ঢাকা ০৭:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলাম পুরুষকে কেন একাধিক বিয়ের সমর্থণ? (পর্ব-১)

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৫০:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০১৯
  • ২৪৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের ধর্ম ইসলামে দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি আছে, আছে নিষেধও। একজন পুরুষ দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারবে, তবে ইসলাম দ্বিতীয় বিবাহের ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা তৈরি করেছে। সেই নীতিমালার আলোকে একজন স্বামী দ্বিতীয় তৃতীয় ও চতুর্থ বিবাহ করতে পারবে। ইসলাম তাতে আপত্তি করবে না, বাধাও দিবে না। যদিও আমাদের এই সমাজ তাতে ঘোর আপত্তি জানায়।

এই প্রভাবটা আমাদের মাঝে ছড়িয়েছে বৃটিশরা ও বৃটিশদের শিক্ষায় শিক্ষিত কিছু মানুষেরা। এদের অনেকে দ্বিতীয় বিবাহের আপত্তি জানালেও পরক্রিয়ার অনুমোদন চায়। কিছু কিছু দেশ আছে যেখানে পরক্রিয়া অপরাধ নয়। যেমন ভারত চীন কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রে এখন পরক্রিয়া বৈধ।

ইসলাম দ্বিতীয় বিবাহকে যেমন বৈধ করেছে তেমনি ক্ষেত্র বিশেষ নিষেধও করেছে। তবে এখানে একটি কথা বলে রাখা দরকার যে, অনেকে বলে ইসলাম বহুবিবাহের অনুমোদন দিয়েছে। কথাটি সত্য ও সঠিক নয়। ইসলামে বহু বিবাহকে নিষেধ করেছে। বিবাহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সীমা বেধে দিয়েছে। আর তা হলো চারটি। যেমনটি আল্লাহ ঘোষণা করছেন-

مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلَّا تَعُولُوا 

তরজমা : ‘(হে পুরুষরা তোমরা) বিবাহ কর নারীদের মধ্য হতে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই- দুইজন তিন-তিনজন অথবা চার-চারজনকে। অবশ্য যদি আশঙ্কা বোধ করে যে, তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে সুবিচার করতে পাারবে না, তবে এক স্ত্রী অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীতে (ক্ষান্ত থাক) এতে তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি (সূরাতুন নিসা : আয়াত ০৩)।

ইসলামের আগে বিবাহের নির্দিষ্ট সীমা ছিল না। আগেকার যুগে পৃথিবীর সকল ধর্মে মতাদর্শে বহুবিবাহের প্রচলন ছিল। আরবভূমি, ভারতবর্ষ, মিশর, গ্রীস, ইরান, ব্যবিলন ও অস্ট্রিয়া কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিটি সম্প্রদায়ে বহু বিবাহের প্রথা চালু ছিল। এর স্বাভাবিক প্রয়োজনীয়তা আজো কেউ অস্বীকার করতে পারছে না। সাম্প্রতিককালে ইউরোপ তাদের পূর্বসূরিদের বিপরীতে বহু বিবাহকে অবৈধ বানাবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।

অবশেষ প্রকৃতির বিধানই বিজয়ী হয়েছে। আর এখন এর প্রসার ঘটানোর চেষ্টা চলছে। প্রখ্যাত খৃস্টান দার্শনিক ডিভিন পোর্ট বহু বিবাহের সমর্থনে ইঞ্জিলের বেশ কিছু অংশ উদ্ধৃত করে লিখেছেন। ইঞ্জিলের এসব আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, একাধিক বিবাহ কেবল পছন্দনীয়-ই নয়, আল্লাহ পাক এতে বিশেষ বরকতও নিহিত রেখেছেন (জন ডেবিন পোর্ট রচিত ‘লাইফ’ পৃষ্ঠা ১৫৮)।

আরো আগের ইতিহাস যদি দেখেন- রোম সাম্রাজ্য বা গ্রীক সাম্রাজ্য সর্বস্থানেই ছিল বহুবিবাহের প্রচলন; শুধু প্রচলন নয়, রীতিমত এটাতে গর্ব ও গৌরবের কাজ মনে করা হতো। বর্তমান বাইবেল থেকে জানা যায় যে, হজরত সুলাইমান (আ.) এর সাতশত স্ত্রী ও তিনশত হেরেম ছিল, হজরত দাউদ (আ.) এর নিরানব্বই জন্য স্ত্রী ছিল, হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর তিনজন স্ত্রী ছিল, হজরত ইয়াকুব ও মুসা (আ.) এর চারজন করে স্ত্রী ছিল। খৃস্টান পাদ্রীগণ তো বরাবরই বহু বিবাহের অভ্যস্থ ছিলেন। ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত জার্মানিতে রীতিমত বহুবিবাহের প্রচলন ছিল। কনস্টান্টিপোলের রাজা এবং তার সঙ্গী-সাথীদের একাধিক স্ত্রী ছিল। মোদ্দাকথা ইসলামের আগে বহুবিবাহের প্রচলন ব্যাপকভাবেই ছিল। ইসলাম এসে বহুবিবাহকে একটি নির্দিষ্ট  গণ্ডিতে আঁটকে দিয়েছে।

দ্বিতীয় বিবাহের ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি বা শর্ত: 
আগেই জেনেছি যে, ইসলাম দ্বিতীয় বিবাহের জন্য কিছু শর্ত আরোপ করেছে। শর্তগুলোর উপস্থিতিতেই দ্বিতীয় বিবাহ বৈধ অন্যথায় বৈধ নয়। শর্তগুলো সবিস্তারিত বিরবণ ফিকহের কিতাবগুলোতে পাওয়া যায়। আমরা এখানে একটি আয়াত উল্লেখ করছি-

مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلَّا تَعُولُوا 

তরজমা : ‘(হে পুরুষরা তোমরা) বিবাহ কর নারীদের মধ্য হতে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই-দুইজন তিন-তিনজন অথবা চার-চারজনকে। অবশ্য যদি আশঙ্কা বোধ করে যে, তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে সুবিচার করতে পাারবে না, তবে এক স্ত্রী অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীতে (ক্ষান্ত থাক) এতে তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি।’ (সূরাতুন নিসা : আয়াত ন-০৩)।

আয়াতের শেষাংশ থেকে আমাদের বুঝে নিতে দ্বিতীয় বিবাহের ক্ষেত্রে সতর্কতার বিষয় কী কী? আল্লাহ বলেন যদি তোমরা আশঙ্কা করো একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে সুবিচার করতে পারবে না, তবে একাধিক বিবাহের অনুমোদন নেই। এখানেই ইসলাম একটি শুভবুদ্ধির ওপর মতামতকে ন্যস্ত করেছে। একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে নিজের বিবেককে আদালত বানিয়ে দিয়েছে। বিবেকের সেই আদালত যদি রায় দেয় সুবিচার নিশ্চিত হবে, তখনই দ্বিতীয় বিবাহ অন্যথায় নয়। সুবিচারের ক্ষেত্র কী?

সুবিচারের ক্ষেত্র হলো সকল স্ত্রীকে একচোখে দেখা একই পরিমাণ ভালোবাসা। (যদিও ভালোবাসার ক্ষেত্রে এমনটি সম্ভব নয়)। কেননা ভালোবাসা একটি আপেক্ষিক বিষয় কখন মন কার প্রতি ঝুঁকে যায় বলা যায় না। আল্লাহ নিজেই সেই কথা বলেন-

وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا

তরজমা : ‘তোমরা চাইলেও স্ত্রীদের মধ্যে সমান আচরণ করতে সক্ষম হবে না। তবে (কোনো একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না, যার ফলে অন্যজনকে মাঝখানে ঝুলন্ত বস্তুর মতো ফেলে রাখবে। তোমারা যদি সংশোধন করো ও তাকওয়া অবলম্বন করে চল, তবে ( জেনে রেখ), আল্লাহ অতিক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরাতুন নিসা : আয়াত- ১২৯)।

যারা দ্বিতীয় বিবাহে আগ্রহ প্রকাশ করে; তাদের ভালো করে এই আয়াত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এই বিষয়ে হুজুর (সা.) কী বলেন শুনুন-

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ يَمِيلُ لإِحْدَاهُمَا عَلَى الأُخْرَى جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَجُرُّ أَحَدَ شِقَّيْهِ سَاقِطاً أَوْ مَائِلاً

তরজমা : হজরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যার দুইজন স্ত্রী আছে; সে একজনকে অন্যজনের ওপর প্রাধান্য (একজনকে বেশি ভালোবাসে) ওই ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধদেহ ধসা (ভাঙ্গা) অবস্থায় উপস্থিত হবে। (মুসনাদে আহমদ : হাদিস- ৮১৫৬)। এখন যারা নিয়ত করেছে দ্বিতীয় বিবাহ করবে সে যেন উপরোল্লিখিত আয়াত ও হাদিসের সর্তকতা অবলম্বন করেই দ্বিতীয় বিবাহের দিকে পা বাড়ায়।

সকলের জন্য একই পরিমাণ ভরণ পোষণ প্রদান করা। একজনকে খুব দামি কাপড় খানা বাসস্থান অন্যস্ত্রীকে নরমাল কাপড় খানা বাসস্থান দেয়া হলো তাহলেও উপরোক্ত হাদিসের আলোকে সে অপরাধী হবে।

সকলের সঙ্গে সমান পরিমাণ রাত্রি যাপন করা। (সামান্য ভিন্ন হলে একাধিক বিবাহ বৈধ হবে না)।

সকল স্ত্রীর সন্তানদেরকে একই পরিমাণ আদর যত্ন করতে হবে। কোনো এক স্ত্রীর সন্তানকে বেশি আদর যত্ন করলে সেও উল্লিখিত হাদিসের আলোকে অপরাধী হবে।

কোরআন হাদিসের এসব আলোচনা দ্বারা একথাও বুঝা যায় যে, ইসলামও চায় বিবাহ একটিই হোক। কিন্তু সমস্যা বিবেচনা করে শর্তের ভিত্তিতে দ্বিতীয় বিবাহকে বৈধতা দিয়েছে। পাশ্চাত্যের বিখ্যাত দার্শনিক লিটনার তার ‘মহামেদানিসম’ বই- এ লিখেছেন, অপমিরিত বহু বিবাহ প্রথাকে মুহাম্মাদ (সা.) রুখে দিয়ে ছিলেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ইসলাম পুরুষকে কেন একাধিক বিয়ের সমর্থণ? (পর্ব-১)

আপডেট টাইম : ০৩:৫০:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের ধর্ম ইসলামে দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি আছে, আছে নিষেধও। একজন পুরুষ দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারবে, তবে ইসলাম দ্বিতীয় বিবাহের ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা তৈরি করেছে। সেই নীতিমালার আলোকে একজন স্বামী দ্বিতীয় তৃতীয় ও চতুর্থ বিবাহ করতে পারবে। ইসলাম তাতে আপত্তি করবে না, বাধাও দিবে না। যদিও আমাদের এই সমাজ তাতে ঘোর আপত্তি জানায়।

এই প্রভাবটা আমাদের মাঝে ছড়িয়েছে বৃটিশরা ও বৃটিশদের শিক্ষায় শিক্ষিত কিছু মানুষেরা। এদের অনেকে দ্বিতীয় বিবাহের আপত্তি জানালেও পরক্রিয়ার অনুমোদন চায়। কিছু কিছু দেশ আছে যেখানে পরক্রিয়া অপরাধ নয়। যেমন ভারত চীন কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রে এখন পরক্রিয়া বৈধ।

ইসলাম দ্বিতীয় বিবাহকে যেমন বৈধ করেছে তেমনি ক্ষেত্র বিশেষ নিষেধও করেছে। তবে এখানে একটি কথা বলে রাখা দরকার যে, অনেকে বলে ইসলাম বহুবিবাহের অনুমোদন দিয়েছে। কথাটি সত্য ও সঠিক নয়। ইসলামে বহু বিবাহকে নিষেধ করেছে। বিবাহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সীমা বেধে দিয়েছে। আর তা হলো চারটি। যেমনটি আল্লাহ ঘোষণা করছেন-

مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلَّا تَعُولُوا 

তরজমা : ‘(হে পুরুষরা তোমরা) বিবাহ কর নারীদের মধ্য হতে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই- দুইজন তিন-তিনজন অথবা চার-চারজনকে। অবশ্য যদি আশঙ্কা বোধ করে যে, তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে সুবিচার করতে পাারবে না, তবে এক স্ত্রী অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীতে (ক্ষান্ত থাক) এতে তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি (সূরাতুন নিসা : আয়াত ০৩)।

ইসলামের আগে বিবাহের নির্দিষ্ট সীমা ছিল না। আগেকার যুগে পৃথিবীর সকল ধর্মে মতাদর্শে বহুবিবাহের প্রচলন ছিল। আরবভূমি, ভারতবর্ষ, মিশর, গ্রীস, ইরান, ব্যবিলন ও অস্ট্রিয়া কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিটি সম্প্রদায়ে বহু বিবাহের প্রথা চালু ছিল। এর স্বাভাবিক প্রয়োজনীয়তা আজো কেউ অস্বীকার করতে পারছে না। সাম্প্রতিককালে ইউরোপ তাদের পূর্বসূরিদের বিপরীতে বহু বিবাহকে অবৈধ বানাবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।

অবশেষ প্রকৃতির বিধানই বিজয়ী হয়েছে। আর এখন এর প্রসার ঘটানোর চেষ্টা চলছে। প্রখ্যাত খৃস্টান দার্শনিক ডিভিন পোর্ট বহু বিবাহের সমর্থনে ইঞ্জিলের বেশ কিছু অংশ উদ্ধৃত করে লিখেছেন। ইঞ্জিলের এসব আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, একাধিক বিবাহ কেবল পছন্দনীয়-ই নয়, আল্লাহ পাক এতে বিশেষ বরকতও নিহিত রেখেছেন (জন ডেবিন পোর্ট রচিত ‘লাইফ’ পৃষ্ঠা ১৫৮)।

আরো আগের ইতিহাস যদি দেখেন- রোম সাম্রাজ্য বা গ্রীক সাম্রাজ্য সর্বস্থানেই ছিল বহুবিবাহের প্রচলন; শুধু প্রচলন নয়, রীতিমত এটাতে গর্ব ও গৌরবের কাজ মনে করা হতো। বর্তমান বাইবেল থেকে জানা যায় যে, হজরত সুলাইমান (আ.) এর সাতশত স্ত্রী ও তিনশত হেরেম ছিল, হজরত দাউদ (আ.) এর নিরানব্বই জন্য স্ত্রী ছিল, হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর তিনজন স্ত্রী ছিল, হজরত ইয়াকুব ও মুসা (আ.) এর চারজন করে স্ত্রী ছিল। খৃস্টান পাদ্রীগণ তো বরাবরই বহু বিবাহের অভ্যস্থ ছিলেন। ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত জার্মানিতে রীতিমত বহুবিবাহের প্রচলন ছিল। কনস্টান্টিপোলের রাজা এবং তার সঙ্গী-সাথীদের একাধিক স্ত্রী ছিল। মোদ্দাকথা ইসলামের আগে বহুবিবাহের প্রচলন ব্যাপকভাবেই ছিল। ইসলাম এসে বহুবিবাহকে একটি নির্দিষ্ট  গণ্ডিতে আঁটকে দিয়েছে।

দ্বিতীয় বিবাহের ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি বা শর্ত: 
আগেই জেনেছি যে, ইসলাম দ্বিতীয় বিবাহের জন্য কিছু শর্ত আরোপ করেছে। শর্তগুলোর উপস্থিতিতেই দ্বিতীয় বিবাহ বৈধ অন্যথায় বৈধ নয়। শর্তগুলো সবিস্তারিত বিরবণ ফিকহের কিতাবগুলোতে পাওয়া যায়। আমরা এখানে একটি আয়াত উল্লেখ করছি-

مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلَّا تَعُولُوا 

তরজমা : ‘(হে পুরুষরা তোমরা) বিবাহ কর নারীদের মধ্য হতে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই-দুইজন তিন-তিনজন অথবা চার-চারজনকে। অবশ্য যদি আশঙ্কা বোধ করে যে, তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে সুবিচার করতে পাারবে না, তবে এক স্ত্রী অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীতে (ক্ষান্ত থাক) এতে তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি।’ (সূরাতুন নিসা : আয়াত ন-০৩)।

আয়াতের শেষাংশ থেকে আমাদের বুঝে নিতে দ্বিতীয় বিবাহের ক্ষেত্রে সতর্কতার বিষয় কী কী? আল্লাহ বলেন যদি তোমরা আশঙ্কা করো একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে সুবিচার করতে পারবে না, তবে একাধিক বিবাহের অনুমোদন নেই। এখানেই ইসলাম একটি শুভবুদ্ধির ওপর মতামতকে ন্যস্ত করেছে। একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে নিজের বিবেককে আদালত বানিয়ে দিয়েছে। বিবেকের সেই আদালত যদি রায় দেয় সুবিচার নিশ্চিত হবে, তখনই দ্বিতীয় বিবাহ অন্যথায় নয়। সুবিচারের ক্ষেত্র কী?

সুবিচারের ক্ষেত্র হলো সকল স্ত্রীকে একচোখে দেখা একই পরিমাণ ভালোবাসা। (যদিও ভালোবাসার ক্ষেত্রে এমনটি সম্ভব নয়)। কেননা ভালোবাসা একটি আপেক্ষিক বিষয় কখন মন কার প্রতি ঝুঁকে যায় বলা যায় না। আল্লাহ নিজেই সেই কথা বলেন-

وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا

তরজমা : ‘তোমরা চাইলেও স্ত্রীদের মধ্যে সমান আচরণ করতে সক্ষম হবে না। তবে (কোনো একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না, যার ফলে অন্যজনকে মাঝখানে ঝুলন্ত বস্তুর মতো ফেলে রাখবে। তোমারা যদি সংশোধন করো ও তাকওয়া অবলম্বন করে চল, তবে ( জেনে রেখ), আল্লাহ অতিক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরাতুন নিসা : আয়াত- ১২৯)।

যারা দ্বিতীয় বিবাহে আগ্রহ প্রকাশ করে; তাদের ভালো করে এই আয়াত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এই বিষয়ে হুজুর (সা.) কী বলেন শুনুন-

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ يَمِيلُ لإِحْدَاهُمَا عَلَى الأُخْرَى جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَجُرُّ أَحَدَ شِقَّيْهِ سَاقِطاً أَوْ مَائِلاً

তরজমা : হজরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যার দুইজন স্ত্রী আছে; সে একজনকে অন্যজনের ওপর প্রাধান্য (একজনকে বেশি ভালোবাসে) ওই ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধদেহ ধসা (ভাঙ্গা) অবস্থায় উপস্থিত হবে। (মুসনাদে আহমদ : হাদিস- ৮১৫৬)। এখন যারা নিয়ত করেছে দ্বিতীয় বিবাহ করবে সে যেন উপরোল্লিখিত আয়াত ও হাদিসের সর্তকতা অবলম্বন করেই দ্বিতীয় বিবাহের দিকে পা বাড়ায়।

সকলের জন্য একই পরিমাণ ভরণ পোষণ প্রদান করা। একজনকে খুব দামি কাপড় খানা বাসস্থান অন্যস্ত্রীকে নরমাল কাপড় খানা বাসস্থান দেয়া হলো তাহলেও উপরোক্ত হাদিসের আলোকে সে অপরাধী হবে।

সকলের সঙ্গে সমান পরিমাণ রাত্রি যাপন করা। (সামান্য ভিন্ন হলে একাধিক বিবাহ বৈধ হবে না)।

সকল স্ত্রীর সন্তানদেরকে একই পরিমাণ আদর যত্ন করতে হবে। কোনো এক স্ত্রীর সন্তানকে বেশি আদর যত্ন করলে সেও উল্লিখিত হাদিসের আলোকে অপরাধী হবে।

কোরআন হাদিসের এসব আলোচনা দ্বারা একথাও বুঝা যায় যে, ইসলামও চায় বিবাহ একটিই হোক। কিন্তু সমস্যা বিবেচনা করে শর্তের ভিত্তিতে দ্বিতীয় বিবাহকে বৈধতা দিয়েছে। পাশ্চাত্যের বিখ্যাত দার্শনিক লিটনার তার ‘মহামেদানিসম’ বই- এ লিখেছেন, অপমিরিত বহু বিবাহ প্রথাকে মুহাম্মাদ (সা.) রুখে দিয়ে ছিলেন।