ঢাকা ১১:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

বন্ধ হচ্ছে একের পর এক শিল্প-কারখানা, ৪২ মাসে সর্বনিম্ন ঋণ প্রবৃদ্ধি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৬:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৭ বার
তৈরি পোশাক খাতের ১০০টির বেশি কারখানা গত ছয় মাসে বন্ধ হয়েছে। কয়েক মাসে ১০টির মতো টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়েছে। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ৮৩টি কম্পানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া সিমেন্ট, ইস্পাত ও কাগজশিল্পের অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে।

জানা গেছে,  আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাজার মূল্যের অস্থিতিশীলতা, সুদহার বৃদ্ধি, ঋণপত্র খোলার (এলসি) অভাবে কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা, শ্রমিক অসন্তোষ ও কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের অপ্রতুলতার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

একের পর এক শিল্প-কারখানা বন্ধের প্রভাব পড়েছে বিনিয়োগে। নতুন করে বিনিয়োগের সাহস পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে বিনিয়োগ।

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৪২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় এসেছে। ঊর্ধ্বমুখী সুদহারে নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন না হওয়ায় কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি।বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে কর্মসংস্থান ও কর আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।

জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি চারটি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেয়া গ্রুপ।

আগের মাস ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দুটি গ্রুপের ২৪টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর একইভাবে বিপুলসংখ্যক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা বেসরকারি খাতের ঋণের পরিসংখ্যান বলছে, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি আর অর্থনীতিতে ধীরগতির কারণে বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণের নিম্নমুখী প্রবণতা আগে থেকেই ছিল, যা আরো কমে ৪২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় পৌঁছেছে।

২০২৪ সালের নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি বার্ষিক ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা অক্টোবর মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম অর্ধাংশের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯ দশমিক ৮০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ কম।

এর আগে, ২০২১ সালের মে মাসে কভিড মহামারির মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল। মূলত জুলাই-আগস্টে আন্দোলন শুরুর পর থেকে এ খাতে প্রবৃদ্ধি আরো কমতে থাকে। গত জুলাইয়ে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও সরকার পতনের মাসে (আগস্ট) তা নামে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে। পরের মাস সেপ্টেম্বরে তা আরো কমে হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ; যেটি ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। নিম্নমুখী এ হার পরের মাসে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে।

একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, চলমান অনিশ্চয়তা এবং উচ্চ সুদের হার সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন ঋণের চাহিদা, বিশেষ করে মেয়াদি ঋণের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ১৪ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ সুদের হারে বিভিন্ন ঋণ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মেয়াদি ঋণ এবং বাণিজ্যিক অর্থায়নের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় আমদানি এখনো কম রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীরা বর্তমান আর্থিক ঝুঁকি এড়াতে নতুন বিনিয়োগ করার জন্য অপেক্ষা করছেন। বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অপরিবর্তিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২১ দশমিক ৯০ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে আমদানি হয়েছে ৮৬ কোটি ডলারের। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ১১১ কোটি ডলার। ৯ শতাংশ ঋণের সুদ এখন ১৫ শতাংশের বেশি।

একইভাবে কমেছে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বিনিয়োগ এসেছে ১৪৭ কোটি ডলার। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৬১ কোটি ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। বেড়েছে বেকারত্ব। ২০২৩ সালের জুনে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ। চলতি বছরের জুনে বেকারত্বের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৪০ হাজারে।

এ বিষয়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বেশির ভাগ ব্যাংক এখন নতুন ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে একটি রক্ষণশীল মনোভাব গ্রহণ করছে, যাতে ঋণ শ্রেণীকরণের নতুন ঝুঁকি না বাড়ে এই ধীরগতির আর্থিক পরিস্থিতিতে।

এ পদ্ধতির অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলো এখন ঋণ অনুমোদনের আগে যথাযথ জামানত নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। এদিকে এলসি নিষ্পত্তির মাধ্যমে প্রকৃত আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ে ২৮ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ০ দশমিক ৮৩ শতাংশ কমে ২৭ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একসাথে সাকিব-তামিম

বন্ধ হচ্ছে একের পর এক শিল্প-কারখানা, ৪২ মাসে সর্বনিম্ন ঋণ প্রবৃদ্ধি

আপডেট টাইম : ১১:১৬:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
তৈরি পোশাক খাতের ১০০টির বেশি কারখানা গত ছয় মাসে বন্ধ হয়েছে। কয়েক মাসে ১০টির মতো টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়েছে। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ৮৩টি কম্পানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া সিমেন্ট, ইস্পাত ও কাগজশিল্পের অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে।

জানা গেছে,  আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাজার মূল্যের অস্থিতিশীলতা, সুদহার বৃদ্ধি, ঋণপত্র খোলার (এলসি) অভাবে কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা, শ্রমিক অসন্তোষ ও কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের অপ্রতুলতার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

একের পর এক শিল্প-কারখানা বন্ধের প্রভাব পড়েছে বিনিয়োগে। নতুন করে বিনিয়োগের সাহস পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে বিনিয়োগ।

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৪২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় এসেছে। ঊর্ধ্বমুখী সুদহারে নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন না হওয়ায় কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি।বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে কর্মসংস্থান ও কর আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।

জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি চারটি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেয়া গ্রুপ।

আগের মাস ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দুটি গ্রুপের ২৪টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর একইভাবে বিপুলসংখ্যক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা বেসরকারি খাতের ঋণের পরিসংখ্যান বলছে, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি আর অর্থনীতিতে ধীরগতির কারণে বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণের নিম্নমুখী প্রবণতা আগে থেকেই ছিল, যা আরো কমে ৪২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় পৌঁছেছে।

২০২৪ সালের নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি বার্ষিক ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা অক্টোবর মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম অর্ধাংশের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯ দশমিক ৮০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ কম।

এর আগে, ২০২১ সালের মে মাসে কভিড মহামারির মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল। মূলত জুলাই-আগস্টে আন্দোলন শুরুর পর থেকে এ খাতে প্রবৃদ্ধি আরো কমতে থাকে। গত জুলাইয়ে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও সরকার পতনের মাসে (আগস্ট) তা নামে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে। পরের মাস সেপ্টেম্বরে তা আরো কমে হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ; যেটি ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। নিম্নমুখী এ হার পরের মাসে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে।

একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, চলমান অনিশ্চয়তা এবং উচ্চ সুদের হার সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন ঋণের চাহিদা, বিশেষ করে মেয়াদি ঋণের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ১৪ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ সুদের হারে বিভিন্ন ঋণ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মেয়াদি ঋণ এবং বাণিজ্যিক অর্থায়নের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় আমদানি এখনো কম রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীরা বর্তমান আর্থিক ঝুঁকি এড়াতে নতুন বিনিয়োগ করার জন্য অপেক্ষা করছেন। বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অপরিবর্তিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২১ দশমিক ৯০ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে আমদানি হয়েছে ৮৬ কোটি ডলারের। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ১১১ কোটি ডলার। ৯ শতাংশ ঋণের সুদ এখন ১৫ শতাংশের বেশি।

একইভাবে কমেছে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বিনিয়োগ এসেছে ১৪৭ কোটি ডলার। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৬১ কোটি ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। বেড়েছে বেকারত্ব। ২০২৩ সালের জুনে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ। চলতি বছরের জুনে বেকারত্বের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৪০ হাজারে।

এ বিষয়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বেশির ভাগ ব্যাংক এখন নতুন ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে একটি রক্ষণশীল মনোভাব গ্রহণ করছে, যাতে ঋণ শ্রেণীকরণের নতুন ঝুঁকি না বাড়ে এই ধীরগতির আর্থিক পরিস্থিতিতে।

এ পদ্ধতির অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলো এখন ঋণ অনুমোদনের আগে যথাযথ জামানত নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। এদিকে এলসি নিষ্পত্তির মাধ্যমে প্রকৃত আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ে ২৮ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ০ দশমিক ৮৩ শতাংশ কমে ২৭ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।