বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সংকট কাটেনি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় বার্ষিক সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সংকট কাটেনি। সংগঠনটির দুটি পক্ষ পৃথকভাবে ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। এ অবস্থায় সরকারও ইজতেমা আয়োজনের বিষয়ে কিছু বলছে না। গত বছরের ডিসেম্বরে তাবলিগের দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরের ইজতেমা ময়দান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বাংলাদেশে তাবলিগের বিভেদ প্রকাশ্য হয় গত বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমা থেকে। বিরোধিতার কারণে গত বছর বাংলাদেশে এসেও ইজতেমায় অংশ নিতে পারেননি তাবলিগের আমির ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভী। এরপর থেকে দুই পক্ষের মধ্যেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। কওমি মাদ্রাসার আলেমদের পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের সমর্থকেরা সাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আর সাদের পক্ষে আছেন তাবলিগ জামাতের নিয়মিত নেতাদের একটি অংশ। ধর্ম নিয়ে সাদের কিছু বক্তব্যের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়।

সংসদ নির্বাচনের পর ইজতেমা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত শুক্রবার মুঠোফোনে সাংবাদিককে বলেন, ‘দুই পক্ষই বিপরীতমুখী হয়ে বসে আছে। দেখি।’

সাদের অনুসারীরা ১১ জানুয়ারি থেকে ইজতেমা করতে চাচ্ছেন—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমাদের কোনো প্রস্তুতিও নেই। আমাদের একটা বড় ফোর্স মুভ করাতে হবে। আমাদেরও বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি লাগে। আমরা তো এগুলো নিইনি। আর বড় কথা হলো, বিরোধী পক্ষ এগুলো এখন হতে দেবে না। খুনোখুনি তো হয়েছেই। একটা উত্তেজনা রয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী এখন ব্যস্ত আছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তবে কি এ মাসে ইজতেমা হচ্ছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই মাসের শেষের দিকে হতে পারে। আমরা চেষ্টা করব একসঙ্গে করার জন্য।’

কওমি আলেমরা বলছেন, বিশ্ব ইজতেমার যে ব্যাপকতা, তার আয়োজন সাদ অনুসারীদের দিয়ে হবে না। এ ছাড়া দেশের বড় আলেম-ওলামাদের কেউ সাদ অনুসারীদের পক্ষে নেই। অন্যদিকে সাদের অনুসারীরা বলছেন, ইজতেমায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা অংশ নেন। সে ক্ষেত্রে তারিখ সুনির্দিষ্ট করে না দিলে তাঁদের অংশ নেওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

তাবলিগ জামাতের মূল মারকাজ (কেন্দ্র) ভারতের দিল্লির নিজামুদ্দিনে। বাংলাদেশ মারকাজ ঢাকার কাকরাইল মসজিদে। বাংলাদেশের ইজতেমাতেই সারা বিশ্বের মুসল্লিরা জমায়েত হন। গত বছর ৮৮টি দেশের ৫ হাজার ২৪ জন বিদেশি মুসল্লি এসেছিলেন। প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমায় লাখো মানুষের সমাগম ঘটে।

টঙ্গীতে ইজতেমা ময়দানের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাবলিগের দুই পক্ষে গত বছরের ১ ডিসেম্বর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তাবলিগের দুই পক্ষ। ওই দিন ময়দানেই সাদের অনুসারী এক মুসল্লি নিহত হন। গুরুতর আহত আরেক মুসল্লি (সাদের অনুসারী) এক মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২ জানুয়ারি মারা যান।

অবশ্য সংঘর্ষের আগেই সাদের অনুসারীরা চলতি জানুয়ারি মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করেছিলেন। আর সাদবিরোধীরা গত বছরের ইজতেমার পরই চলতি মাসের ১৮, ১৯, ২০ এবং ২৫, ২৬, ২৭—এই দুই পর্বে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করেছিলেন।

৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনের পর দুই পক্ষই তাদের পূর্বনির্ধারিত তারিখে ইজতেমা অনুষ্ঠানের জন্য সক্রিয় রয়েছেন। সাদের অনুসারী তাবলিগের শুরা সদস্য ওয়াসিফুল ইসলাম ৩ ডিসেম্বর ইজতেমা আয়োজনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করেন। এর আগের দিন সাদবিরোধী পক্ষের মুরব্বিরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

২ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাদবিরোধী পক্ষের অন্যতম নেতা মোহাম্মদপুর রহমানিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মাহফুজুল হক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নির্ধারিত সময়ে ইজতেমা হবে।’ তিনি বলেন, গত ইজতেমার পরই এ বছরের ইজতেমা অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। এই তারিখই বিশ্বের সবাই জানেন। সাদপন্থীদের ইজতেমার তারিখের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মূল ইজতেমাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই তাঁরা তারিখ ঘোষণা করেছেন।’

এদিকে দিল্লির নিজামুদ্দিন থেকে প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করা হয় বলে জানান সাদের অনুসারী পক্ষের মুরব্বি মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, এবার সেই তারিখ হচ্ছে ১১, ১২ ও ১৩ জানুয়ারি। তবে সরকার যদি চায়, তাহলে তাঁরা তারিখ পেছাতে রাজি আছেন। কিন্তু শিগগিরই এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত চান তাঁরা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর