ঢাকা ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্ডারে দুর্নীতির কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আব্রাম না থাকলে তাকে আমার যোগ্য বলেও মনে করতাম না ওমরাহ শেষে গ্রামে ফিরে খেজুর-জমজমের পানি বিতরণ করল শিশু রিফাত বিদেশে প্রশিক্ষণে ঘুরে-ফিরে একই ব্যক্তি নয়, জুনিয়রদের অগ্রাধিকার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছাড়লেন চিকিৎসকরা রেমিট্যান্সে জোয়ার, ২১ দিনে এলো ২ বিলিয়ন ডলার গণমাধ্যমের পাঠক-দর্শক-শ্রোতার মতামত জরিপ জানুয়ারিতে বুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ আসামি রিমান্ডে বিয়ের আগে পরস্পরকে যে প্রশ্নগুলো করা জরুরি

কতটা কষ্ট পেলে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয় : শিক্ষামন্ত্রী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৩:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮
  • ২৯৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শিক্ষকের আচরণে অপমানিত হয়ে ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাকে অত্যন্ত হৃদয়বিদারক বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী কতটা অপমানিত হলে, কতটা কষ্ট পেলে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়? ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে এসে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে তিনি স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের অভিযোগ ও ক্ষোভের কথা শুনেছি। বলেছি, কেউ অপরাধী হলে অবশ্যই শাস্তি পাবে।’

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ভর্তি বাণিজ্যের কথা স্মরণ করিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জনপ্রিয়তার কারণে এই স্কুল কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের কথা অনেক আগেই কানে এসেছে। এসব অনিয়মের কারণে টাকার বিনিময়ে ভর্তি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। একসময় এখানে ভর্তির জন্য ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হতো। যা বন্ধ করা হয়েছে।’

সোমবার রাজধানীর শান্তিনগরে ৭ তলা ভবনের সপ্তম তলার একটি ফ্ল্যাটে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীকে (১৫)। তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। ওই ছাত্রীর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে।

অরিত্রীর মা-বাবা জানান, তাদের মেয়ের স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রবিবার চলছিল সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা। পরীক্ষার সময় তার কাছে একটি মোবাইল পাওয়া যায়। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ অরিত্রীর মা-বাবাকে ডেকে পাঠায়। স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, অরিত্রী মোবাইলে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী বলেন, সোমবার পরীক্ষার সময় অরিত্রীর সঙ্গে তারা স্কুলে যান। তারা প্রথমে ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে যান। কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করেন। এসময় মেয়ের টিসি নিয়ে যেতে বলা হয়।

অরিত্রীর বাবা আরো বলেন, এরপর তিনি প্রিন্সিপালের কক্ষে যান। প্রিন্সিপালও ভাইস প্রিন্সিপালের মতো আচরণ করেন। সেখানে গিয়ে তারা ক্ষমা চান। তার মেয়ে প্রিন্সিপালের পা ধরে ক্ষমা চাইলেও তাদের বেরিয়ে যেতে বলেন এবং পরের দিন টিসি নিয়ে আসতে বলেন।

দিলীপ অধিকারী বলেন, এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে তিনি স্ত্রীসহ বাড়ি গিয়ে দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে।

ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেন, ওই ছাত্রী পরীক্ষার হলে মোবাইলে নকল দেখে পরীক্ষা দিচ্ছিল। মোবাইল ফোনে পুরো বই কপি করা ছিল। বিষয়টি পরিদর্শক শিক্ষক বুঝতে পেরে খাতা নিয়ে নেন।

‘কতটা অপমানিত হলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় শিক্ষার্থী’                                   নিহত অরিত্রী অধিকারী।

এদিকে ছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মঙ্গলবার সকালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক মো. ইউসুফকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।

অন্যদিকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ। তাদের গঠিত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. আতাউর রহমান। এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- অভিভাবক প্রতিনিধি তিন্না খুরশীদ জাহান ও শিক্ষক ফেরদৌসী বেগম। আগামী তিন দিনের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদনে দিতে বলা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল

কতটা কষ্ট পেলে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয় : শিক্ষামন্ত্রী

আপডেট টাইম : ০৪:৪৩:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শিক্ষকের আচরণে অপমানিত হয়ে ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাকে অত্যন্ত হৃদয়বিদারক বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী কতটা অপমানিত হলে, কতটা কষ্ট পেলে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়? ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে এসে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে তিনি স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের অভিযোগ ও ক্ষোভের কথা শুনেছি। বলেছি, কেউ অপরাধী হলে অবশ্যই শাস্তি পাবে।’

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ভর্তি বাণিজ্যের কথা স্মরণ করিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জনপ্রিয়তার কারণে এই স্কুল কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের কথা অনেক আগেই কানে এসেছে। এসব অনিয়মের কারণে টাকার বিনিময়ে ভর্তি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। একসময় এখানে ভর্তির জন্য ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হতো। যা বন্ধ করা হয়েছে।’

সোমবার রাজধানীর শান্তিনগরে ৭ তলা ভবনের সপ্তম তলার একটি ফ্ল্যাটে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীকে (১৫)। তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। ওই ছাত্রীর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে।

অরিত্রীর মা-বাবা জানান, তাদের মেয়ের স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রবিবার চলছিল সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা। পরীক্ষার সময় তার কাছে একটি মোবাইল পাওয়া যায়। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ অরিত্রীর মা-বাবাকে ডেকে পাঠায়। স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, অরিত্রী মোবাইলে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী বলেন, সোমবার পরীক্ষার সময় অরিত্রীর সঙ্গে তারা স্কুলে যান। তারা প্রথমে ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে যান। কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করেন। এসময় মেয়ের টিসি নিয়ে যেতে বলা হয়।

অরিত্রীর বাবা আরো বলেন, এরপর তিনি প্রিন্সিপালের কক্ষে যান। প্রিন্সিপালও ভাইস প্রিন্সিপালের মতো আচরণ করেন। সেখানে গিয়ে তারা ক্ষমা চান। তার মেয়ে প্রিন্সিপালের পা ধরে ক্ষমা চাইলেও তাদের বেরিয়ে যেতে বলেন এবং পরের দিন টিসি নিয়ে আসতে বলেন।

দিলীপ অধিকারী বলেন, এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে তিনি স্ত্রীসহ বাড়ি গিয়ে দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে।

ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেন, ওই ছাত্রী পরীক্ষার হলে মোবাইলে নকল দেখে পরীক্ষা দিচ্ছিল। মোবাইল ফোনে পুরো বই কপি করা ছিল। বিষয়টি পরিদর্শক শিক্ষক বুঝতে পেরে খাতা নিয়ে নেন।

‘কতটা অপমানিত হলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় শিক্ষার্থী’                                   নিহত অরিত্রী অধিকারী।

এদিকে ছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মঙ্গলবার সকালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক মো. ইউসুফকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।

অন্যদিকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ। তাদের গঠিত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. আতাউর রহমান। এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- অভিভাবক প্রতিনিধি তিন্না খুরশীদ জাহান ও শিক্ষক ফেরদৌসী বেগম। আগামী তিন দিনের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদনে দিতে বলা হয়েছে।