ঢাকা ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোনার হাওরে বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি, ফের ফসলহানির আশঙ্কা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:১০:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • ৩১২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাত্র সাড়ে ১২ লাখ টাকার লোভ সামলাতে না পারায় হাজার হাজার একর জমির ফসল গিয়েছিলো ডুবে। প্রায় ৬০ কিলোমিটার বাঁধের মেরামত কাজের জন্য পিআইসির কমিটি গঠনে লেগে যায় সময়। কার পক্ষের লোকজন দিয়ে হবে কমিটি। এমন করতে করতে নভেম্বর থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি মাস চলে আসে। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের স্থানীয় মেম্বারকে সভাপতি এবং স্বামী হন সম্পাদক ও ভাই হন সদস্য। এভাবে ৬ কমিটির সদস্যের মধ্যে এক পরিবারেই থাকেন ৩ জন। তারপর কোন রকমে কাজ শুরু হলেও ফাল্গুন থেকেই জোয়ারের পানি আসতে থাকে। পাহাড়ি ঢলে মার্চ মাসের শেষ দিন রাতেই ডুবিয়ে নেয় খালিয়াজুরী পুরো উপজেলাসহ মদন মোহনগঞ্জ। ক্ষতিগ্রস্থ হন লক্ষাধিক কৃষক। নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনটি উপজেলাসহ মোট ৭ উপেজেলার নিন্ম শ্রেনীর কৃষকেরা। শুরু হয় ত্রান বিতরণ। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং উপস্থিত হন দুঃখীদের দেখতে। গত ২০১৭ সালের ঘটনা এটি।

কৃষি অফিস সূত্রে সে বছর শুধু হাওর অঞ্চলেই আবাদ হয়েছিল ৪০ হাজার ৬শ ২০ হেক্টর জমি। তার মধ্যে সেদিন প্রায় ৩৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। যেখান থেকে প্রায় ৬শ কোটি টাকারও বেশী মূল্যের ধান উৎপাদিত হতো। যার সঠিক হিসাব কষতে পারেনি কৃষি বিভাগও। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশে নীতিমালা তৈরী হয়। সময়মতো সঠিক কাজের জন্য প্রশাসন থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের রেখে চলবে কাজ। এরই প্রেক্ষিতে হাওরে হাওরে মোট অংকের বরাদ্দ বাড়তে থাকে। আগেরবার কম টাকার লুপাট হতো। মারাত্মক বন্যার পর বেশি টাকার সুবিধা হয়।

বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কাজগুলো ভাগ হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় কৃষকরা বরাবরের মতোই থাকেন অদৃশ্য আর দূরবর্তী। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ হাওরাঞ্চলে গিয়ে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে। এসব তথ্য উঠে আসে কৃষক, সরকারী, বেসরকারী, গবেষক ও স্থানীয়দের মুখ থেকে। তারা বলেন, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ ধরতে হয় পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই। অর্থাৎ নভেম্বরের শুরতেই কাজ শুরু হয়ে গেলে পসই মাটি বসতে বসতে সময় নেয়। সরকারের এতো কড়া নির্দেশ এতো কিছুর উপেক্ষা করে এবারও কাজের নমুনা একই।

জালালপুর গ্রামের বারেক মিয়া, রবিউল, দীন ইসলামসহ বেশ কজন কৃষক বলেন, জালারের কুড় ভেঙ্গে গতবার এই কাণ্ড হয়েছে। আমরা নিজ চোখে দেখেছি। পানি আসার সপ্তাহখানেক আগে এসে লাখ খানেক টাকা খরচ করে বস্তায় ভরে মাটি ফেলতে। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু পিআইসির কমিটি প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদেরকে তারা উল্টা হুমকি-ধামকি দিয়েছে। চোখের সামনে আমরা ফসল তলিয়ে যেতে দেখেছি নয়ন ভাগার মতো। কোনভাবেই বাঁশ বস্তা দিয়ে রক্ষা করতে পারিনি সেদিন। এ বছরও কাজে গাফিলতি। ফেব্রুয়ারি মাসের অর্ধেক। এখনো চলছে ব্লক তৈরীর কাজ। মাটি দিয়ে কবে দেবে বাঁধ। এদিকে জোয়ারের পানি আসে আসে। ফাল্গুনের বাতাসে পানি বাড়তে থাকে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নেত্রকোনার হাওরে বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি, ফের ফসলহানির আশঙ্কা

আপডেট টাইম : ০৬:১০:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাত্র সাড়ে ১২ লাখ টাকার লোভ সামলাতে না পারায় হাজার হাজার একর জমির ফসল গিয়েছিলো ডুবে। প্রায় ৬০ কিলোমিটার বাঁধের মেরামত কাজের জন্য পিআইসির কমিটি গঠনে লেগে যায় সময়। কার পক্ষের লোকজন দিয়ে হবে কমিটি। এমন করতে করতে নভেম্বর থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি মাস চলে আসে। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের স্থানীয় মেম্বারকে সভাপতি এবং স্বামী হন সম্পাদক ও ভাই হন সদস্য। এভাবে ৬ কমিটির সদস্যের মধ্যে এক পরিবারেই থাকেন ৩ জন। তারপর কোন রকমে কাজ শুরু হলেও ফাল্গুন থেকেই জোয়ারের পানি আসতে থাকে। পাহাড়ি ঢলে মার্চ মাসের শেষ দিন রাতেই ডুবিয়ে নেয় খালিয়াজুরী পুরো উপজেলাসহ মদন মোহনগঞ্জ। ক্ষতিগ্রস্থ হন লক্ষাধিক কৃষক। নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনটি উপজেলাসহ মোট ৭ উপেজেলার নিন্ম শ্রেনীর কৃষকেরা। শুরু হয় ত্রান বিতরণ। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং উপস্থিত হন দুঃখীদের দেখতে। গত ২০১৭ সালের ঘটনা এটি।

কৃষি অফিস সূত্রে সে বছর শুধু হাওর অঞ্চলেই আবাদ হয়েছিল ৪০ হাজার ৬শ ২০ হেক্টর জমি। তার মধ্যে সেদিন প্রায় ৩৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। যেখান থেকে প্রায় ৬শ কোটি টাকারও বেশী মূল্যের ধান উৎপাদিত হতো। যার সঠিক হিসাব কষতে পারেনি কৃষি বিভাগও। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশে নীতিমালা তৈরী হয়। সময়মতো সঠিক কাজের জন্য প্রশাসন থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের রেখে চলবে কাজ। এরই প্রেক্ষিতে হাওরে হাওরে মোট অংকের বরাদ্দ বাড়তে থাকে। আগেরবার কম টাকার লুপাট হতো। মারাত্মক বন্যার পর বেশি টাকার সুবিধা হয়।

বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কাজগুলো ভাগ হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় কৃষকরা বরাবরের মতোই থাকেন অদৃশ্য আর দূরবর্তী। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ হাওরাঞ্চলে গিয়ে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে। এসব তথ্য উঠে আসে কৃষক, সরকারী, বেসরকারী, গবেষক ও স্থানীয়দের মুখ থেকে। তারা বলেন, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ ধরতে হয় পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই। অর্থাৎ নভেম্বরের শুরতেই কাজ শুরু হয়ে গেলে পসই মাটি বসতে বসতে সময় নেয়। সরকারের এতো কড়া নির্দেশ এতো কিছুর উপেক্ষা করে এবারও কাজের নমুনা একই।

জালালপুর গ্রামের বারেক মিয়া, রবিউল, দীন ইসলামসহ বেশ কজন কৃষক বলেন, জালারের কুড় ভেঙ্গে গতবার এই কাণ্ড হয়েছে। আমরা নিজ চোখে দেখেছি। পানি আসার সপ্তাহখানেক আগে এসে লাখ খানেক টাকা খরচ করে বস্তায় ভরে মাটি ফেলতে। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু পিআইসির কমিটি প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদেরকে তারা উল্টা হুমকি-ধামকি দিয়েছে। চোখের সামনে আমরা ফসল তলিয়ে যেতে দেখেছি নয়ন ভাগার মতো। কোনভাবেই বাঁশ বস্তা দিয়ে রক্ষা করতে পারিনি সেদিন। এ বছরও কাজে গাফিলতি। ফেব্রুয়ারি মাসের অর্ধেক। এখনো চলছে ব্লক তৈরীর কাজ। মাটি দিয়ে কবে দেবে বাঁধ। এদিকে জোয়ারের পানি আসে আসে। ফাল্গুনের বাতাসে পানি বাড়তে থাকে।