ক্যালিফোর্নিয়ায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে ঝড়ো বাতাস দাবানল আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে দুটো জায়গায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা এ কারণে ব্যাহত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনটি জায়গায় ছড়িয়ে পড়া দাবানল এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পরিষেবা তাদের পূর্বাভাসে জানায়, স্যান্টা অ্যানাতে বাতাস আবার সোমবার থেকে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৭০ মাইল বেগে বইতে শুরু করে তা বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
ঝড়ো বাতাসের হুমকির মুখে লাল পতাকা সতর্কতা জারি করেছে জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা, যা সাধারণত ‘বিশেষভাবে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে’ জারি করা হয়।
এ পরিস্থিতিতে লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র বলেছেন, ‘ঝড়ো বাতাস ফিরে আসার আগেই জরুরি সব প্রস্তুতি নিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির শেরিফ রবার্ট লুনা জানিয়েছেন, পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ৯২ হাজারের বেশি মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরও ৮৯ হাজার মানুষকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের দমকল বিভাগের প্রধান ক্রিস্টিন ক্রাউলি বলেন, ‘আমরা এখনো স্পষ্ট করে কিছু জানি না। আমাদের অসতর্ক হয়ে পড়লে চলবে না।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভাষ্যমতে, যেসব জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি বেশি সেসব জায়গায় দমকলকর্মীরা আগে থেকেই আগুন নেভানোর জন্য অবস্থান নিচ্ছেন।
এর মধ্যে পলিসেইডস এবং ইটন, এ দুই জায়গায় ৮ হাজার ৫০০ জনের বেশি দমকলকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। আকাশ এবং স্থলপথে অধিকসংখ্যক দমকলকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
ক্রিস্টিন ক্রাউলি আরও বলেন, ‘আমরা যে এর পরের দাবানল বাগে এনে ছোট জায়গার মধ্যে সীমিত রাখতে পারব, সে ব্যাপারে কখনোই নিশ্চিত না।’
এদিকে পূর্বাভাস বলছে, ঘন্টায় ৭০ মাইল বেগে বাতাস বইবে। সেই বাতাসে বেড়ে যাওয়া আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।
সবচেয়ে বড় দাবানলের শিকার হয়েছে পলিসেইডস। যেখানে প্রায় ২৩ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। তবে, পলিসেইডসের আগুন ১৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
অপরদিকে, ইটনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দাবানলে ১৪ হাজারের বেশি একর এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে ওই এলাকায় আগুন ৩৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
এছাড়া হার্স্ট-এ পুড়েছে ৭৯৯ একর। যদিও ওই এলাকার আগুনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। বড় এই দাবানলগুলো নিয়ন্ত্রণে আসার মধ্যেই কর্তৃপক্ষ নতুন করে আবার বিপজ্জনক বাতাস ফেরার সতর্কবার্তা দিয়েছে। এ বাতাস নাকি আরও বিপর্যয়কর হতে পারে।
বিবিসি-কে পাসাডেনার দমকল বিভাগের প্রধান চাদ অগাস্টিন বলেন, ‘আমরা হয়ত আবার বিপর্যয়ের মুখে পড়তে চলেছি। কারণ, মঙ্গলবার বাতাসের গতি সর্বোচ্চ হতে পারে।’
এই কয়দিনেরর দাবানলের আগুনে সম্পদের ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের দুর্দশাও চরমে পৌঁছেছে। এ পর্যন্ত অন্তত ২৪ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নিউসম।
এদিক লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্থনি বলেন, ‘ঝড়ো বাতাসের পূর্বাভাস বাতাসে আর্দ্রতা খুবই কম থাকায় লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবে অনেক বেশি।’
লস এঞ্জেলস কাউন্টি শেরিফ রবার্ট লুনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘তিনি আগুন নেভানোর কাজে সহায়তার জন্য ন্যাশনাল গার্ডের আরও সদস্য চেয়েছেন। এর মধ্যেই চারশ’সদস্য কাজ করে যাচ্ছেন।’