হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে প্রায় ৯ শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে সারা বছর চলাচলের উপযোগী সড়ক নির্মিত হচ্ছে। হাওরের মিঠামইন, ইটনাও অষ্টগ্রাম এ তিনটি উপজেলার সাথে সংযোগ রক্ষা হবে এ সড়ক দিয়ে। পর্যায়ক্রমে এ সড়কটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাথেও যুক্ত হবে।
সড়কটি নির্মিত হলে হাওর অঞ্চলে যোগাযোগ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ সড়কটি নির্মিত হচ্ছে।
হাওরবাসীর স্বপ্নের এ সড়কটি নির্মিত হলে এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে। এতে হাওরের মানুষের জীবনচিত্রই পাল্টে যাবে বলে তিনি জানান। ‘বর্ষায় নাও (নৌকা) আর শুকনায় পাও (পা)’ এটি ছিল এক সময় হাওরের একটি প্রবাদ। হাওরবাসীর দুর্ভোগের চিত্র হিসেবে এ প্রবাদটি এতদিন প্রচলিত ছিল। কারণ বর্ষাকালে হাওরের লোকজন নৌকা দিয়ে চলাচল করতো। আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হতো।
এসময় যোগাযোগ ব্যবস্থার করুণ দশা থাকায় চিকিৎসার অভাবে কতো মানুষ যে মারা গেছে তার কোনো হিসাব নেই। গর্ভবতী নারীদেরকে পলোয় ঢুকিয়ে মাথায় পরিবহণ করা হতো। যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়ে চরম অবহেলিত এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল হাওর অঞ্চল।
হাওরের লোকজন জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আসছেন তারা। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে সাতবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। কিন্ত এলাকার সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের থাকলেও রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল অন্য রাজনৈতিক দল। যে কারণে হাওরের উন্নয়ন একেবারেই কম হয়েছে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়ন শুরু হয়। আবার ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে সে উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবারো উন্নয়ন শুরু হয়। যা এখনো চলমান রয়েছে বলে হাওরের লোকজন জানান।
এলাকার সন্তান আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি থাকায় অবহেলিত হাওরবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ এবার শেষ হতে চলেছে। রাষ্ট্রপতির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হাওরে যোগাযোগের জন্য সাড়া বছর চলাচলের উপযোগী এ সড়কটি নির্মিত হচ্ছে। এ সড়কটি হাওরবাসী স্বপ্ন ছিলো। স্বপ্নের এ সড়কটি নির্মিত হওয়ার হাওরের লোকজন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
সড়কটি নির্মিত হলে হাওরে যোগাযোগ ও উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। বিশেষ করে জেলা শহর ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহজেই যোগাযোগ করা সম্ভব হবে। এর ফলে শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা ছাড়াও গড়ে ওঠবে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান। এতে করে সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। আর কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যয্য মূল্য পাবে। বদলে যাবে হাওরের জীবনচিত্র।
৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ সড়কের সাথে যুক্ত থাকবে তিনটি বড় ও ১১ টি ছোট ব্রিজ এবং ৫৫টি কালভার্ট। ২০২০ সালের জুন মাসে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম জানান, হাওরবাসীর সাড়া বছর চলাচলের সুবিধার্থে সড়কটি নির্মিত হচ্ছে। এ সড়ক নির্মিত হলে হাওরের মানুষ যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানারকম সুবিধা পাবেন। নির্ধারিত সময়ে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক জানান, হাওরের এমপি থাকতো আওয়ামী লীগের। আর সরকার থাকতো অন্য পার্টির। তাই এতোদিনে হাওরে কোনো উন্নয়ন হয়নি। হাওরের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অবদান রেখে যাচ্ছেন। গত দশ বছরে হাওরের উন্নয়ন হচ্ছে। হাওরবাসীর স্বপ্নের এই সড়কটি নির্মিত হলে হাওরের একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে। হাওরের মানুষের জীবনচিত্রই পাল্টে যাবে বলে তিনি মনে করেন।