একের পর এক শিল্প-কারখানা বন্ধের প্রভাব পড়েছে বিনিয়োগে। নতুন করে বিনিয়োগের সাহস পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে বিনিয়োগ।
জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি চারটি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেয়া গ্রুপ।
২০২৪ সালের নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি বার্ষিক ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা অক্টোবর মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম অর্ধাংশের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯ দশমিক ৮০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ কম।
একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, চলমান অনিশ্চয়তা এবং উচ্চ সুদের হার সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন ঋণের চাহিদা, বিশেষ করে মেয়াদি ঋণের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ১৪ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ সুদের হারে বিভিন্ন ঋণ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মেয়াদি ঋণ এবং বাণিজ্যিক অর্থায়নের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় আমদানি এখনো কম রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীরা বর্তমান আর্থিক ঝুঁকি এড়াতে নতুন বিনিয়োগ করার জন্য অপেক্ষা করছেন। বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অপরিবর্তিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২১ দশমিক ৯০ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে আমদানি হয়েছে ৮৬ কোটি ডলারের। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ১১১ কোটি ডলার। ৯ শতাংশ ঋণের সুদ এখন ১৫ শতাংশের বেশি।
একইভাবে কমেছে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বিনিয়োগ এসেছে ১৪৭ কোটি ডলার। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৬১ কোটি ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। বেড়েছে বেকারত্ব। ২০২৩ সালের জুনে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ। চলতি বছরের জুনে বেকারত্বের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৪০ হাজারে।
এ বিষয়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বেশির ভাগ ব্যাংক এখন নতুন ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে একটি রক্ষণশীল মনোভাব গ্রহণ করছে, যাতে ঋণ শ্রেণীকরণের নতুন ঝুঁকি না বাড়ে এই ধীরগতির আর্থিক পরিস্থিতিতে।
এ পদ্ধতির অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলো এখন ঋণ অনুমোদনের আগে যথাযথ জামানত নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। এদিকে এলসি নিষ্পত্তির মাধ্যমে প্রকৃত আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ে ২৮ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ০ দশমিক ৮৩ শতাংশ কমে ২৭ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।