হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রচুর কাজের চাপের মাঝে হয়তো সবারই মনে হয়ে থাকে, এই কাজ-ই একদিন মৃত্যু ডেকে আনবে। অসহনীয় কাজের চাপ কেউ সহ্য করতে পারেনা। যদি আপনার চাকরি হয় বসে কাজ করার তবে আপনি ঠিক ভাবছেন। অনেকদিনের গবেষণায় জানা গেছে যে, দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। জার্নাল অব অ্যাপিডেমিওলজি অ্যান্ড কমিউনিটি হেলথ নামের আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, যুক্তরাজ্যে দিনে ছয় ঘণ্টার অধিক সময় ধরে বসে কাজ করা লোকেদের মধ্যে প্রতি ৯ জনে ১ জনের মৃত্যু সম্ভাবনা প্রকট। যার সঙ্গে, ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস সম্পর্কিত। অন্যভাবে বলা যায়, যুক্তরাজ্যে বছরে ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হলো বসে কাজ করা। আর এজন্যে ঐ দেশের স্বাস্থ্য সংস্থাকে বছরে গুণতে হচ্ছে ৭০০ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি পরিমাণ অর্থ। এখনো পর্যন্ত জানা তথ্য গুলো খুবই ভয়াবহ। কিন্তু, অফিসে নয়টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত বসে থেকে জীবন শঙ্কা কিভাবে এড়ানো যেতে পারে?
প্রথমত, দাঁড়িয়েও কাজ করা যায় এমন ব্যবস্থা করার চেষ্টা করুন। যদিও স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কিত জনিপ্রিয় বইয়ের লেখক রোজার ফ্রাম্পটন বলেন যে, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করারও অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তিনি আরো বলেন যে, মানব দেহে আট শতাধিক পেশি এবং ৩০০ এর মত সংযুক্তি রয়েছে। মানুষের উচিত নিয়মিত চলাচল করা, যাতে এই পেশিগুলো সচল থাকে। তিনি তার গ্রাহকদের বলতেন কাজের সময়ে ক্ষণিক বিরতিতে হাত পা ছড়াতে। কিন্তু, প্রচণ্ড কাজের চাপে থাকা অবস্থায় এসব করার সময় হয়না। এজন্যে তিনি নতুন করে সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছেন, বাসায় ফিরে শরীর চর্চা করার।
অফিসের সময়টা বাদে চেয়ার ব্যবহার কমিয়ে দিন
যদি আপনি সারাদিন বসে কাজ করেন, তবে অবশ্যই বাসায় গিয়ে আর বসে কিছু করবেননা। সবথেকে ভালো পন্থা হচ্ছে মেঝেতে বসা। খেতে বসুন কিংবা টিভি দেখুন, যা-ই করুন না কেন, মেঝেতে বসে করার চেষ্টা করুন। একটি ফ্লোর ম্যাট কিনে ফেলুন। এতে, ম্যাটটি দেখামাত্র আপনার মনে পরবে মেঝেতে বসার কথা। আর আপনার খালি মেঝেতে বসার অস্বস্তিও কাটিয়ে উঠতে পারবেন। মেঝেতে বা সমতলে বসার সাথে সাথে আপনি একটি স্বাস্থ্যসম্মত অবস্থান নিয়ে ফেলেন। এতে আপনার শারীরিক উৎকর্ষ হয়। ফ্লোরে বসে শরীর চর্চা করার নানা পদ্ধতি রয়েছে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য তিনটি হল-পা ক্রস আকারে বসা, বাচ্চাদের মত করে বসা এবং পা সামনে নিয়ে বসা।
আপনি যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন, তবে আপনার পেশির নানা জায়গায় টান অনুভব করবেন। প্রথমত, আপনার শ্রোণীর পেশি সঙ্কুচিত হয়ে যায়। তাই রাতে ঘুমানোর আগে চার হাত-পায়ে বসে একটু ছড়িয়ে নিন। চেয়ারে বসে থেকে আমাদের পিছন পাশ বাঁকিয়ে যায় এবং কাঁধ সামনে চলে আসে। এর প্রতিকারে, নিয়মিত দু-হাত মাথার পেছনে নিয়ে অনুশীলন করুন। এছাড়াও, প্রতিনিয়ত আপনার পেছনের মাংসগুলো ম্যাসাজ করুন। মানব শরীরের টিস্যু গুলো বসার জন্যে তৈরি হয়নি। পেশিকে দুর্বল হতে দেয়া ব্যাক-পেইন এর অন্যতম কারণ।
এসব সহজ কিছু নিয়মাবলী প্রতিনিয়ত ঘরে বসে যদি চর্চা করে থাকেন তবে আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে। সারাদিন কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়া শরীর রোগ আক্রমণের জন্যে সব থেকে দুর্বল লক্ষ্য। নিয়মিত শরীর চর্চা এবং সঠিক নিয়ম মেনে চলে শরীর এবং মন দু’টোই ভালো থাকবে। পরবর্তী দিনে কাজেও আরো অনেক অনুপ্রেরণা যোগাবে।