হাওর বার্তা ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক মানুষ মনে করেন, দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার আঁতাত ছিল। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের উদ্দেশে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন। জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ইপসোস এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক যৌথ জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
২০১৯ সালের ২২ মার্চ ট্রাম্পের রুশ সংযোগ বিষয়ক বিশেষ তদন্তকারী রবার্ট মুলার দেশটির আইনমন্ত্রীর কাছে তার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এতে বলা হয়, রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণা শিবিরের আঁতাতের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই এ যৌথ জরিপের উদ্যোগ নেয় ইপসোস এবং রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের রুশ সংযোগ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে মানুষের এ সংক্রান্ত চিন্তাভাবনাকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারেনি। যেটুকু পরিবর্তন এসেছে তা খুবই সামান্য।
নির্বাচনে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের আঁতাতের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাদের বিশ্বাস ট্রাম্প অথবা তার নির্বাচনি প্রচারণা শিবিরের কেউ এই আঁতাতের সঙ্গে যুক্ত ছিল। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করাই ছিল এর লক্ষ্য।
রবার্ট মুলারের তদন্ত প্রতিবেদনের পর অবশ্য রাশিয়ার সঙ্গে যোগসাজশের জন্য ট্রাম্পকে সন্দেহ করা মানুষের সংখ্যা কিছুটা হলেও কমেছে। এক সপ্তাহ আগে যেখানে ৫৪ শতাংশ মানুষই মনে করতেন রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের আঁতাত রয়েছে, এখন সেখানে এমনটা মনে করেন ৪৮ শতাংশ মানুষ।
৫৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন এ সংক্রান্ত তদন্ত বন্ধ করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। এক সপ্তাহ আগে এমনটা মনে করতেন ৫১ শতাংশ মানুষ।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের রুশ সংযোগ বিষয়ক বিশেষ তদন্তকারী রবার্ট মুলার দেশটির আইনমন্ত্রীর কাছে তার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর এর সারসংক্ষেপ মার্কিন কংগ্রেসের কাছে উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণা শিবিরের রাশিয়ার সঙ্গে কোনও আঁতাতের প্রমাণ পাননি এ সংক্রান্ত বিশেষ তদন্তকারী রবার্ট মুলার। তবে তদন্তে ট্রাম্প বাধা দিয়েছিলেন কি না, প্রতিবেদনে সে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি। এ ধরনের কোনও ঘটনায় ট্রাম্পকে দায়ী করা হয়নি কিংবা কোথাও তার দায়মুক্তির কথাও বলা হয়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনটির যে সারসংক্ষেপ কংগ্রেসের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে তা তৈরি করেছেন ট্রাম্পের আইনমন্ত্রী উইলিয়াম বার। পরে আরও বিস্তারিত জানানো হবে উল্লেখ করে উইলিয়াম বার বলেছেন, ‘বিশেষ তদন্তকারী যুক্তরাষ্ট্রের কোনও নাগরিক বা ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের সঙ্গে জড়িত কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বা রাশিয়াকে সহযোগিতা করার বিষয়ে কোনও প্রমাণ পায়নি।’ চিঠির দ্বিতীয় অংশে বার তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত করার বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, মুলার এ বিষয়ে ‘শেষ পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি। প্রেসিডেন্ট তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত করেছেন এটা প্রতিষ্ঠার জন্য’ যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ ছিল না।
চিঠির শেষ পর্যায়ে উইলিয়াম বার কংগ্রেসকে জানিয়েছেন, প্রতিবেদনের কোন কোন অংশ প্রকাশ করা যাবে, সে বিষয়ে আইনি সিদ্ধান্ত যত দ্রুত সম্পন্ন হবে, তত দ্রুত মুলারের প্রতিবেদনের বাকি তথ্য প্রকাশ করা হবে। প্রতিবেদনে থাকা সব তথ্য দ্রুত যাচাইয়ের জন্য তিনি বিশেষ তদন্তকারী রবার্ট মুলারের সহায়তা চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণা শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার কোনও সম্পর্ক থাকার বিষয়ে কোনও তথ্য না থাকা এবং তদন্তকাজ ব্যাহত করার জন্য তাকে দায়ী করে কিছু উল্লেখ না করায় ট্রাম্প এক টুইটার বার্তায় লিখেছেন, ‘কোনও আঁতাত হয়নি, কোনও বাধাও দেওয়া হয়নি।’ এতদিন ধরে রবার্ট মুলারের তদন্ত প্রতিবেদনটিকে ‘উইচহান্ট’ আখ্যা দিয়ে আসা ট্রাম্প রবিবার বলেছেন, ‘এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয় যে, দেশকে এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।’ ট্রাম্পের দৃষ্টিতে মুলারের তদন্ত কর্মকাণ্ড ‘অবৈধ তৎপরতা, যা ব্যর্থ হয়েছে।’
২০১৬ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়টি অনেকদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে। অভিযোগ রয়েছে, এই নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতাতে মস্কো প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছিল, যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পালন করেছিল বড় ভূমিকা। সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমিকে বরখাস্তের পর এ বিষয়ক তদন্তে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ উঠেছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে।