূমি জেগে উঠছে। তথ্যমতে, প্রতি বছর যে পরিমাণ ভূমি নদীভাঙন ও ভূমিধসের কারণে বিলীন হয়, প্রতি বছর জেগে ওঠা ভূখণ্ড তার চেয়ে বেশি!

গত চার দশকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি যুক্ত হয়েছে। চরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ব্যাপক। এক একটি চর হয়ে উঠতে পারে এক একটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্র! এ ছাড়া নতুন ভূমিতে কৃষিকাজ ও মাছ চাষের সম্ভাবনাকেও কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রতিটি চর ও দ্বীপকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিকাশের কথা বিবেচনা করতে হবে।

সম্প্রতি দৈনিক বাংলাদেশের খবর এর একটি বিশেষ প্রতিবেদনে সাধন সরকার এসব তথ্য তুলে ধরেন। ২০১৩ সালে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বিভিন্ন উপকূলীয় অংশে প্রায় ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি জেগে উঠেছে।

নতুন এসব ভূমি জেগে ওঠার ফলে মূল ভূখণ্ডের পরিমাণই বাড়বে না, তৈরি হয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনার হাতছানি। এখন শুধু দরকার পরিকল্পনা ও কার্যকর উদ্যোগ।

150px-Hakaluki_Hawor_Sylhet_Bangladesh_46

গবেষকদের মতে, নতুন ভূমি বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের ১০ ভাগের ১ ভাগেরও বেশি। গত কয়েক দশকে উপকূলের জেলাগুলোতে (চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, ফেনী, ভোলাসহ অন্যান্য উপকূলীয় জেলা) আনুমানিক ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। অনেক আগেই নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠে নিঝুম দ্বীপ, স্বর্ণ দ্বীপ, ভাসানচরসহ আরো অনেক দ্বীপ।

মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় যে পরিমাণ ভূমি বিলীন হচ্ছে, তার বিপরীতে এর চারদিকে কয়েকগুণ ভূমি জেগে উঠছে।

নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় প্রতি বছর প্রায় ৭০ হাজার নতুন ভূমি জেগে উঠছে। হাতিয়ায় জেগে ওঠা স্বর্ণদ্বীপের আয়তন একটি উপজেলার আয়তনের সমান! স্বর্ণদ্বীপের প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ভাসানচর। ভাসানচরের আয়তন প্রায় ২৫০ বর্গকিলোমিটার। ভাসানচরের দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে প্রায় ১০০ কিলোমিটার বিশাল আয়তনের গাঙ্গুরিয়া চরের অবস্থান। এ ছাড়া হাতিয়ার দক্ষিণে আরো বেশ কয়েকটি চর জেগে উঠেছে।

এগুলো হলো- পশ্চিমে ঢাল চর, চর মোহাম্মদ আলী, সাহেব আলীর চর, চর ইউনুস, চর আউয়াল, মৌলভীর চর, তমরদ্দির চর, উত্তরে নলের চর, জাগলার চর, কেয়ারিং চর, জাহাইজ্জার চর ইত্যাদি। এ ছাড়া ৩০-৪০টির বেশি ডুবোচর (ভাটার সময় জেগে ওঠে, জোয়ারের সময় ডুবে যায়) রয়েছে, যেগুলো জেগে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে।

হাতিয়ার কোনো কোনো চরে জনবসতি গড়ে উঠেছে। শুরু হয়েছে চাষাবাদ। সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীর আশপাশেও ছোট ছোট চর জেগে উঠেছে। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের ১৫০ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপকে ঘিরে চারপাশে নতুন ভূমি গড়ে উঠেছে এর দ্বিগুণ। এ ছাড়া মেঘনা নদীর পাড় ঘিরে বিভিন্ন সময় সৃষ্টি হওয়া আরো ৬০টির বেশি চর জেগে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সে হিসাবে সব মিলিয়ে আগামী দুই দশকে বর্তমান বাংলাদেশের অর্ধেক পরিমাণ নতুন ভূমি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে!

বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন ভূমিকে পরিকল্পিত ও পরিবেশসম্মতভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সদ্য প্রণীত ‘শতবর্ষব্যাপী বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ এর মাধ্যমে জেগে ওঠা চরগুলো অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

যদিও জেগে ওঠা নতুন ভূমিকে কেন্দ্র করে সরকার ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা করেছে। নতুন ভূমিতে ব্যাপকভিত্তিকি বনায়ন সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। জেগে ওঠা এসব নতুন চরে বসতিহীন প্রান্তিক মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই দেওয়ার পরিকল্পনা করা যেতে পারে।

জেগে ওঠা চরগুলোকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ক্রসড্যাম বা আড়াআড়ি বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করতে হবে।