ঢাকা ০১:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাঁস এনেছে অভাবী মানুষের মুখে হাসি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩২:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৫
  • ৩৬৫ বার

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জের গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে হাঁসের খামার। আর এই হাঁসগুলোই হাসি ফুটাচ্ছে অভাবী মানুষের ঘরে। দরিদ্র কর্মহীন নারী-পুরুষ হাঁসের খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

হাঁসের খামার করে আড়াইহাজারে আলাউদ্দিন বদলে দিয়েছেন তার ভাগ্য। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে হাঁসের খামার ব্যবসার সঙ্গে তিনি জড়িত। একমাত্র হাঁস পালন করেই তিনি সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচও চালাচ্ছেন। হাঁস পালন ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে মুসলেহ উদ্দিনের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। এর আলোকেই তিনি এখন সফল খামারী।

মুসলেহ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, হাঁসের বাচ্চার কখন কী সমস্যা হয় তা তিনি সহজেই বুঝতে পারেন। চিকিৎসাও তার জানা আছে। ডাক্তারের তেমন পরামর্শ নিতে হয় না। গত বৈশাখ মাসে তিনি ৫শ হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করেছিলেন। নিয়মিত টিকা ও ওষধ প্রদান এবং সঠিকভাবে খাদ্য সরবরাহ করায় এ বছর তার খামারের ১টি বাচ্চাও মারা যায়নি।

হাঁস পালনের সঙ্গে জড়িতরা জানান, গত ৫ বছর আগে এই অঞ্চলে ব্যাপকভাবে হাঁস পালন শুরু হয়। বিস্তৃত জলাবদ্ধ এলাকার ডোবা, নালা, বিলে প্রাকৃতিকভাবেই হাঁসের খাদ্যসামগ্রী রয়েছে। এসব জলাশয়কে নির্ভর করে সহজেই হাঁস পালন করা যায়। ফলে এ সকল জলাশয়ে খামার মালিকদের হাঁসের খাদ্য সংগ্রহ করতে তেমন অর্থ ব্যয় করতে হয় না।

জানা গেছে, দুই উপজেলায় শতাধিক হাঁসের খামার রয়েছে। এতে হাঁসের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। ডিম পাড়ার মৌসুমে প্রতিদিন অর্ধ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ডিম উৎপাদিত হয়। বছরের আট মাসই এই এলাকার খামার থেকে ডিম উৎপাদিত হয়। পাশ্ববর্তী নরসিংদী এলাকার কচুয়া গ্রামে ১৬টি ও ভাটিপাড়া ইউনিয়নের দত্তগ্রামে ছয়টি হ্যাচারি রয়েছে। এ সকল হ্যাচারি থেতে হাঁসের বাচ্ছা সংগ্রহ করা হয়। হ্যাচারিতে নিজস্ব উদ্যোগে তুষ পদ্ধতির মাধ্যমে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো হয়।

Hash

হ্যাচারির মালিক কচুয়া গ্রামের খোকা দাস জাগো নিউজকে জানান, ২৮ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা হয়। ফুটানো বাচ্চা ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে বিক্রি করে দেয়া হয়। একটি হ্যাচারিতে প্রতি দফায় ৩ হাজার করে ৪ দফায় ১২ হাজার বাচ্চা ফোটানো হয়। সনাতন এই পদ্ধতিতে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়।

তিনি আরো জানান, এ সকল হ্যাচারি থেকে উৎপাদিত বাচ্চা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, আড়াইহাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়ও সরবরাহ করা হয়। ক্যাম্পল ও খাকি প্রজাতির হাঁস বছরের আট মাস ডিম পাড়ে। তবে খাদ্যের ঘাটতি হলে ডিমের পরিমাণ কমে যায়। রূপগঞ্জ উপজেলার ১০টি গ্রামে ১৬টি ছোট বড় হাঁসের খামার রয়েছে। আড়াইহাজারের ১০টি গ্রামে ১১টি হাঁসের খামার রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কারণে হাঁস পালনের অপার সম্ভাবনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অনেকে খামার ব্যবসা ছেড়েও দিচ্ছেন। হাঁস পালনের ব্যাপারে সরকারি পৃষ্টপোষকতার দাবি করেছেন তারা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হাঁস এনেছে অভাবী মানুষের মুখে হাসি

আপডেট টাইম : ১১:৩২:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৫

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জের গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে হাঁসের খামার। আর এই হাঁসগুলোই হাসি ফুটাচ্ছে অভাবী মানুষের ঘরে। দরিদ্র কর্মহীন নারী-পুরুষ হাঁসের খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

হাঁসের খামার করে আড়াইহাজারে আলাউদ্দিন বদলে দিয়েছেন তার ভাগ্য। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে হাঁসের খামার ব্যবসার সঙ্গে তিনি জড়িত। একমাত্র হাঁস পালন করেই তিনি সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচও চালাচ্ছেন। হাঁস পালন ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে মুসলেহ উদ্দিনের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। এর আলোকেই তিনি এখন সফল খামারী।

মুসলেহ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, হাঁসের বাচ্চার কখন কী সমস্যা হয় তা তিনি সহজেই বুঝতে পারেন। চিকিৎসাও তার জানা আছে। ডাক্তারের তেমন পরামর্শ নিতে হয় না। গত বৈশাখ মাসে তিনি ৫শ হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করেছিলেন। নিয়মিত টিকা ও ওষধ প্রদান এবং সঠিকভাবে খাদ্য সরবরাহ করায় এ বছর তার খামারের ১টি বাচ্চাও মারা যায়নি।

হাঁস পালনের সঙ্গে জড়িতরা জানান, গত ৫ বছর আগে এই অঞ্চলে ব্যাপকভাবে হাঁস পালন শুরু হয়। বিস্তৃত জলাবদ্ধ এলাকার ডোবা, নালা, বিলে প্রাকৃতিকভাবেই হাঁসের খাদ্যসামগ্রী রয়েছে। এসব জলাশয়কে নির্ভর করে সহজেই হাঁস পালন করা যায়। ফলে এ সকল জলাশয়ে খামার মালিকদের হাঁসের খাদ্য সংগ্রহ করতে তেমন অর্থ ব্যয় করতে হয় না।

জানা গেছে, দুই উপজেলায় শতাধিক হাঁসের খামার রয়েছে। এতে হাঁসের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। ডিম পাড়ার মৌসুমে প্রতিদিন অর্ধ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ডিম উৎপাদিত হয়। বছরের আট মাসই এই এলাকার খামার থেকে ডিম উৎপাদিত হয়। পাশ্ববর্তী নরসিংদী এলাকার কচুয়া গ্রামে ১৬টি ও ভাটিপাড়া ইউনিয়নের দত্তগ্রামে ছয়টি হ্যাচারি রয়েছে। এ সকল হ্যাচারি থেতে হাঁসের বাচ্ছা সংগ্রহ করা হয়। হ্যাচারিতে নিজস্ব উদ্যোগে তুষ পদ্ধতির মাধ্যমে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো হয়।

Hash

হ্যাচারির মালিক কচুয়া গ্রামের খোকা দাস জাগো নিউজকে জানান, ২৮ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা হয়। ফুটানো বাচ্চা ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে বিক্রি করে দেয়া হয়। একটি হ্যাচারিতে প্রতি দফায় ৩ হাজার করে ৪ দফায় ১২ হাজার বাচ্চা ফোটানো হয়। সনাতন এই পদ্ধতিতে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়।

তিনি আরো জানান, এ সকল হ্যাচারি থেকে উৎপাদিত বাচ্চা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, আড়াইহাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়ও সরবরাহ করা হয়। ক্যাম্পল ও খাকি প্রজাতির হাঁস বছরের আট মাস ডিম পাড়ে। তবে খাদ্যের ঘাটতি হলে ডিমের পরিমাণ কমে যায়। রূপগঞ্জ উপজেলার ১০টি গ্রামে ১৬টি ছোট বড় হাঁসের খামার রয়েছে। আড়াইহাজারের ১০টি গ্রামে ১১টি হাঁসের খামার রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কারণে হাঁস পালনের অপার সম্ভাবনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অনেকে খামার ব্যবসা ছেড়েও দিচ্ছেন। হাঁস পালনের ব্যাপারে সরকারি পৃষ্টপোষকতার দাবি করেছেন তারা।