বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা নিতে লন্ডন যাচ্ছেন। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইট নং (Type:A-319,Reg: A7-MED or SUB, Flight Number:A7-MED) যোগে ঢাকা থেকে কাতারের দোহার উদ্দেশে রওনা করবেন। সেখান থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা করবেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে ৭ চিকিৎসকসহ ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল লন্ডন যাবেন। সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডা. মো. এনামুল হক চৌধুরী, তাবিথ আউয়াল, ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিক, মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, নুর উদ্দিন আহমদ, মো. জাকির ইকবাল, মোহাম্মদ আল মামুন, শরিফা করিম স্বর্ণা, চেয়ারপারসনের একান্ত সহকারী এবিএম আবদুস সাত্তার, সহকারী ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা এসএম পারভেজ, গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম এবং রুপা শিকদার। খালেদা জিয়ার দলীয় চিকিৎসক বোর্ড ও শাহজালাল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা জানিয়েছেন, ম্যাডাম এখন ভালো আছেন। তিনি বিদেশে সফর করার জন্য ফিট আছেন। এটাই উপযুক্ত সময়। খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী, তার একান্ত সহকারী এবিএম আবদুস সাত্তার সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি ৭ জানুয়ারি ঘিরে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ম্যাডাম মঙ্গলবার যেকোনো সময় লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সফরসঙ্গী হিসেবে ম্যাডামের সঙ্গে আমরা মোট ১৫ জন যাচ্ছি। ওনাকে প্রথমে লন্ডন, তারপর যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হতে পারে। সবকিছু নির্ভর করছে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ও মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গী ড. এনামুল হক চৌধুরীও সময়ের আলোকে একই তথ্য জানান। তিনি বলেন, সফরঙ্গী সবার ভিসা ও অন্য সব প্রক্রিয়া শেষ। তারপরও এখানে অনেক বিষয় থাকে। চূড়ান্ত বলা যাবে যেদিন যাবেন তার আগের দিন।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সবমিলিয়ে আমাদের ১৫-১৬ জনের একটি টিম লন্ডনে যাওয়ার কথা। তাদের পাসপোর্টসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। তিনি আরও জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে তিনটি দেশে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। প্রথমে লন্ডন, পরে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় যেতে হতে পারে। এ ছাড়াও সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করবেন খালেদা জিয়া। সবমিলিয়ে প্রায় ১ মাস বিদেশে অবস্থান করবেন তিনি। এ জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওমরাহ করতে পারে বলে জানা গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার মায়ের সঙ্গে দেশে ফিরতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। যদিও বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেননি ওই চিকিৎসক।
বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাল্টি ডিসিপ্লানারি সেন্টারে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছে।
গত ২৭ নভেম্বর খালেদা জিয়া আমেরিকার ভিসার জন্য দেশটির ঢাকার দূতাবাসে যান। সেখানে ভিসার জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে আসেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই সর্বশেষ যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি। সেই সময় খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যের ডা. হ্যাডলি ব্যারির চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসন্ন তার এই সফরকে নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে। এই সফরে ভিআইপি প্রটোকল পাবেন খালেদা জিয়া। ইতিমধ্যে বিএনপির তরফ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে খালেদা জিয়ার জন্য। দলের হয়ে যারা নেত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের জন্য ওয়ারলেস সেট কেনা এবং সেগুলো ব্যবহারের জন্য পৃথক বেতার তরঙ্গ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির জানান, নিরাপত্তার এ বিষয়গুলো গতানুগতিক।