ঢাকা ০৮:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাননি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:১৬:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮
  • ৩২৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভাঙাচোরা টিনের দোচালা ঘর। ঘরের বারান্দায় চটের ওপর শুয়ে রোগযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ (৬৫)। গত শুক্রবার কাছে গিয়ে ডাক দিতেই সাড়া মিললেও উঠে বসার সক্ষমতা নেই তাঁর। পাঁচ মাস আগে স্ট্রোকে শরীরের বাঁ পাশ অসাড় হয়ে গেছে। তিনি শয্যাশায়ী। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতিও পাননি।

আব্দুস সামাদ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের বোধখানা গ্রামের বাওড়পাড়ার মৃত সুরত আলীর ছেলে। দেশকে পরাধীনতার গ্লানিমুক্ত করতে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যান তিনি। ৯ মাস যুদ্ধ শেষে মাতৃভূমি স্বাধীন হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও সামাদ মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাননি। তিনি জানান, গণপরিষদ সদস্য মরহুম আবুল ইসলাম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে তাঁকে (সামাদ) নিয়ে চাপাবাড়িয়া ট্রেনিং ক্যাম্পে ১৯৭১ সালে ১০ অক্টোবর ভর্তি করে দেন।

ক্যাম্পের যুবশিবির নিয়ন্ত্রণ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মাদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত সনদ অনুযায়ী আব্দুস সামাদের পরিচয়পত্র নম্বর ৩৮২৪২। ব্যারাকপুর ইয়ুথ ক্যাম্পের ডেপুটি ক্যাম্প ইনচার্জ আমির আলী (মেজর) স্বাক্ষরিত সনদ অনুযায়ী তাঁর মুক্তিবার্তা (লাল বই) নম্বর ০৪০৫৬০১৮৫। বয়রা ক্যাম্পে তিনি ক্যাপ্টেন হুদার তত্ত্বাবধানেও প্রশিক্ষণ নেন। এসব ক্যাম্পে দুই মাস প্রশিক্ষণ শেষে ঝিকরগাছার ছুটিপুর, গোয়ালহাটি, হাজিরআলী, শার্শার কাশিপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। গোয়ালহাটিতে সম্মুখযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শহীদ হন। তাঁর লাশ কাঁধে করে আব্দুস সামাদরা শার্শার কাশিপুরে নিয়ে যান।

আব্দুস সামাদ অভিযোগ করেন, তাঁকে তালিকাভুক্ত করতে ঝিকরগাছা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক এক ডেপুটি কমান্ডার ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু টাকা না দিতে পারায় তালিকায় তাঁর নাম ওঠেনি। পরে কয়েকজন বেশ কিছু টাকা নিয়েছেন তাঁর নাম তালিকাভুক্তির কথা বলে।

সারাজীবন ভ্যানগাড়ির প্যাডেলে ভর দিয়ে জীবনের চাকা সচল রাখলেও এখন কান্নাই আব্দুস সামাদের সঙ্গী। বছর চারেক আগে তাঁর স্ট্রোক হলে শেষ সম্বল বসতভিটা বেচে চিকিৎসা নেন। একটু সুস্থ হলে তিনি আবার ভ্যান চালানো শুরু করেন। কিন্তু পাঁচ মাস আগে ব্রেন স্ট্রোকে শরীরের বাঁ পাশ অচল হয়ে গেছে। আব্দুস সামাদের স্ত্রী মালেকা খাতুন জানান, দিনমজুর দুই ছেলে তাঁদের ভরণ-পোষণ দিলেও চিকিৎসার ব্যয় বহন করার মতো সামর্থ্য নেই।

মুক্তিযোদ্ধা ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘আমি ও আব্দুস সামাদ একসঙ্গে ট্রেনিং ও যুদ্ধ করেছি। তার তালিকাভুক্ত হতে না পারা দুঃখজনক। তার মানবেতর জীবন যাপন আরো কষ্টদায়ক।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাননি

আপডেট টাইম : ০৫:১৬:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভাঙাচোরা টিনের দোচালা ঘর। ঘরের বারান্দায় চটের ওপর শুয়ে রোগযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ (৬৫)। গত শুক্রবার কাছে গিয়ে ডাক দিতেই সাড়া মিললেও উঠে বসার সক্ষমতা নেই তাঁর। পাঁচ মাস আগে স্ট্রোকে শরীরের বাঁ পাশ অসাড় হয়ে গেছে। তিনি শয্যাশায়ী। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতিও পাননি।

আব্দুস সামাদ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের বোধখানা গ্রামের বাওড়পাড়ার মৃত সুরত আলীর ছেলে। দেশকে পরাধীনতার গ্লানিমুক্ত করতে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যান তিনি। ৯ মাস যুদ্ধ শেষে মাতৃভূমি স্বাধীন হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও সামাদ মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাননি। তিনি জানান, গণপরিষদ সদস্য মরহুম আবুল ইসলাম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে তাঁকে (সামাদ) নিয়ে চাপাবাড়িয়া ট্রেনিং ক্যাম্পে ১৯৭১ সালে ১০ অক্টোবর ভর্তি করে দেন।

ক্যাম্পের যুবশিবির নিয়ন্ত্রণ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মাদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত সনদ অনুযায়ী আব্দুস সামাদের পরিচয়পত্র নম্বর ৩৮২৪২। ব্যারাকপুর ইয়ুথ ক্যাম্পের ডেপুটি ক্যাম্প ইনচার্জ আমির আলী (মেজর) স্বাক্ষরিত সনদ অনুযায়ী তাঁর মুক্তিবার্তা (লাল বই) নম্বর ০৪০৫৬০১৮৫। বয়রা ক্যাম্পে তিনি ক্যাপ্টেন হুদার তত্ত্বাবধানেও প্রশিক্ষণ নেন। এসব ক্যাম্পে দুই মাস প্রশিক্ষণ শেষে ঝিকরগাছার ছুটিপুর, গোয়ালহাটি, হাজিরআলী, শার্শার কাশিপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। গোয়ালহাটিতে সম্মুখযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শহীদ হন। তাঁর লাশ কাঁধে করে আব্দুস সামাদরা শার্শার কাশিপুরে নিয়ে যান।

আব্দুস সামাদ অভিযোগ করেন, তাঁকে তালিকাভুক্ত করতে ঝিকরগাছা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক এক ডেপুটি কমান্ডার ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু টাকা না দিতে পারায় তালিকায় তাঁর নাম ওঠেনি। পরে কয়েকজন বেশ কিছু টাকা নিয়েছেন তাঁর নাম তালিকাভুক্তির কথা বলে।

সারাজীবন ভ্যানগাড়ির প্যাডেলে ভর দিয়ে জীবনের চাকা সচল রাখলেও এখন কান্নাই আব্দুস সামাদের সঙ্গী। বছর চারেক আগে তাঁর স্ট্রোক হলে শেষ সম্বল বসতভিটা বেচে চিকিৎসা নেন। একটু সুস্থ হলে তিনি আবার ভ্যান চালানো শুরু করেন। কিন্তু পাঁচ মাস আগে ব্রেন স্ট্রোকে শরীরের বাঁ পাশ অচল হয়ে গেছে। আব্দুস সামাদের স্ত্রী মালেকা খাতুন জানান, দিনমজুর দুই ছেলে তাঁদের ভরণ-পোষণ দিলেও চিকিৎসার ব্যয় বহন করার মতো সামর্থ্য নেই।

মুক্তিযোদ্ধা ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘আমি ও আব্দুস সামাদ একসঙ্গে ট্রেনিং ও যুদ্ধ করেছি। তার তালিকাভুক্ত হতে না পারা দুঃখজনক। তার মানবেতর জীবন যাপন আরো কষ্টদায়ক।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ