ঢাকা ০৮:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর শপথ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ জানুয়ারী ২০১৯
  • ২৭৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘সাবাস শেখ হাসিনা! পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়। জ্বলেপুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ কবি সুকান্ত লিখেছিলেন সাবাস বাংলাদেশ। কিন্তু আজ বাস্তবতা ‘সাবাস শেখ হাসিনা’। শেখ হাসিনা আজ শুধু একটি নাম কিংবা নিছক একজন দলীয় প্রধান নন, তিনি একাধারে সরকারপ্রধান এবং বিশ্বদরবারে একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক, বিশ্বশান্তির অগ্রদূত এবং গণতান্ত্রিক উন্নয়নের প্রতিষ্ঠান। নতুন বাংলাদেশের রূপকার।

বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনা অপরিহার্য। স্বাধীনতার পর নজিরবিহীন উন্নয়ন কেবল শেখ হাসিনার আমলেই প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছেন জীবনভর। তার রক্তের যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনাও একই পথের যাত্রী। ৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাদের লাশও দেখার সুযোগ হয়নি। মা-বাবা, ভাইদের নৃশংসভাবে হত্যার পরও ঘাতকরা ক্ষান্ত হয়নি। ১৯ বার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরম করুণাময় তাকে বারবার বুলেট ও গ্রেনেডের মুখ থেকে জীবিত ফিরিয়ে এনেছেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এক বিস্ময় বিশ্ববাসীর কাছে। দেশ ও দেশের বাইরে ভিশনারি লিডার হিসেবে শেখ হাসিনার ঈর্শনীয় সাফল্য অনন্য ও অসাধারণ।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনেও তিনি বিশ্বনেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে হয়েছেন প্রশংসিত। শান্তি, শিক্ষা, সম্প্রীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী, যা সম্ভব হয়েছে তার দূরদর্শিতা ও দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে।

তিনি পাল তুলে দিয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বহমানের নৌকায়। বৈঠা ধরেছেন শক্ত হাতে। সেই তরী উথাল-পাথাল স্রোতের ভেতর দিয়ে পাড়ি দিয়েছে খাল-বিল-নদী-নালা থেকে সাগর মোহনায়। কবিগুরু সেই ১৯০৫ সালে গিয়েছিলেন, ‘এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে, জয় মা বলে ভাসা তরী।’ তিনি সত্যিই ‘জয় বাংলা’ বলে ভাসিয়েছিলেন তরী। বিশাল বাংলাদেশের বুক জুড়ে তার নৌকা ভেসেছে দুর্বার গতিতে। যে নৌকায় ১৯৭০ সালে উঠেছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালি। আর ২০১৮ সালে উঠেছে ১৭ কোটি বাঙালি। নায়ের বাদাম তুলে মাঝি ছুটে চলছে বাংলার প্রতি ঘাটে, বন্দরে। সবখানে তার তরী ভিড়েছে মানুষের টানে, তাদেরই আবাহনে।

গত এক দশকে তার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে দেশ উন্নয়নের পথ ধরে যতদূর এগিয়েছে তা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল। দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের অগ্রযাত্রা হয়েছে চাওয়ার অধিক। দুর্ভিক্ষ, ভিক্ষুক, অনাহার শব্দগুলো ক্রমেই মুছে গেছে বাঙালির জনজীবন থেকে। আর এ কাজটি সম্ভব হয়েছে তারই কর্মকুশলতা, কর্মনিষ্ঠতার কারণেই। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা, প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে নিয়ে যাওয়া, বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্টে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর, রফতানি বাড়াতে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করেছেন, তাতে দেশের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা তার নেতৃত্বের প্রতি তাদের সমর্থন তুলে ধরেছেন।

তাই তো দেশবাসী আবার ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছে শেখ হাসিনাকে। দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি, মানুষের বিকাশ যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বহুদূর এগিয়ে যাবে, তা এ দেশের মানুষের বিশ্বাসবোধে লালিত। কেবলই অন্ধকার, কেবলই কানামাছির জগতে বাংলার মানুষ ফিরে যেতে চায় না। তারা চায় আরো আলো। আলোকে আলোকময় হোক সারা দেশ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণে বিজয়ের মাসে দেশবাসী ভোট দিয়েছে নৌকায়-চেয়েছে শেখ হাসিনাকে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন একটি মধ্যম আয়ের দেশ। বিশ্বে ৩৩তম অর্থনীতি (পিপিপি হিসেবে)। মাথাপিছু গড় আয় ১৬১০ মার্কিন ডলার। গত এক দশকে গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল (চলতি আর্থিক বছরে ৭.২৮ শতাংশ)। সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামনে বাংলাদেশের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন কীভাবে করতে হয় তা বাংলাদেশ থেকে শিখতে পারো। বাংলাদেশ কীভাবে জঙ্গিবাদ দমন করেছে তা-ও এখন অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে শিখতে চায়। রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করে শেখ হাসিনাই বাংলাদেশকে বিশ্বের পরমাণু ক্লাবের ৩২তম সদস্য করছেন।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ঠিক, তবে তাকে ঘিরে শঙ্কাও কম নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন, তবে সেদিন তার জন্য যে বুলেট বরাদ্দ ছিল, তা তাকে এখনো তাড়া করছে। এ পর্যন্ত তিনি ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলীয় সমাবেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যা মিশন। দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের জীবন দিয়ে শেখ হাসিনাকে সেদিন রক্ষা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে ও বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতিতে তার ঝুলিতে জমেছে অনেকগুলো অর্জন। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অনেক সম্মাননা পদক। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ৪১টি পুরস্কার, পদক, ডক্টরেট ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। এর মধ্যে জাতিসংঘের বেশ কটি পুরস্কার রয়েছে। এ ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ১৩টি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন।

শেখ হাসিনা ওয়াজেদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা, বাংলাদেশের জাতির জনক ও বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। তার মায়ের নাম বেগম ফজিলাতুন্নেছা। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং বাল্যশিক্ষা সেখানেই নেন। ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে মোগলটুলির রজনীবোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে ওঠেন। ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে থাকা শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ও তার বোন শেখ রেহানা বাদে পরিবারের সব সদস্যকে হত্যা করা হয়। ওই সময় দুই বোন পড়াশোনার জন্য পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন।

শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় ১৯৬৭ সালে এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ সালের ৯ মে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

রাজনীতি : আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতেই দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতায় আরোহণকে অবৈধ ঘোষণা করলেও তার দল ১৯৮৬ সালে এই সামরিক শাসকের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। পরে তিনি এবং তার দল এরশাদবিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন ও ১৯৯০ সালে অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। ১৯৯১ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের তৎকালীন বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে প্রকাশ পায়। ১৯৯৬ সালে তার দল জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়লাভ করে। বিজয়ী দলের নেতা হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জয়ী হয়। তিনি হন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় সপ্তম স্থানে ছিলেন। ২০১০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে তিনি বিশ্বের সেরা দশ ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন। ২০১৫ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় শেখ হাসিনা ৫৯তম স্থানে ছিলেন। ২০১৪ সালে এই তালিকায় শেখ হাসিনার অবস্থান ছিল ৪৭তম। ফোর্বস-এ প্রথম ১০০ সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে ৫৯তম স্থান অর্জন।

সম্মাননা : যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।

পুরস্কার : ইউএন উইমেন থেকে প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন, গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম থেকে এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার, ইউনেসকো থেকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার, সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ থেকে মাদার তেরেসা পুরস্কার, মহাত্মা গান্ধী ফাউন্ডেশন কর্তৃক এম কে গান্ধী পুরস্কার, আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক Medal of Distinction ও Head of State, খাদ্য ও কৃষিসংস্থা থেকে চেরেস, রানডলপ ম্যাকন উইমেন্স কলেজ কর্তৃক পার্ল এসবাক, ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার, ইউনেসকো ‘শান্তিবৃক্ষ’ চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ, সাউথ সাউথ পুরস্কার লাভ করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আজ চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর শপথ

আপডেট টাইম : ১১:৪৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ জানুয়ারী ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘সাবাস শেখ হাসিনা! পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়। জ্বলেপুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ কবি সুকান্ত লিখেছিলেন সাবাস বাংলাদেশ। কিন্তু আজ বাস্তবতা ‘সাবাস শেখ হাসিনা’। শেখ হাসিনা আজ শুধু একটি নাম কিংবা নিছক একজন দলীয় প্রধান নন, তিনি একাধারে সরকারপ্রধান এবং বিশ্বদরবারে একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক, বিশ্বশান্তির অগ্রদূত এবং গণতান্ত্রিক উন্নয়নের প্রতিষ্ঠান। নতুন বাংলাদেশের রূপকার।

বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনা অপরিহার্য। স্বাধীনতার পর নজিরবিহীন উন্নয়ন কেবল শেখ হাসিনার আমলেই প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছেন জীবনভর। তার রক্তের যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনাও একই পথের যাত্রী। ৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাদের লাশও দেখার সুযোগ হয়নি। মা-বাবা, ভাইদের নৃশংসভাবে হত্যার পরও ঘাতকরা ক্ষান্ত হয়নি। ১৯ বার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরম করুণাময় তাকে বারবার বুলেট ও গ্রেনেডের মুখ থেকে জীবিত ফিরিয়ে এনেছেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এক বিস্ময় বিশ্ববাসীর কাছে। দেশ ও দেশের বাইরে ভিশনারি লিডার হিসেবে শেখ হাসিনার ঈর্শনীয় সাফল্য অনন্য ও অসাধারণ।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনেও তিনি বিশ্বনেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে হয়েছেন প্রশংসিত। শান্তি, শিক্ষা, সম্প্রীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী, যা সম্ভব হয়েছে তার দূরদর্শিতা ও দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে।

তিনি পাল তুলে দিয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বহমানের নৌকায়। বৈঠা ধরেছেন শক্ত হাতে। সেই তরী উথাল-পাথাল স্রোতের ভেতর দিয়ে পাড়ি দিয়েছে খাল-বিল-নদী-নালা থেকে সাগর মোহনায়। কবিগুরু সেই ১৯০৫ সালে গিয়েছিলেন, ‘এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে, জয় মা বলে ভাসা তরী।’ তিনি সত্যিই ‘জয় বাংলা’ বলে ভাসিয়েছিলেন তরী। বিশাল বাংলাদেশের বুক জুড়ে তার নৌকা ভেসেছে দুর্বার গতিতে। যে নৌকায় ১৯৭০ সালে উঠেছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালি। আর ২০১৮ সালে উঠেছে ১৭ কোটি বাঙালি। নায়ের বাদাম তুলে মাঝি ছুটে চলছে বাংলার প্রতি ঘাটে, বন্দরে। সবখানে তার তরী ভিড়েছে মানুষের টানে, তাদেরই আবাহনে।

গত এক দশকে তার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে দেশ উন্নয়নের পথ ধরে যতদূর এগিয়েছে তা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল। দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের অগ্রযাত্রা হয়েছে চাওয়ার অধিক। দুর্ভিক্ষ, ভিক্ষুক, অনাহার শব্দগুলো ক্রমেই মুছে গেছে বাঙালির জনজীবন থেকে। আর এ কাজটি সম্ভব হয়েছে তারই কর্মকুশলতা, কর্মনিষ্ঠতার কারণেই। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা, প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে নিয়ে যাওয়া, বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্টে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর, রফতানি বাড়াতে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করেছেন, তাতে দেশের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা তার নেতৃত্বের প্রতি তাদের সমর্থন তুলে ধরেছেন।

তাই তো দেশবাসী আবার ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছে শেখ হাসিনাকে। দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি, মানুষের বিকাশ যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বহুদূর এগিয়ে যাবে, তা এ দেশের মানুষের বিশ্বাসবোধে লালিত। কেবলই অন্ধকার, কেবলই কানামাছির জগতে বাংলার মানুষ ফিরে যেতে চায় না। তারা চায় আরো আলো। আলোকে আলোকময় হোক সারা দেশ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণে বিজয়ের মাসে দেশবাসী ভোট দিয়েছে নৌকায়-চেয়েছে শেখ হাসিনাকে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন একটি মধ্যম আয়ের দেশ। বিশ্বে ৩৩তম অর্থনীতি (পিপিপি হিসেবে)। মাথাপিছু গড় আয় ১৬১০ মার্কিন ডলার। গত এক দশকে গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল (চলতি আর্থিক বছরে ৭.২৮ শতাংশ)। সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামনে বাংলাদেশের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন কীভাবে করতে হয় তা বাংলাদেশ থেকে শিখতে পারো। বাংলাদেশ কীভাবে জঙ্গিবাদ দমন করেছে তা-ও এখন অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে শিখতে চায়। রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করে শেখ হাসিনাই বাংলাদেশকে বিশ্বের পরমাণু ক্লাবের ৩২তম সদস্য করছেন।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ঠিক, তবে তাকে ঘিরে শঙ্কাও কম নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন, তবে সেদিন তার জন্য যে বুলেট বরাদ্দ ছিল, তা তাকে এখনো তাড়া করছে। এ পর্যন্ত তিনি ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলীয় সমাবেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যা মিশন। দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের জীবন দিয়ে শেখ হাসিনাকে সেদিন রক্ষা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে ও বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতিতে তার ঝুলিতে জমেছে অনেকগুলো অর্জন। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অনেক সম্মাননা পদক। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ৪১টি পুরস্কার, পদক, ডক্টরেট ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। এর মধ্যে জাতিসংঘের বেশ কটি পুরস্কার রয়েছে। এ ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ১৩টি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন।

শেখ হাসিনা ওয়াজেদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা, বাংলাদেশের জাতির জনক ও বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। তার মায়ের নাম বেগম ফজিলাতুন্নেছা। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং বাল্যশিক্ষা সেখানেই নেন। ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে মোগলটুলির রজনীবোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে ওঠেন। ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে থাকা শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ও তার বোন শেখ রেহানা বাদে পরিবারের সব সদস্যকে হত্যা করা হয়। ওই সময় দুই বোন পড়াশোনার জন্য পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন।

শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় ১৯৬৭ সালে এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ সালের ৯ মে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

রাজনীতি : আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতেই দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতায় আরোহণকে অবৈধ ঘোষণা করলেও তার দল ১৯৮৬ সালে এই সামরিক শাসকের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। পরে তিনি এবং তার দল এরশাদবিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন ও ১৯৯০ সালে অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। ১৯৯১ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের তৎকালীন বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে প্রকাশ পায়। ১৯৯৬ সালে তার দল জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়লাভ করে। বিজয়ী দলের নেতা হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জয়ী হয়। তিনি হন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় সপ্তম স্থানে ছিলেন। ২০১০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে তিনি বিশ্বের সেরা দশ ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন। ২০১৫ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় শেখ হাসিনা ৫৯তম স্থানে ছিলেন। ২০১৪ সালে এই তালিকায় শেখ হাসিনার অবস্থান ছিল ৪৭তম। ফোর্বস-এ প্রথম ১০০ সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে ৫৯তম স্থান অর্জন।

সম্মাননা : যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।

পুরস্কার : ইউএন উইমেন থেকে প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন, গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম থেকে এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার, ইউনেসকো থেকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার, সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ থেকে মাদার তেরেসা পুরস্কার, মহাত্মা গান্ধী ফাউন্ডেশন কর্তৃক এম কে গান্ধী পুরস্কার, আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক Medal of Distinction ও Head of State, খাদ্য ও কৃষিসংস্থা থেকে চেরেস, রানডলপ ম্যাকন উইমেন্স কলেজ কর্তৃক পার্ল এসবাক, ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার, ইউনেসকো ‘শান্তিবৃক্ষ’ চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ, সাউথ সাউথ পুরস্কার লাভ করেন।