ঢাকা ১২:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

শীতের দাপটে ফুটপাথে গরম কাপড় বিক্রির ধুম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৯:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৪ বার
পৌষের শেষ মুহূর্তে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সে সঙ্গে বেড়েছে শীতের কাপড়ের চাহিদাও। তাই দোকানের পাশাপাশি ফুটপাথের অস্থায়ী দোকানগুলোতে জমে উঠেছে শীতের পোশাক বিক্রি। শীতের দাপট থেকে বাঁচতে দিনভর ক্রেতার ভিড় লেগেই থাকে এসব দোকানে।
বিক্রেতারাও বাড়তি চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যান্য সময়ের তুলনায় কাপড়ের বিক্রি বাড়ায় তারা হাসছেন স্বস্তির হাসি। অন্যদিকে ক্রেতারা স্বল্প দামের আশায় ফুটপাথগুলোতে ভিড় জমান মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ। কারণ শীতের জামা-কাপড় কিনতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে কষ্ট হয় তাদের।
ফলে এসব সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা রাজধানীর ফুটপাথের দোকান। কারণ এসব দোকানে স্বল্পমূল্যে ভালো মানের শীতবস্ত্র পাওয়া যায়। হঠাৎ শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে ফুটপাথগুলোতে শীতবস্ত্র বিক্রির ধুম পড়েছে। এতে করে ক্রেতারা যেমন কম দামে কিনতে পেরে খুশি, অন্যদিকে বাড়তি আয় করতে পারায় সন্তুষ্ট বলে জানান বিক্রেতারাও।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর গুলিস্তান, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকার ফুটপাথের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। প্রতিটি দোকানেই বেচা-বিক্রি লক্ষ্য করা যায়। কিছু দোকানে কাপড়ের দাম টাঙিয়ে দেওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষির ঝামেলা নেই। তাই খুব সহজে প্রত্যেকে নিজের পছন্দমতো কাপড় কিনতে পারছেন। মার্কেটের চেয়ে কম দামে কিনতে পারায় খুশি লোকজন। অধিকাংশ দোকানের সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ পর্যন্ত ছিল না। তবে বিদেশি পুরোনো শীতবস্ত্রের দোকানে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসব দোকানে হুডি, সোয়েটার, টাইস, জ্যাকেট, বাচ্চাদের কানটুপি, মেয়েদের কার্ডিগান, মাফলার, মোজা, ট্রাউজার, ফুলহাতা গেঞ্জি, চাদর, শিশুদের জন্য জাম্পার ও কাপড়ের জুতা কিনতে দেখা যায় ক্রেতাদের।
ফুটপাথ ছাড়াও নিউমার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান প্লাজা, গ্লোব সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, হকার্স মাকের্ট ও বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেটে ছিল ক্রেতাদের ভিড়। এসব মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষি যেমন হচ্ছে, বিক্রিও হচ্ছে সে রকম। মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাপড়ের মান অনুযায়ী ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। তবে ২৫০ থেকে ৭০০ টাকা দামের শীতবস্ত্রের চাহিদা বেশি দেখা গেছে।
ফুটপাথের হকাররা জানান, হঠাৎ করে বেশি শীত অনুভূত হওয়ায় গরম কাপড়ের চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। এতে করে ব্যবসায়ীদেরও বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। শীতের বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাইকারদের কাছ থেকে কিনে রাস্তায় বিক্রি করেন। দাম কম হওয়ায় ক্রেতারাও কিনে নেন। তা ছাড়া শীত যত বাড়বে কাপড়ের চাহিদাও বাড়তে থাকবে। এবারের শীত মৌসুমে হকাররা একেকজন লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে জানান তারা। গত কয়েক দিন অন্যান্য অঞ্চলের মতো ঢাকায়ও শীত বেড়েছে। তাই আগে একটু পাতলা কাপড় হলেও চলত। কিন্তু এখন মোটা কাপড় ছাড়া চলা কষ্টকর। এ জন্য মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা বেশি। বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। এবার শীতে বিগত বছরের চেয়ে বেশি ক্রেতা দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের সবচেয়ে ভরসার জায়গা হচ্ছে ফুটপাথ শীতবস্ত্রের দোকান। তা ছাড়া ফুটপাথ না থাকলে নিম্নআয়ের মানুষ শীতের দাপটে ঠিক থাকতে পারত না। নতুন কাপড়ের চেয়ে পুরোনো কাপড় বেশি গরম এবং দাম অনেক কম বলেও জানান তারা।
নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাথের বিক্রেতা রুবেল হোসেন বলেন, আমাদের দোকান ভাড়া দিতে হয় না তাই স্বল্প লাভে বিক্রি করতে পারছি। আর সাধারণ মানুষও আমাদের কাছ থেকে কম দামে শীতের কাপড় কিনতে পারছেন। তবে গত কয়েক দিন ধরে ক্রেতাদের অনেক চাপ হচ্ছে। আর আমাদের বিক্রিও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। তাই তুলনামূলকভাবে বিক্রি বেশি হওয়ায় কম লাভে কাপড় বিক্রি করে দিই। আমরা বান্ডিল আকারে মালামাল কিনে থাকি। প্রতিটি বান্ডিল ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে কিনলে প্রতি বান্ডিল কাপড় বিক্রি করে দুই থেকে তিন হাজার টাকা লাভ করা যায়।
রাজধানীর কলাবাগান থেকে হুডি কিনতে নিউমার্কেটে এসেছেন সাজিদ বিন আলম। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শীতে নতুন হুডি কিনতে নিউমার্কেটে এসেছি। কারণ এখানে স্বল্পমূল্যে ভালো মানের কাপড় কেনা যায়। ফুটপাথে শীতের কাপড়ের দাম তুলনামূলকভাবে কম এবং দেখে-শুনে কেনা যায় তাই এসেছি। তা ছাড়া ফুটপাথে বিদেশি বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাওয়া যায়। তবে এখানে সবসময়ই হকার ও মানুষে পরিপূর্ণ থাকে ফলে কেনা তো দূরের কথা ঠিকমতো হাঁটতেও কষ্ট হয়। প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের ভিড় থাকায় হকাররাও সামলাতে পারছে না।
নিজের জন্য চাদর কিনতে নিউমার্কেটে আসেন ফাতেমা তাবাসসুম। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন ধরে শীত বেশি থাকায় একটি চাদর কিনতে মার্কেটে এসেছি। কিন্তু প্রতিটি দোকানে প্রচণ্ড ভিড় থাকায় চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছিল। তারপরও কিছুটা ঘুরে একটি দোকান থেকে পছন্দমতো চাদর কিনেছি। দাম মোটামুটি ঠিক ছিল। তবে ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাপ থাকায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে কিছু বেশি সময় লাগছে কিনতে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একসাথে সাকিব-তামিম

শীতের দাপটে ফুটপাথে গরম কাপড় বিক্রির ধুম

আপডেট টাইম : ১১:৪৯:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
পৌষের শেষ মুহূর্তে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সে সঙ্গে বেড়েছে শীতের কাপড়ের চাহিদাও। তাই দোকানের পাশাপাশি ফুটপাথের অস্থায়ী দোকানগুলোতে জমে উঠেছে শীতের পোশাক বিক্রি। শীতের দাপট থেকে বাঁচতে দিনভর ক্রেতার ভিড় লেগেই থাকে এসব দোকানে।
বিক্রেতারাও বাড়তি চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যান্য সময়ের তুলনায় কাপড়ের বিক্রি বাড়ায় তারা হাসছেন স্বস্তির হাসি। অন্যদিকে ক্রেতারা স্বল্প দামের আশায় ফুটপাথগুলোতে ভিড় জমান মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ। কারণ শীতের জামা-কাপড় কিনতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে কষ্ট হয় তাদের।
ফলে এসব সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা রাজধানীর ফুটপাথের দোকান। কারণ এসব দোকানে স্বল্পমূল্যে ভালো মানের শীতবস্ত্র পাওয়া যায়। হঠাৎ শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে ফুটপাথগুলোতে শীতবস্ত্র বিক্রির ধুম পড়েছে। এতে করে ক্রেতারা যেমন কম দামে কিনতে পেরে খুশি, অন্যদিকে বাড়তি আয় করতে পারায় সন্তুষ্ট বলে জানান বিক্রেতারাও।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর গুলিস্তান, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকার ফুটপাথের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। প্রতিটি দোকানেই বেচা-বিক্রি লক্ষ্য করা যায়। কিছু দোকানে কাপড়ের দাম টাঙিয়ে দেওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষির ঝামেলা নেই। তাই খুব সহজে প্রত্যেকে নিজের পছন্দমতো কাপড় কিনতে পারছেন। মার্কেটের চেয়ে কম দামে কিনতে পারায় খুশি লোকজন। অধিকাংশ দোকানের সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ পর্যন্ত ছিল না। তবে বিদেশি পুরোনো শীতবস্ত্রের দোকানে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসব দোকানে হুডি, সোয়েটার, টাইস, জ্যাকেট, বাচ্চাদের কানটুপি, মেয়েদের কার্ডিগান, মাফলার, মোজা, ট্রাউজার, ফুলহাতা গেঞ্জি, চাদর, শিশুদের জন্য জাম্পার ও কাপড়ের জুতা কিনতে দেখা যায় ক্রেতাদের।
ফুটপাথ ছাড়াও নিউমার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান প্লাজা, গ্লোব সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, হকার্স মাকের্ট ও বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেটে ছিল ক্রেতাদের ভিড়। এসব মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষি যেমন হচ্ছে, বিক্রিও হচ্ছে সে রকম। মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাপড়ের মান অনুযায়ী ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। তবে ২৫০ থেকে ৭০০ টাকা দামের শীতবস্ত্রের চাহিদা বেশি দেখা গেছে।
ফুটপাথের হকাররা জানান, হঠাৎ করে বেশি শীত অনুভূত হওয়ায় গরম কাপড়ের চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। এতে করে ব্যবসায়ীদেরও বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। শীতের বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাইকারদের কাছ থেকে কিনে রাস্তায় বিক্রি করেন। দাম কম হওয়ায় ক্রেতারাও কিনে নেন। তা ছাড়া শীত যত বাড়বে কাপড়ের চাহিদাও বাড়তে থাকবে। এবারের শীত মৌসুমে হকাররা একেকজন লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে জানান তারা। গত কয়েক দিন অন্যান্য অঞ্চলের মতো ঢাকায়ও শীত বেড়েছে। তাই আগে একটু পাতলা কাপড় হলেও চলত। কিন্তু এখন মোটা কাপড় ছাড়া চলা কষ্টকর। এ জন্য মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা বেশি। বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। এবার শীতে বিগত বছরের চেয়ে বেশি ক্রেতা দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের সবচেয়ে ভরসার জায়গা হচ্ছে ফুটপাথ শীতবস্ত্রের দোকান। তা ছাড়া ফুটপাথ না থাকলে নিম্নআয়ের মানুষ শীতের দাপটে ঠিক থাকতে পারত না। নতুন কাপড়ের চেয়ে পুরোনো কাপড় বেশি গরম এবং দাম অনেক কম বলেও জানান তারা।
নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাথের বিক্রেতা রুবেল হোসেন বলেন, আমাদের দোকান ভাড়া দিতে হয় না তাই স্বল্প লাভে বিক্রি করতে পারছি। আর সাধারণ মানুষও আমাদের কাছ থেকে কম দামে শীতের কাপড় কিনতে পারছেন। তবে গত কয়েক দিন ধরে ক্রেতাদের অনেক চাপ হচ্ছে। আর আমাদের বিক্রিও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। তাই তুলনামূলকভাবে বিক্রি বেশি হওয়ায় কম লাভে কাপড় বিক্রি করে দিই। আমরা বান্ডিল আকারে মালামাল কিনে থাকি। প্রতিটি বান্ডিল ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে কিনলে প্রতি বান্ডিল কাপড় বিক্রি করে দুই থেকে তিন হাজার টাকা লাভ করা যায়।
রাজধানীর কলাবাগান থেকে হুডি কিনতে নিউমার্কেটে এসেছেন সাজিদ বিন আলম। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শীতে নতুন হুডি কিনতে নিউমার্কেটে এসেছি। কারণ এখানে স্বল্পমূল্যে ভালো মানের কাপড় কেনা যায়। ফুটপাথে শীতের কাপড়ের দাম তুলনামূলকভাবে কম এবং দেখে-শুনে কেনা যায় তাই এসেছি। তা ছাড়া ফুটপাথে বিদেশি বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাওয়া যায়। তবে এখানে সবসময়ই হকার ও মানুষে পরিপূর্ণ থাকে ফলে কেনা তো দূরের কথা ঠিকমতো হাঁটতেও কষ্ট হয়। প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের ভিড় থাকায় হকাররাও সামলাতে পারছে না।
নিজের জন্য চাদর কিনতে নিউমার্কেটে আসেন ফাতেমা তাবাসসুম। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন ধরে শীত বেশি থাকায় একটি চাদর কিনতে মার্কেটে এসেছি। কিন্তু প্রতিটি দোকানে প্রচণ্ড ভিড় থাকায় চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছিল। তারপরও কিছুটা ঘুরে একটি দোকান থেকে পছন্দমতো চাদর কিনেছি। দাম মোটামুটি ঠিক ছিল। তবে ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাপ থাকায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে কিছু বেশি সময় লাগছে কিনতে।