ঢাকা ১২:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সত্যিই কি হযরত জাকারিয়া (আ.) গাছের ভেতরে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছিলেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৫
  • ৪৯০ বার

লোক মুখে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, মহান আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত একজন নবী যার নাম হযরত জাকারিয়া (আ.) তিনি নাকি কাফেরদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য না চেয়ে গাছের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন। তাঁর আশ্রয় চাওয়ায় গাছ দ্বিখন্ডিত হয়ে গিয়েছিল। তখন তিনি ঐ গাছের মধ্যে আশ্রয় নেন। গাছ পূর্ববৎ হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর জামার আচল বের হয়ে থাকায় কাফেররা চিনে ফেলে এবং অস্ত্র দিয়ে গাছ চিরে, এতে নবীও দুই ভাগ হয়ে যান। এরূপ একটি কাহিনী শুনা যায়। এই কাহিনী কতটুকু সত্য? বর্ণিত ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত সূরাগুলোতেও তার সম্বন্ধে আলোচনা আছে। [সূরা আলইমরান : ৩৭-৪১; সূরা আম্বিয়া : ৯০-৯৮; সূরা আনআম : ৮৫; সূরা হুদ : ৭২-৭৩। এছাড়া সহীহ হাদীসে তা পাওয়া যায় না। ইবনে কাছীর রাহ. আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া(২/২২৮-২২৯) গ্রন্থে এই ঘটনাটি খুবই আপত্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন। সুতরাং তা বর্ণনা করা যাবে না। হযরত যাকারিয়া আ. ও অন্যান্য নবীদের সম্পর্কে করআন মজীদ ও সহীহ হাদীসে যতটুকু বর্ণনা আছে ততটুকু জানাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তাই হযরত যাকারিয়া আ.-এর সম্পর্কে কুরআন মজীদের কয়েকটি আয়াতের তরজমা ও একটি সহীহ হাদীসের অনুবাদ পেশ করা হল। (তরজমা) আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহের বিবরণ, তার বান্দা যাকারিয়া আ.-এর প্রতি, যখন তিনি নিজ পালনকর্তাকে গোপনে আহবান করেছিলেন। তিনি প্রার্থনা করলেন, হে আমার পালনকর্তা! আমার অস্থিসমূহ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বার্ধক্যে মস্তক সুশুভ্র হয়ে গেছে। (মাথার সমস্ত চুল পেকে সাদা হয়ে গেছে)। হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে ডেকে আমি কখনো বিফল মনোরথ হইনি। আর আমি আমার পরে স্বজনবর্গ হতে আশঙ্কা করছি ( যে, তারা শরীয়তের এবং ধর্মের সেবা করবে না।) এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। অতএব আপনি বিশেষভাবে আপনার পক্ষ থেকে আমাকে একজন ওয়ারিশ (পুত্র) দান করুন। সে আমার এবং ইয়াকুব-এর বংশের উত্তরাধিকারী হবে। হে আমার পালনকর্তা! তাকে আপনি সন্তোষজনক করুন। (আল্লাহ তাআলা বললেন,) যে যাকারিয়া! আমি তোমাকে একটি পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহইয়া। ইতিপূর্বে আমি এ নামে কারো নামকরণ করিনি। তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা! কেমন করে আমার পুত্র হবে, অথচ আমার স্ত্রী যে বন্ধ্যা। আর আমিও যে বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে উপনীত। তিনি বললেন, এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলে দিয়েছেন, এটা আমার জন্য সহজ। … (সূরা মারইয়াম : ১-১১) সহীহ মুসলিমে (২/২৬৮) হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি নিজ হাতে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং পেশায় তিনি ছিলেন একজন ছুতার। [শরহুন নববী মুসলিম ১৫/১৩৫]

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সত্যিই কি হযরত জাকারিয়া (আ.) গাছের ভেতরে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছিলেন

আপডেট টাইম : ১০:১১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৫

লোক মুখে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, মহান আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত একজন নবী যার নাম হযরত জাকারিয়া (আ.) তিনি নাকি কাফেরদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য না চেয়ে গাছের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন। তাঁর আশ্রয় চাওয়ায় গাছ দ্বিখন্ডিত হয়ে গিয়েছিল। তখন তিনি ঐ গাছের মধ্যে আশ্রয় নেন। গাছ পূর্ববৎ হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর জামার আচল বের হয়ে থাকায় কাফেররা চিনে ফেলে এবং অস্ত্র দিয়ে গাছ চিরে, এতে নবীও দুই ভাগ হয়ে যান। এরূপ একটি কাহিনী শুনা যায়। এই কাহিনী কতটুকু সত্য? বর্ণিত ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত সূরাগুলোতেও তার সম্বন্ধে আলোচনা আছে। [সূরা আলইমরান : ৩৭-৪১; সূরা আম্বিয়া : ৯০-৯৮; সূরা আনআম : ৮৫; সূরা হুদ : ৭২-৭৩। এছাড়া সহীহ হাদীসে তা পাওয়া যায় না। ইবনে কাছীর রাহ. আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া(২/২২৮-২২৯) গ্রন্থে এই ঘটনাটি খুবই আপত্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন। সুতরাং তা বর্ণনা করা যাবে না। হযরত যাকারিয়া আ. ও অন্যান্য নবীদের সম্পর্কে করআন মজীদ ও সহীহ হাদীসে যতটুকু বর্ণনা আছে ততটুকু জানাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তাই হযরত যাকারিয়া আ.-এর সম্পর্কে কুরআন মজীদের কয়েকটি আয়াতের তরজমা ও একটি সহীহ হাদীসের অনুবাদ পেশ করা হল। (তরজমা) আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহের বিবরণ, তার বান্দা যাকারিয়া আ.-এর প্রতি, যখন তিনি নিজ পালনকর্তাকে গোপনে আহবান করেছিলেন। তিনি প্রার্থনা করলেন, হে আমার পালনকর্তা! আমার অস্থিসমূহ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বার্ধক্যে মস্তক সুশুভ্র হয়ে গেছে। (মাথার সমস্ত চুল পেকে সাদা হয়ে গেছে)। হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে ডেকে আমি কখনো বিফল মনোরথ হইনি। আর আমি আমার পরে স্বজনবর্গ হতে আশঙ্কা করছি ( যে, তারা শরীয়তের এবং ধর্মের সেবা করবে না।) এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। অতএব আপনি বিশেষভাবে আপনার পক্ষ থেকে আমাকে একজন ওয়ারিশ (পুত্র) দান করুন। সে আমার এবং ইয়াকুব-এর বংশের উত্তরাধিকারী হবে। হে আমার পালনকর্তা! তাকে আপনি সন্তোষজনক করুন। (আল্লাহ তাআলা বললেন,) যে যাকারিয়া! আমি তোমাকে একটি পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহইয়া। ইতিপূর্বে আমি এ নামে কারো নামকরণ করিনি। তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা! কেমন করে আমার পুত্র হবে, অথচ আমার স্ত্রী যে বন্ধ্যা। আর আমিও যে বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে উপনীত। তিনি বললেন, এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলে দিয়েছেন, এটা আমার জন্য সহজ। … (সূরা মারইয়াম : ১-১১) সহীহ মুসলিমে (২/২৬৮) হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি নিজ হাতে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং পেশায় তিনি ছিলেন একজন ছুতার। [শরহুন নববী মুসলিম ১৫/১৩৫]