ঢাকা ০৫:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পবিত্র কুরআনে ঈসা (আ.) এর জন্মের বর্ণনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৫:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮
  • ২৮৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হযরত ঈসা (আ.) এর মাতা হযরত মারইয়াম (আ.) নিজেও ছিলেন এক অলৌকিক শিশু। যখন তিনি জন্মগ্রহণ  করেন, তখন মারইয়াম (আ.) এর মা আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, যাতে তিনি ও তার বংশধররা শয়তানের খপ্পর থেকে নিরাপদ থাকেন। কুরআনে বলা হয়েছে,

فَلَمَّا وَضَعَتْهَا قَالَتْ رَبِّ إِنِّي وَضَعْتُهَا أُنثَىٰ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْ وَلَيْسَ الذَّكَرُ كَالْأُنثَىٰ ۖ وَإِنِّي سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ وَإِنِّي أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

“অতঃপর যখন তাকে প্রসব করলো বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমি এক কন্যা প্রসব করেছি। বস্তুতঃ কি সে প্রসব করেছে আল্লাহ তা ভালই জানেন। সেই কন্যার মত কোন পুত্রই যে নেই। আর আমি তার নাম রাখলাম মারইয়াম। আর আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। অভিশপ্ত শয়তানের কবল থেকে।” (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৩৬)

তাকে হযরত যাকারিয়া (আ.) এর অভিভাবকত্বে আল্লাহর ইবাদত পালনের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন ধার্মিক ও পবিত্র নারী।

হযরত ঈসা (আ.) এর জন্ম কোন সাধারন শিশুর জন্মের মত হয়নি। এটি ছিল সম্পূর্ণরূপে একটি মুজেজা। যখন হযরত মারইয়াম (আ.) আবিষ্কার করলেন তিনি সন্তানসম্ভবা, তিনি উদভ্রান্ত হয়ে পড়লেন। কুরআনে এসেছে,

قَالَتْ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي وَلَدٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ ۖ قَالَ كَذَٰلِكِ اللَّهُ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ إِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ

“তিনি বললেন, হে পরওয়ারদেগার! কেমন করে আমার সন্তান হবে; আমাকে তো কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি। বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যখন কোন কাজ করার জন্য ইচ্ছা করেন তখন বলেন যে, ‘হও’, অমনি তা হয়ে যায়।” (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৪৭)

এরপর, হযরত মারইয়াম (আ.) আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করে সমাজ ত্যাগ করে নির্জনবাস শুরু  করেন। পরবর্তীতে তিনি এক খেজুর গাছের ছায়ায় হযরত ঈসা (আ.) কে জন্ম দেন, যে গাছের ফল থেকে তিনি তার গর্ভকালীন ও ঈসা (আ.) এর জন্ম পরবর্তী সময়ে পুষ্টি গ্রহণ করেন।

যখন তিনি তার সন্তানকে নিয়ে সমাজে ফিরে আসেন, তখন তার বিরুদ্ধে তার লোকেরা বিভিন্ন অপবাদের প্রচার করে। কিন্তু তাতে করে নিরস্ত না হয়ে মারইয়াম (আ.) আল্লাহর উপর বিশ্বাস বজায় রাখেন।

আল্লাহ মারইয়াম (আ.) কে একা ছেড়ে দেননি। পরবর্তীতে প্রদান করা বিভিন্ন মুজিজার মত আল্লাহ হযরত ঈসা (আ.) কে আরও একটি মুজেজা দান করেন। লোকেরা যখন মারইয়াম (আ.) সম্পর্কে বিভিন্ন অপবাদ দিচ্ছিল, তখন শিশু ঈসা (আ.) দোলনা থেকে নিজ কন্ঠে নিজের পরিচয় এবং তার মাতা মারইয়াম (আ.) এর পবিত্রতা ঘোষণা করেন। নবজাতক শিশু হযরত ঈসা (আ.) বক্তব্য কুরআনেও তুলে ধরা হয়েছে,

قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا (30) وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا (31) وَبَرًّا بِوَالِدَتِي وَلَمْ يَجْعَلْنِي جَبَّارًا شَقِيًّا (32) وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا

“সন্তান বলল, আমি তো আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। আর আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে করেছেন বরকতময়। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত আছি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে। এবং জননীর অনুগত থাকতে এবং আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি। আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করবো এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হবো।” (সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৩০-৩৩)

হযরত ঈসা (আ.) এর জন্ম পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম একটি বিস্ময়কর ঘটনা। আল্লাহ যেমন পিতা-মাতা ছাড়াই হযরত আদম (আ.) এবং হযরত হাওয়া (আ.) কে সৃষ্টি করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে তিনি কোন পিতা ছাড়াই হযরত মারইয়াম (আ.) এর গর্ভে হযরত ঈসা (আ.) কে সৃষ্টি করেছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পবিত্র কুরআনে ঈসা (আ.) এর জন্মের বর্ণনা

আপডেট টাইম : ১২:১৫:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হযরত ঈসা (আ.) এর মাতা হযরত মারইয়াম (আ.) নিজেও ছিলেন এক অলৌকিক শিশু। যখন তিনি জন্মগ্রহণ  করেন, তখন মারইয়াম (আ.) এর মা আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, যাতে তিনি ও তার বংশধররা শয়তানের খপ্পর থেকে নিরাপদ থাকেন। কুরআনে বলা হয়েছে,

فَلَمَّا وَضَعَتْهَا قَالَتْ رَبِّ إِنِّي وَضَعْتُهَا أُنثَىٰ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْ وَلَيْسَ الذَّكَرُ كَالْأُنثَىٰ ۖ وَإِنِّي سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ وَإِنِّي أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

“অতঃপর যখন তাকে প্রসব করলো বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমি এক কন্যা প্রসব করেছি। বস্তুতঃ কি সে প্রসব করেছে আল্লাহ তা ভালই জানেন। সেই কন্যার মত কোন পুত্রই যে নেই। আর আমি তার নাম রাখলাম মারইয়াম। আর আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। অভিশপ্ত শয়তানের কবল থেকে।” (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৩৬)

তাকে হযরত যাকারিয়া (আ.) এর অভিভাবকত্বে আল্লাহর ইবাদত পালনের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন ধার্মিক ও পবিত্র নারী।

হযরত ঈসা (আ.) এর জন্ম কোন সাধারন শিশুর জন্মের মত হয়নি। এটি ছিল সম্পূর্ণরূপে একটি মুজেজা। যখন হযরত মারইয়াম (আ.) আবিষ্কার করলেন তিনি সন্তানসম্ভবা, তিনি উদভ্রান্ত হয়ে পড়লেন। কুরআনে এসেছে,

قَالَتْ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي وَلَدٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ ۖ قَالَ كَذَٰلِكِ اللَّهُ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ إِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ

“তিনি বললেন, হে পরওয়ারদেগার! কেমন করে আমার সন্তান হবে; আমাকে তো কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি। বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যখন কোন কাজ করার জন্য ইচ্ছা করেন তখন বলেন যে, ‘হও’, অমনি তা হয়ে যায়।” (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৪৭)

এরপর, হযরত মারইয়াম (আ.) আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করে সমাজ ত্যাগ করে নির্জনবাস শুরু  করেন। পরবর্তীতে তিনি এক খেজুর গাছের ছায়ায় হযরত ঈসা (আ.) কে জন্ম দেন, যে গাছের ফল থেকে তিনি তার গর্ভকালীন ও ঈসা (আ.) এর জন্ম পরবর্তী সময়ে পুষ্টি গ্রহণ করেন।

যখন তিনি তার সন্তানকে নিয়ে সমাজে ফিরে আসেন, তখন তার বিরুদ্ধে তার লোকেরা বিভিন্ন অপবাদের প্রচার করে। কিন্তু তাতে করে নিরস্ত না হয়ে মারইয়াম (আ.) আল্লাহর উপর বিশ্বাস বজায় রাখেন।

আল্লাহ মারইয়াম (আ.) কে একা ছেড়ে দেননি। পরবর্তীতে প্রদান করা বিভিন্ন মুজিজার মত আল্লাহ হযরত ঈসা (আ.) কে আরও একটি মুজেজা দান করেন। লোকেরা যখন মারইয়াম (আ.) সম্পর্কে বিভিন্ন অপবাদ দিচ্ছিল, তখন শিশু ঈসা (আ.) দোলনা থেকে নিজ কন্ঠে নিজের পরিচয় এবং তার মাতা মারইয়াম (আ.) এর পবিত্রতা ঘোষণা করেন। নবজাতক শিশু হযরত ঈসা (আ.) বক্তব্য কুরআনেও তুলে ধরা হয়েছে,

قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا (30) وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا (31) وَبَرًّا بِوَالِدَتِي وَلَمْ يَجْعَلْنِي جَبَّارًا شَقِيًّا (32) وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا

“সন্তান বলল, আমি তো আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। আর আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে করেছেন বরকতময়। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত আছি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে। এবং জননীর অনুগত থাকতে এবং আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি। আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করবো এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হবো।” (সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৩০-৩৩)

হযরত ঈসা (আ.) এর জন্ম পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম একটি বিস্ময়কর ঘটনা। আল্লাহ যেমন পিতা-মাতা ছাড়াই হযরত আদম (আ.) এবং হযরত হাওয়া (আ.) কে সৃষ্টি করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে তিনি কোন পিতা ছাড়াই হযরত মারইয়াম (আ.) এর গর্ভে হযরত ঈসা (আ.) কে সৃষ্টি করেছেন।