হাওর বার্তা ডেস্কঃ আত্মশুদ্ধি অর্থ হলো নিজের সংশোধন, নিজেকে খাঁটি ও পরিশুদ্ধ করা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় সর্বপ্রকার অনৈসলামিক কথা ও কাজ থেকে নিজ অন্তরকে মুক্ত ও নির্মল রাখাকে আত্মশুদ্ধি বলা হয়। আল্লাহ তায়ালার স্মরণ, আনুগত্য ও ইবাদত ব্যতীত অন্য সব কিছু থেকে অন্তরকে পবিত্র রাখাকেও আত্মশুদ্ধি বলা হয়। আত্মশুদ্ধির আরবি পরিভাষা হলো ‘তাজকিয়াতুন নাফস’। একে সংক্ষেপে তাজকিয়াও বলা হয়। স্বীয় আত্মাকে সবধরনের পাপ-পঙ্কিলতা ও অনৈতিক কর্মকা-থেকে মুক্ত রাখাই তাজকিয়ার উদ্দেশ্য। মানুষের জন্য আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। দেহ ও অন্তরের সমন্বয়ে মানুষ। দেহ বলা হয় হাত-পা, মাথা, বুক ইত্যাদি নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমষ্টি। আর অন্তর হলো আত্মা বা কলব। এ দুটির মধ্যে কলবের সংশোধন প্রয়োজন। আর কলবের সংশোধনই হলো আত্মশুদ্ধি। কলব যদি সৎ ও ভালো কাজের নির্দেশ দেয় তবে দেহ ভালো কাজ করে। একটি হাদিসে মহানবী (সা.) সুন্দরভাবে এ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘জেনে রেখো! শরীরে একটি গোশতপি- রয়েছে। যদি তা সংশোধিত হয়ে যায়, তবে গোটা শরীরই সংশোধিত হয়। আর যদি তা কলুষিত হয়, তবে গোটা শরীরই কলুষিত হয়ে যায়। মনে রেখো তা হলো কলব বা অন্তর।’ (বোখারি ও মুসলিম)। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর ইবাদতের পূর্বশর্ত হলো পবিত্রতা। কেননা, আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং পবিত্র। তিনি পবিত্রতা ব্যতীত কোনো জিনিসই কবুল করেন না। সুতরাং ইবাদতের জন্যও দেহ-মন পবিত্র হওয়া আবশ্যক। দৈহিক পবিত্রতা লাভ করলেই হবে না; বরং অন্তরকেও পবিত্র করতে হবে। অন্যসব কিছু থেকে মনকে পবিত্র রেখে শুধু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত করতে হবে। আর অন্তর বা আত্মার পবিত্রতা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।
মানুষের আত্মিক উন্নতি, প্রশান্তি ও বিকাশ সাধনের জন্য আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব অপরিসীম। আত্মশুদ্ধি মানুষের নৈতিক ও মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায়। সদাসর্বদা ভালো চিন্তা ও সৎকর্মে উৎসাহিত করে। আত্মশুদ্ধি মানুষের চরিত্রে প্রশংসনীয় গুণাবলির চর্চা করে। পক্ষান্তরে যার আত্মা কলুষিত সে নানাবিধ পাপচিন্তা ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত থাকে। সে অন্যায়-অত্যাচার, সন্ত্রাস-নির্যাতন করতে দ্বিধাবোধ করে না। ফলে সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলাও বিনষ্ট হয়। অতএব, নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধর বিকাশের জন্যও আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
আত্মশুদ্ধি মানুষকে বিকশিত করে, তাকে পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত করে। পরিশুদ্ধ মানুষ সবধরনের কুপ্রবৃত্তি থেকে, সব পাপাচার ও অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকে। ফলে সমাজে সে আদর্শ মানুষ হিসেবে সবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা লাভ করে। এ হিসেবে আত্মশুদ্ধি হলো সফলতা লাভের মাধ্যম। যে ব্যক্তি আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে ব্যর্থ সে দুর্ভাগা। সে কখনোই সফলতা লাভ করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আত্মাকে পূতপবিত্র রাখবে সেই সফলকাম হবে। আর সে ব্যক্তিই ব্যর্থ হবে যে নিজেকে কলুষিত করবে।’ (সূরা আশ-শামস : ৯-১০)।
পরকালীন জীবনের সফলতা এবং মুক্তিও আত্মশুদ্ধির ওপর নির্ভরশীল। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় নিজ আত্মাকে পবিত্র রাখবে পরকালে সে-ই মুক্তি লাভ করবে। তার জন্য পুরস্কার হবে জান্নাত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সেদিন ধনসম্পদ কোনো কাজে আসবে না, আর না কাজে আসবে সন্তান-সন্ততি। বরং সেদিন সে ব্যক্তিই মুক্তি পাবে, যে আল্লাহর কাছে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে আসবে।’ (সূরা আশ-শুয়ারা, আয়াত ৮৮-৮৯)। মূলত ইহ ও পরকালীন সফলতা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমেই অর্জন করা যায়। এজন্যই ইসলামে আত্মশুদ্ধির ব্যাপারে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
আত্মশুদ্ধি অর্জনের উপায়
মানুষের অন্তর হলো স্বচ্ছ কাচের মতো। যখনই মানুষ কোনো খারাপ কাজ করে, তখনই তাতে একটি কালো দাগ পড়ে। এভাবে বারবার পাপ কাজ করার দ্বারা মানুষের অন্তর পুরোপুরি কলুষিত হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে বলেন, ‘কখনোই নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়েছে।’ (সূরা আল-মুতাফফিফিন : ১৪)।
মানুষের কাজের কারণেই মানুষের অন্তর কলুষিত হয়। সুতরাং আত্মশুদ্ধির প্রধান উপায় হলো খারাপ কাজ ত্যাগ করা এবং কুচিন্তা, কুঅভ্যাস বর্জন করা। সদাসর্বদা সৎকর্ম, সৎচিন্তা করা, নৈতিক ও মানবিক আদর্শে নিজ চরিত্র গঠন করলে আত্মশুদ্ধি অর্জন করা যায়। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, প্রত্যেক জিনিসের পরিশোধক যন্ত্র রয়েছে, আর অন্তর পরিষ্কারের যন্ত্র হলো, আল্লাহর জিকির। (বায়হাকি)।
এছাড়াও বেশি বেশি তওবা, ইস্তেগফার, যুহদ, তাওয়াক্কুল, ইখলাস, ছবর, শোকর, নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত ও সময়মতো নামাজ পড়লেও আত্মশুদ্ধি অর্জন হয়। আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি মুসলমানকে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে তার প্রিয়পাত্র হওয়ার তৌফিক দান করুন।