উন্নত চিকিৎসায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী ৭ জানুয়ারি বিদেশ যেতে পারেন। তবে এ তারিখ চূড়ান্ত নয়। কিছু আনুষ্ঠানিকতা এখনও বাকি। সেনাপ্রধানও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও বিদেশ যাত্রার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড ও দলের পক্ষ থেকে আজ বিদেশযাত্রার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। শুক্রবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গী ড. এনামুল হক সময়ের আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, শেষদিকের কিছু কাজ বাকি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৭ জানুয়ারি ম্যাডাম ঢাকা ত্যাগ করবেন। তবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে শনিবার জানানো হতে পারে।
খালেদা জিয়া প্রথমে লন্ডনে যাবেন জানিয়ে সময়ের আলোকে মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, মঙ্গলবার যাচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে শতভাগ বলা যাবে না।
কী কারণে তারিখ পরিবর্তন হচ্ছে?
জবাবে এই চিকিৎসক বলেন, এটা ঠিক আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এখানে নানা কারণ থাকতে পারে। এটা দল ও পরিবার বলতে পারবে। মেডিকেল বোর্ড এখন খালেদা জিয়াকে ফিট মনে করছে বিদেশ গমনে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের ১৫-১৬ জনের একটি টিম লন্ডনে যাওয়ার কথা। তাদের পাসপোর্টসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।
অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বাসায় সাক্ষাৎ করেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। মেডিকেল বোর্ডের ওই সদস্য জানান, বিদেশযাত্রার সবশেষ খোঁজখবর নিতে খালেদা জিয়ার বাসায় যান সেনাপ্রধান। সেখানে ওনার সহধর্মিণীও ছিলেন। তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়ে ওয়াকিবহাল হয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার আলাপচারিতায় ম্যাডাম ধন্যবাদ জানিয়েছেন সেনাপ্রধানকে। বিশেষ করে গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনায় সম্মানিত করেছেন। এ ছাড়া সেনাপ্রধান গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যৌক্তিক ভূমিকা রেখেছেন। এসব কারণে ম্যাডাম ধন্যবাদ জানিয়েছেন সেনাপ্রধানকে।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহি আকবর, বিশেষ সহকারী আবদুস সাত্তার ও বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে শিমুল বিশ্বাস বলেন, আমরা উপস্থিত ছিলাম তবে বৈঠকের সময় ভেতরে থাকিনি।
মেডিকেল বোর্ডের আরেক সদস্য জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে তিনটি দেশে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। প্রথমে লন্ডন পরে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় যেতে হতে পারে। এ ছাড়া সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করবেন খালেদা জিয়া। সব মিলিয়ে প্রায় এক মাস বিদেশ অবস্থান করবেন তিনি। এ জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওমরাহ করতে পারেন বলে জানা গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার মায়ের সঙ্গে দেশে ফিরতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। যদিও এ তথ্যের সত্যতা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেননি এই চিকিৎসক।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ম্যাডামের বিদেশ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। মেডিকেল বোর্ড উন্নত চিকিৎসার জন্য মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছে।
গত ২৭ নভেম্বর খালেদা জিয়া আমেরিকার ভিসার জন্য দেশটির ঢাকার দূতাবাসে যান। সেখানে ভিসার জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে আসেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই সর্বশেষ যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি। সেই সময় খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যের ডা. হ্যাডলি ব্যারির চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে বিএনপির তরফ থাকে বাড়তি নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে খালেদা জিয়ার জন্য। দলের হয়ে যারা নেত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের জন্য ওয়ারলেস সেট কেনা এবং সেগুলো ব্যবহারের জন্য পৃথক বেতার তরঙ্গ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।
খালেজা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আবদুস সাত্তার জানিয়েছেন, তারা প্রথমে বাংলাদেশ টেলি নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন বিএনপির নামে পৃথক বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ করতে। যাতে প্রশাসনের পাশাপাশি দলও নেত্রীর নিরাপত্তার দিকে নজরদারি চালাতে পারে। বাড়তি নিরাপত্তা বরাদ্দ করাও দলের উদ্দেশ্য।
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত থাকলেও এবার সরকার পতনের একদিন পর সাজা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পান। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দণ্ড মওকুফ করেন। মুক্তির পর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। তিনি তখন পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতায় খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা জিয়া। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল শেখ হাসিনার সরকার। প্রতিবারই তাকে দুটি শর্ত দেওয়া হচ্ছিল। তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও ওই শর্তের যুক্তি দিয়েই বারবার তা প্রত্যাখ্যান করেছে শেখ হাসিনার সরকার।