১৫ দিন পর পদ্মা-মেঘনায় জেলেরা

মা ইলিশকে নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে ১৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ থেকে পদ্মা-মেঘনায় নামলেন জেলেরা। নিষেধাজ্ঞার সময় কিছু অসাধু জেলে গোপনে মা ইলিশ নিধন করলেও অন্য জেলেরা আজ থেকে গুল্টিজাল নিয়ে নদীতে নেমেছেন।

সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর দিনগত রাত ১২টা পর্যন্ত মেঘনা নদীর চাঁদপুরের মতলব উত্তর ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষায় যে কোন ধরনের মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মওজুদ ইত্যাদি নিষিদ্ধ করে সরকার।

সদর উপজেলার কাটাখালী এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানান, অন্যান্য বছর জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ ধরলেও এ বছর আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তারা। জেলেদের সাময়িক সমস্যা হলেও এখন ইলিশ পাওয়া গেলে তা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

উপজেলার হরিণাঘাটের আড়ৎদার বিল্লাল হোসেন জানান, হরিণা ঘাটে প্রায় ২শ’ জেলে রয়েছে। প্রশাসনের কঠোর অবস্থান থাকার কারণে এসব জেলেরা বহু কষ্টের মাঝেও তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করে। আজ শনিবার থেকে জেলেদের শুরু হবে ইলিশ শিকারের জন্য মেঘনায় বিচরণ। নদীতে খর ¯্রােত থাকলে ইলিশ মিলবে বলে আশা করেন এই ব্যবসায়ী।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান জানান, চাঁদপুরের মেঘনা তীরবর্তী ৪টি উপজেলায় ৩০হাজারের অধিক জেলে রয়েছে। মা ইলিশ রক্ষায় এসব জেলেদের মধ্যে স্বল্প সংখ্যক জেলে আইন অমান্য করে মা ইলিশ নিধন করে। তাদের মধ্যে অনেকেই আইনের আওতায় এসেছে। তবে এ বছর পাশ্ববর্তী শরীয়তপুর জেলার বহু জেলে মা ইলিশ নিধনে নেমে পড়ে। যে সব জেলের কারাদ- হয়েছে।

এদের মধ্যে অনেক জেলের বাড়িই শরীয়তপুর জেলার সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।

এদিকে, মা ইলিশ রক্ষায় গত ১৫ দিনে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত জেলা টাস্কফোর্সের অভিযানে আটক ২শ’ ৬০ জেলেকে কারাদ- দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়াও মৎস্য আইনে ৩৯ জেলেকে ১লাখ ৯৭ হাজার ৭শ’ টাকা জরিমানা করা হয়।

শনিবার (১০ অক্টোবর) সকালে জেলা মৎস্য বিভাগ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চাঁপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান জানান, কারাদ- প্রাপ্ত ২৬০ জেলের মধ্যে ৬ জেলেকে ২বছর, ২৩৫ জেলেকে ১বছর, ১২ জেলেকে ১মাস, ৫ জেলেকে ১৫দিন, ১ জেলেকে ৭দিন ও ১ জেলেকে ৩দিন সাজা দেয়া হয়েছে।

কিশোর জেলে, বয়স্ক জেলেসহ বিভিন্ন অপরাধে ৩৯ জেলের কাছ থেকে ১লাখ ৯৭ হাজার ৭শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এসব বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট থানা ও নৌ-ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মামলা করেছেন ২শ’ ৮৯টি।

চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, এ বছর অভিযানের শুরু থেকে প্রশাসন কঠোর অবস্থান নেয়। সে কারণে বিগত বছরের তুলনায় জেলে ও ব্যবসায়ীরা অনেক সচেতন হয়েছে। এতে মা ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। তবে চাঁদপুরের সব শ্রেণির মানুষের একান্ত সহযোগিতা ছিলো। আগামী মার্চ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ অভিযান সফল করতে পারলে ইলিশের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর