ঢাকা ১১:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

দুর্নীতি তদন্তে ফের নাম, আরও চাপে টিউলিপ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০২:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৩ বার

বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে ঢাকার পূর্বাচলের কূটনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে ফের উঠে এসেছে দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের নাম।এতে করে আরও চাপে পড়েছেন ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এই এমপি।

এদিকে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় টিউলিপ সিদ্দিককে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছে দুর্নীতিবিরোধী জোট ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন। এই জোটে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ও অক্সফামের মতো বৈশ্বিক সংগঠনগুলোও আছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, সানডে টাইমসসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দুর্নীতির তদন্তে নাম এসেছে। বাংলাদেশে তার খালার প্রাক্তন শাসনামলে পরিবারের জন্য জমি অধিগ্রহণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ তদন্ত করা হচ্ছে।

ঢাকার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীর কূটনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দের ঘটনায় তদন্তাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে লেবার পার্টির দুর্নীতি দমন মন্ত্রী সিদ্দিকও রয়েছেন।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দাবি করেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ‘তার প্রভাব এবং বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে’ ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার পরিবারের সদস্যদের জমি বরাদ্দের জন্য চাপ দিয়েছিলেন। তবে টিউলিপ সব দাবি অস্বীকার করেছেন। তারপরও তার ওপর এটি চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিতে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে দুদকের একটি পৃথক তদন্তে ইতোমধ্যেই তার নাম উঠে এসেছে। অবশ্য মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো এই অভিযোগগুলোকে তার খালার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ‘ছড়ানো’ বলে বর্ণনা করেছে।

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এবং তার পরিবার বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ ব্রিটিশ রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে।

এর আগে এই অভিযোগের আলোকে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির পার্লামেন্ট নেতা কেমি ব্যাডেনকও প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানান টিউলিপকে বরখাস্ত করতে।

ইংল্যান্ডের হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট আসনের ৪২ বছর বয়সী এমপি টিউলিপ সিদ্দিক নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর মানদণ্ড উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী টিউলিপের ওপর ‘পূর্ণ আস্থা’ রেখেছেন।

তবে ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন বলেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ সরকারে যে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো স্পষ্টতই ‘স্বার্থের সংঘাত’। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করছে। এই মামলার অন্যতম আসামি টিউলিপের খালা ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যাকে গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

এই মামলা করা হয় মূলত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিরোধী ববি হাজ্জাজের অভিযোগের ভিত্তিতে। বিবিসি এই মামলার নথি দেখতে পেয়েছে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১৩ সালে টিউলিপ সিদ্দিকির মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করে হাসিনা সরকার, যেখানে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হয়।

নথি অনুসারে, এই চুক্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ব্যয় ১ বিলিয়ন পাউন্ড বাড়িয়ে দেখানো হয়। অভিযোগ আছে, এই বাড়িয়ে দেখানো অর্থের ৩০ শতাংশ টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে ব্যাংক ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের এক জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বণ্টন করা হয়।

দুর্নীতিবিরোধী দাতব্য সংস্থাগুলোর জোট এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা ও যুক্তরাজ্যের সুনাম রক্ষায় সরকারের পক্ষে অনেক জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আর এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ সিদ্দিকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কারণে সৃষ্ট স্বার্থ-সংঘাতে এটি এখন স্পষ্ট নয় যে তিনি এসব সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কি না।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ট্রেজারি মন্ত্রী (টিউলিপ) যুক্তরাজ্যের মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও অর্থনৈতিক অপরাধ মোকাবিলার দায়িত্বে আছেন। অথচ তার সরাসরি পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে একটি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সঙ্গে, যা ওই কাঠামোর অধীনে তদন্তের মুখোমুখি হতে পারে। এই স্বার্থ-সংঘাত তদন্তের ফলাফল যাই হোক না কেন, তা বহাল থাকে।’

তবে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের মুখপাত্র সিদ্দিকের পক্ষে সাফাই দিয়ে বলেছেন, ‘তিনি সম্পূর্ণ সঠিকভাবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেকে স্বাধীন উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করেছেন। এই প্রক্রিয়া এখনো চলছে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ক্যাটরিনার হাতে ২০ বার থাপ্পড় খেয়েছিলেন ইমরান খান

দুর্নীতি তদন্তে ফের নাম, আরও চাপে টিউলিপ

আপডেট টাইম : ১২:০২:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫

বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে ঢাকার পূর্বাচলের কূটনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে ফের উঠে এসেছে দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের নাম।এতে করে আরও চাপে পড়েছেন ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এই এমপি।

এদিকে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় টিউলিপ সিদ্দিককে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছে দুর্নীতিবিরোধী জোট ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন। এই জোটে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ও অক্সফামের মতো বৈশ্বিক সংগঠনগুলোও আছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, সানডে টাইমসসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দুর্নীতির তদন্তে নাম এসেছে। বাংলাদেশে তার খালার প্রাক্তন শাসনামলে পরিবারের জন্য জমি অধিগ্রহণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ তদন্ত করা হচ্ছে।

ঢাকার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীর কূটনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দের ঘটনায় তদন্তাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে লেবার পার্টির দুর্নীতি দমন মন্ত্রী সিদ্দিকও রয়েছেন।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দাবি করেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ‘তার প্রভাব এবং বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে’ ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার পরিবারের সদস্যদের জমি বরাদ্দের জন্য চাপ দিয়েছিলেন। তবে টিউলিপ সব দাবি অস্বীকার করেছেন। তারপরও তার ওপর এটি চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিতে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে দুদকের একটি পৃথক তদন্তে ইতোমধ্যেই তার নাম উঠে এসেছে। অবশ্য মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো এই অভিযোগগুলোকে তার খালার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ‘ছড়ানো’ বলে বর্ণনা করেছে।

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এবং তার পরিবার বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ ব্রিটিশ রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে।

এর আগে এই অভিযোগের আলোকে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির পার্লামেন্ট নেতা কেমি ব্যাডেনকও প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানান টিউলিপকে বরখাস্ত করতে।

ইংল্যান্ডের হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট আসনের ৪২ বছর বয়সী এমপি টিউলিপ সিদ্দিক নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর মানদণ্ড উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী টিউলিপের ওপর ‘পূর্ণ আস্থা’ রেখেছেন।

তবে ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন বলেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ সরকারে যে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো স্পষ্টতই ‘স্বার্থের সংঘাত’। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করছে। এই মামলার অন্যতম আসামি টিউলিপের খালা ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যাকে গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

এই মামলা করা হয় মূলত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিরোধী ববি হাজ্জাজের অভিযোগের ভিত্তিতে। বিবিসি এই মামলার নথি দেখতে পেয়েছে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১৩ সালে টিউলিপ সিদ্দিকির মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করে হাসিনা সরকার, যেখানে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হয়।

নথি অনুসারে, এই চুক্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ব্যয় ১ বিলিয়ন পাউন্ড বাড়িয়ে দেখানো হয়। অভিযোগ আছে, এই বাড়িয়ে দেখানো অর্থের ৩০ শতাংশ টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে ব্যাংক ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের এক জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বণ্টন করা হয়।

দুর্নীতিবিরোধী দাতব্য সংস্থাগুলোর জোট এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা ও যুক্তরাজ্যের সুনাম রক্ষায় সরকারের পক্ষে অনেক জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আর এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ সিদ্দিকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কারণে সৃষ্ট স্বার্থ-সংঘাতে এটি এখন স্পষ্ট নয় যে তিনি এসব সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কি না।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ট্রেজারি মন্ত্রী (টিউলিপ) যুক্তরাজ্যের মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও অর্থনৈতিক অপরাধ মোকাবিলার দায়িত্বে আছেন। অথচ তার সরাসরি পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে একটি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সঙ্গে, যা ওই কাঠামোর অধীনে তদন্তের মুখোমুখি হতে পারে। এই স্বার্থ-সংঘাত তদন্তের ফলাফল যাই হোক না কেন, তা বহাল থাকে।’

তবে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের মুখপাত্র সিদ্দিকের পক্ষে সাফাই দিয়ে বলেছেন, ‘তিনি সম্পূর্ণ সঠিকভাবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেকে স্বাধীন উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করেছেন। এই প্রক্রিয়া এখনো চলছে।’