রাজবাড়ীর কালুখালীতে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ঠেকাতে স্বেচ্ছায় রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন এলাকাবাসী। এতে করে গ্রামের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
স্থানীয়রা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কালুখালী উপজেলা মাজবাড়ী ইউনিয়নের বাগগাড়ী গ্রামে চুরি-ডাকাতি বেড়ে যায়। এসব অপরাধ ঠেকাতে গ্রামের যুবকরা একত্রিত হয়ে পাহাড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। ‘আপনি ঘুমান, আমরা গ্রাম পাহারা দেব’ স্লোগানে তারা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন।
গ্রামবাসী শিমুল মোল্লাজানান, গত কয়েক মাসে দোকান ও বাসা-বাড়ির মালামাল, অটোভ্যান, দুটি ছাগল, দুই বাড়ি থেকে বস্তা ভর্তি পেঁয়াজ, সাইকেল ও গরুচুরিসহ অর্ধশতাধিক ঘটনা ঘটেছে। এতে দিন দিন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। প্রতি রাতে চুরি-ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটছে।
উপজেলার বাগগাড়ী গ্রামের মো. বাচ্চু খান ও মিজানের বাড়ি থেকে পেঁয়াজ চুরি হয়। এদিকে বেশ কিছুদিন আগে আলাউদ্দিনের একটি গরু চুরি হয়। গৌছেল আজম ও আবদুর ছালাম মন্ডলের দোকান ঘরে টিন কেটে ভিতরে ঢুকে ড্রয়ার থেকে নগদ টাকা ও সিগারেট, চাউল ও মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয়রা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদারকি ও টহল বাড়িয়ে দিলে এমন চুরির ঘটনা কমে আসবে। তা না হলে সাধারণ মানুষ মূল্যবান সম্পদ ও আয়ের উৎস হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়বে।
গ্রাম পাহারা দেওয়া যুবক রাসেল মোল্লা জানান, প্রতিদিন চোরের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। যানমালের রক্ষায় নিজেরা রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছি।
তুশার মোল্লা নামের আরেক যুবক বলেন, ‘প্রতি রাতে কোনো না কোনো বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল, সোনা, টাকা ও গরু চুরি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনের পর দিন অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামের লোকজন যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারে সেজন্য আমরা শতাধিক যুবক পাহারা দিচ্ছি।’
টুটুল মোল্লা নামের গ্রাম পাহারা দেওয়া এক যুবক বলেন, ‘আমি খুব কষ্ট দুটি খাশি পুষেছিলাম। রাতের আঁধারে খাশি দুটি জবাই করে গোশ নিয়ে যায় আর মাঠের মধ্যে চামড়া, মাথা, পা রেখে যায়। তাই বাধ্য হয়েই চুরি ঠেকাতে নিজেরাই পাহারা দিচ্ছি নিজেদের গ্রাম।’
স্থানীয় যুবক চাঁদ আলী মোল্লা জানান, গ্রামে চুরিরোধে রাত জেগে গ্রাম পাহারা দেওয়ার পর ১০ দিন কোনো বাড়িতে চুরি হয়নি। গ্রামের সবাইকে নিয়ে এ ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করে পর্যায়ক্রমে গ্রামে পাহারা অব্যাহত থাকবে।
ডাক্তার শাহিন পরামানিক বলেন, ‘গ্রামে তিনটি পাড়া প্রত্যেক পাড়ায় ৬ জন করে যুবক মোট ১৮ জন রাত এগারোটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত পাহারা দিচ্ছেন।’
মনিরুজ্জামান (মটন) বলেন, ‘চুরি বন্ধে গ্রামের ছেলেরা যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে আমি খুশি। আমি গ্রামের মধ্যে ও আশপাশের বিভিন্ন মসজিদে চুরির ব্যাপারে সবাইকে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচারণা চালাতে বলেছি।’
পাহারা প্রসঙ্গে কালুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘এটি একটা ভাল কাজ। এ ব্যাপারে প্রথম দিনে আমি মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। গ্রামের সবাই মিলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটার পক্ষেই তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে আইনি সহায়তা করা হবে।’