খোকার বিচার প্রক্রিয়ার শুরুটাই আইনবহির্ভূত : বিএনপি

আমেরিকায় চিকিৎসাধীন অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের যে মামলায় ১৩ বছর সাজা দেয়া হয়েছে সেই মামলার নিম্ন আদালতের বিচার শুরুর প্রক্রিয়াকেই আইনবহির্ভূত বলছে বিএনপি।

আজ বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খোকার বিরুদ্ধে দেয়া রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় সাদেক হোসেন খোকাকে পলাতক দেখিয়ে বিচার করলেও আসলে তিনি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তার কিডনি’র ক্যান্সারের উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। তিনি এখনও সেখানে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। এ অবস্থায় উচ্চ আদালতের রায় বাতিল না করে নিম্ন আদালতে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরুটাই ছিল আইনবহির্ভূত। রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই আত্মসমর্পণের সুযোগ না দিয়ে তড়িঘড়ি করে তার বিরুদ্ধে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে।

দুদকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যেখানে দুর্নীতি দমন কমিশনে জমাপড়া ২৩ হাজার মামলা প্রভাবশালীরা ‘দায়মুক্তি’ নিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন, বেসিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যারা লুটপাট করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সমাজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, সেখানে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনের লম্বা হাত তাদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারেননি।

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, যে আদালত বীরমুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছেন ওই আদালতের ক্রম অনুয়ায়ী এক নম্বর মামলাটির কার্যক্রম শুরু না করে প্রায় প্রতিদিন তারিখ ফেলে তথাকথিত সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাকে ‘পলাতক’ দেখিয়ে একতরফাভাবে বিচারের নামে প্রহসন করে যে দ- দিয়েছেন তা আইন-বিচারের ইতিহাসে একটি বাজে নজির হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। উচ্চ আদালতের অনুমতি নিয়ে বিদেশে থাকায় পলাতক ঘোষণা বে-আইনি হয়েছে।

আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, সাদেক হোসেন খোকা আইনের চোখে কোনভাবেই পলাতক নন। কারণ তিনি উচ্চ আদালতের রায় নিয়েই চিকিৎসা নিতে বিদেশে গেছেন। আদালত তাকে যেতে যেমন অনুমোদন দিয়েছেন, দেশে ফিরতেও তাকে কোন বাধা না দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সুস্থ থাকলে অবশ্যই আইন মেনে বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতেন। যেখানে একজন মুক্তিযোদ্ধার চাকরি দুই বছর বৃদ্ধি করা হয়, সেখানে একজন অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ছয় মাসের সময় প্রার্থনা করেও নিম্ন আদালত থেকে তার মঞ্জুরি পাননি।

ড. রিপন বলেন, আদালতের গোটা বিচার প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শাস্তি বিধানের মধ্য দিয়ে সাদেক হোসেন খোকা রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কূটকৌশলের শিকার হয়েছেন। যে অবৈধ সম্পদের কথা আদালত বিবেচনায় নিয়েছেন খোকার আইনজীবীরা উপযুক্ত কাগজপত্র মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে তিনি তার যে সম্পদ ২০০৪ সালে মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছেন সেটিও তার সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গুলশানের যে বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে-তা তার পৈত্রিক সম্পত্তি বিশ্বরোডে মানিকনগরের সম্পত্তি সরকার একোয়ার করে নিলে তিনি ক্ষতিপূরণ হিসেবে গুলশানে ৫ কাঠা জমি ও ২৫ লাখ টাকা লাভ করেন। যে জমিতে তিনি এনসিসি ব্যাংক থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করেন-যা এখনও ব্যাংকে দায়বদ্ধ। অথচ এই সম্পত্তিকেও আদালত অবৈধভাবে অর্জনের কথা উল্লেখ করেছেন। সাদেক হোসেন খোকার গোপীবাগের বাড়ি মায়ের নামের সম্পত্তি এবং গ্রামের বাড়ির সম্পত্তি তার দাদার নামের সম্পত্তি। গোপীবাগের বাড়ি বা গ্রামের বাড়ির সম্পত্তি তার নিজ নামের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। অথচ আদালত তা আমলে নিয়েছেন ।

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজে তার বিনিয়োগ মাত্র ১.৮৭ পারসেন্ট শেয়ার অথচ আদালত তাকে ওই প্রতিষ্ঠানের ৭৫ ভাগ শেয়ারের মালিক গণ্য করে বিচারে আমলে এনেছেন এবং তা বাজেয়াপ্ত করেছেন। যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক। আদালতের গোটা বিচার প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য ছিল- সাদেক হোসেন খোকাকে হয়রানি করা, তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা এবং তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা। এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক গতিতে সম্পন্ন করেছে এবং তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করে একতরফা রায় দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ১/১১-র সময়ের এই মামলাটি অন্যান্য অনেক মামলার মতো স্থগিত থাকলেও সম্পূর্ণ হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং তার রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে তড়িঘড়ি শাস্তি দেয়া হলো। এটা ন্যায় বিচারের পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মুখপাত্র।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর