মূল বেতন পেলেও ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা থেকে এতদিন বঞ্চিত ছিলেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমার আজকের এ লেখা মূলত মাননীয় শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাতে। স্পষ্ট করে বলতে গেলে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ব্যক্তির চেয়ে শিক্ষানুরাগী, শিক্ষক-সুহূদ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উদ্দেশে নিবেদিত। ক্ষমতার পালাবদলে সরকার আসে সরকার যায়। কিন্তু আন্তরিকতার স্পর্শে মানুষকে আপন করে নিতে পারেন কয়জন? অনভিপ্রেত প্রতিকূল পরিবেশকে অনুকূলে নিয়ে আসার যোগ্যতা সবার থাকে না। বলতে দ্বিধা নেই, সংখ্যায় অতিস্বল্প সেসব মানুষের কাতারে শেখ হাসিনা এরই মধ্যে যে স্থান করে নিতে পেরেছেন, তা শুধু বাংলাদেশে তার অনুরক্ত-অনুসারীরাই বলছেন না; বিশ্বনেতারাও তার নেতৃত্বের বিরল গুণাবলির, মিয়ানমার থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে আসা ছিন্নমূল মানুষের প্রতি অপরিসীম মানবিকতা প্রদর্শন, নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতায় অব্যাহত দৃষ্টান্ত স্থাপন, বাল্যবিবাহ রোধে কার্যকর বাস্তবানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ, অ্যানালগ থেকে ডিজিটালে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের রূপান্তর, আঞ্চলিকভাবে কাছের দুই শক্তিধর দেশ ভারত ও চীনের সঙ্গে সার্থক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা এর মধ্যে কয়েকটি। সর্বশেষ ৮ নভেম্বর পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীকে ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা প্রদানের ঘোষণা বাংলাদেশে শিক্ষার ৯০ ভাগের বেশি ভার বহনকারী বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের জন্য শুধু সুসংবাদই বয়ে আনেনি, তাদেরকে শিক্ষকতায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে স্থিত হতেও অনুপ্রাণিত করবে।

৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় গণভবনে বিভিন্ন ট্রাস্টের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। পরদিন সকালে আমাকে টেলিফোন করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সবসময়ই শিক্ষকদের পাশে, আবারো তিনি সেটা প্রমাণ করলেন। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের জন্য বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতার ঘোষণা দিয়েছেন।’ দেশে বর্তমানে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন, তাদের ইনক্রিমেন্টের জন্য বছরে বাড়তি ৫৩১ কোটি ৮২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা লাগবে। আর বৈশাখী ভাতার জন্য লাগবে ১৭৭ কোটি ২৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। সরকার ২০১৫ সালে অষ্টম বেতন কাঠামোর আওতায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বৈশাখী ভাতা চালু করে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাংলা নববর্ষে তাদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে এ ভাতা পান। ওই বেতন কাঠামোতেই আগের সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলের বিধান বাতিল করে ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট নিয়ম চালু করা হয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা অষ্টম বেতন কাঠামো অনুযায়ী মূল বেতন পেলেও ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা থেকে এতদিন বঞ্চিত ছিলেন। এজন্য তারা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে নানা কর্মসূচি পালন করেন।

ষাটের দশকে ঢাকা কলেজে ছাত্রাবস্থায় একটি সময়োপযোগী, বৈষম্য ও বঞ্চনামুক্ত শিক্ষানীতির জন্য আন্দোলন করেছি। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে বায়াত্তরে খুলনার একটি বেসরকারি কলেজে প্রথমে বিনা বেতনে, পরে মাসে ৬০ টাকার টিচার্স বেনিফিট সম্বল করে শিক্ষকতায় কর্মরত থাকি। বঙ্গবন্ধু সরকার ৬০ থেকে ১০০ টাকায় ওই বেনিফিটের অর্থ উন্নীত করেন এবং ১০০ টাকা দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে চরম প্রতিকূল আর্থিক পরিস্থিতিতে এর যে কী অপরিসীম মূল্য ছিল, এখন তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। শিক্ষা ব্যবস্থার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। ৫ মে ১৯৭৪ সালে কমিশন বঙ্গবন্ধুর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে রিপোর্ট তুলে দেয়। এ রিপোর্ট আজ পর্যন্ত দেশের শিক্ষাসংক্রান্ত সবচেয়ে বিশদ, প্রামাণ্য দলিল। শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে শুরু করে তার বিজ্ঞানসম্মত মূল্যায়ন, শিক্ষকের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষায় অর্থায়ন, অর্থায়নের উৎস নির্ধারণ, শিক্ষায় রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব এবং অগ্রাধিকার চিহ্নিতকরণসহ সামগ্রিক উপস্থাপনা হিসেবে বিবেচ্য। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল চক্র, পশুশক্তির নির্মম বুলেট জাতির প্রিয় পিতাকে ঝাঁঝরা করে দেয়ার পর এ রিপোর্টের প্রস্তাবগুলো কার্যকর হতে পারেনি। শিক্ষায় সম্ভাব্য অগ্রযাত্রা সার্বিক পশ্চাত্পদতার কাছে আত্মসমর্পণ করে। কুদরাত-এ-খুদা রিপোর্টের মূল বিষয়বস্তুকে ধারণ করে ২০০০ সালে একটি শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও তা কার্যকর হতে পারেনি। এরপর আবার নেমে আসে একরাশ অন্ধকার। কিন্তু অন্ধকারের দাপট চিরস্থায়ী হয় না। ২০০৮ সালে গণরায়ে ক্ষমতায় এসে জননন্দিত শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। যে কমিটির রিপোর্ট জাতীয় শিক্ষানীতি হিসেবে ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে অনুমোদিত হয়। এ শিক্ষানীতি প্রণয়নে আমি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলাম। ২০১০ শিক্ষানীতির বাস্তবায়নের গতি নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আমি মনে করি বাস্তবায়নে অনেক অর্জন সত্ত্বেও সমন্বয় ও প্রকৃত বাস্তবায়নের তথ্য প্রকাশে সরকারের দিক থেকে দক্ষতার ঘাটতি ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা প্রদানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনের মধ্যে বৈষম্য দূর করার প্রস্তাব বাস্তবে রূপায়ণ হয়েছে, এ কথা মানতে হবে।

লেখার শুরুতে শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছোট করার জন্য নয়। শুধু এটুকু বোঝাতে চেয়েছি, শেখ হাসিনা না হয়ে তার দলের অথবা অন্য দলের কেউ প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন থাকলে এ প্রাপ্তি বা অর্জন সহজ হতো না। তবে চার দশকের বেশি সময় শিক্ষক আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে এ অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করেছি যে শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য শেখ হাসিনার ঘোষণা তাদের মধ্যে একদিকে সন্তুষ্টি বয়ে আনবে, অন্যদিকে নতুন প্রত্যাশারও জন্ম দেবে। আগে থেকে বিরাজিত অপূরিত প্রত্যাশা পূরণেও নতুন করে আশাবাদী করে তুলবে। এমপিওর জন্য নির্বাচিত শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি, অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সরকার প্রদত্ত বেতন কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা, প্রাথমিক-মাধ্যমিক থেকে শিক্ষার সব ধাপ ও স্তরে সমন্বয়, শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও শিক্ষকের প্রাপ্য আর্থসামাজিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণের মতো বিষয় এর মধ্যে রয়েছে।

শিক্ষকদের যে দুটি প্রত্যাশা গতকাল পূরণ হয়েছে, তার জন্য সরকারকে কতটা চাপ দেয়া সঙ্গত ছিল অথবা কর্মসূচি প্রদান যুক্তিযুক্ত ছিল? আমি প্রথম থেকেই একটা আস্থার অবস্থানে নিশ্চিত ছিলাম যে শেখ হাসিনা বঞ্চিত করার নন, বঞ্চনামুক্ত করার মানুষ। আমার বিনীত জিজ্ঞাসা, প্রত্যাশার অগ্রাধিকার নির্ণয় কতটা যথার্থ ছিল? এর ভিন্নরূপ হলে এবং অবস্থানগত ঐক্যবদ্ধতা অধিকতর উদারভাবে প্রশস্ত করা সম্ভব হলে অর্জনের তালিকায় কি আরো কিছু যুক্ত হওয়া সম্ভব ছিল? এ দুটো প্রশ্নের উত্তর সহজ না হতে পারে। কিন্তু মূল্যায়নে বাধা কোথায়? আবার প্রত্যাশা পূরণ যে নতুন করে প্রত্যাশা তৈরি করে, শিক্ষক নেতৃত্ব ও সরকার উভয়কে এখন এবং সবসময় তা অনুধাবন করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক আন্দোলনের ধারা বদলও যে অপরিহার্য, এ বিবেচনাও শিক্ষক নেতৃত্বের উপলব্ধিতে আসতে হবে। বিনয়ের সঙ্গে বলব, নিজের ক্ষুদ্র সামর্থ্যের মধ্যেও সব সরকারের আমলে শিক্ষকদের দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে এ চেতনা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি যে শিক্ষার্থীর শিক্ষার জন্যই শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন এবং উন্নততর পাঠদান ও গুণগত শিক্ষা প্রসারে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর শিক্ষকের বেতন-ভাতা, মর্যাদা বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি শাণিত ও শক্তিশালী হয়।

গত ৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতে চাই শিক্ষকের অধিকার প্রতিষ্ঠা’ প্রতিপাদ্যে কৃতী শিক্ষকদের সম্মাননা ও দুই শিক্ষার্থীকে সৃজনশীলতা ও সাহসী ভূমিকার জন্য প্রশংসাসূচক স্বীকৃতি প্রদান এবং শিক্ষকদের পক্ষ থেকে শিক্ষা উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাপত্র পাঠ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কোর ঢাকা অফিস প্রধান বিয়াট্রিস কালডুন ও গ্লোবাল ক্যাম্পেইন ফর এডুকেশনের নির্বাচিত সহসভাপতি রাশেদাকে চৌধুরী। অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের মধ্যে যাদের সম্মাননা দেয়া হয় তারা হলেন: ১. অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, সিনিয়র সচিব, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়; ২. অধ্যক্ষ আওয়াল সিদ্দিকী, মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রবীণ নেতা, সদস্য, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটি; ৩. অধ্যক্ষ এমএ সাত্তার, বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা প্রসারে অগ্রণী উদ্যোক্তা, শিক্ষক নেতা; ৪. মাছুম বিল্লাহ, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ও নিয়মিত কলাম লেখক; ৫. অধ্যক্ষ অমিত রায় চৌধুরী, কলেজ অধ্যক্ষ, সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লেখক; ৬. মো. সিদ্দিকুর রহমান, প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রবীণ নেতা ও সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লেখক। নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গা উপজেলার মেয়ে শিক্ষার্থী তাসলিমা। এবং দেশের ৬৪ জেলার মাটি সংগ্রহ করে বাংলাদেশের মানচিত্র নির্মাতা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শুভঙ্কর পালকে অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে অভিনন্দিত করা হয়।

এ অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের পক্ষে প্রতিজ্ঞাপত্র উপস্থাপন করেন মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রিয় নেতা, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. আজিজুল ইসলাম। শিক্ষকদের পক্ষে উপস্থাপিত বিষয় দুটি প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় এখানে উল্লেখযোগ্য। শিক্ষকদের পক্ষে ঘোষিত কাম্য অবস্থানে ছিল: ১. বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ; ২. বিশ্ব শিক্ষক দিবস জাতীয়ভাবে এবং প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পালন; ৩. শিক্ষকদের জন্য ইউনেস্কো, আইএলও সুপারিশকৃত ১৯৬৬ ও ১৯৯৭ সালের বিধানগুলো কার্যকর করা; শিক্ষায় ইউনেস্কো প্রস্তাবমতে অর্থ বরাদ্দ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ; ৪. মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে উদ্যোগ গ্রহণ; শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতার জন্য পৃথক নিয়োগ কমিশন গঠন; ৫. আনন্দদায়ক অনুকূল পরিবেশে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান নিশ্চিতকরণ; ৬. শিক্ষা আইন পাস ও বাস্তবায়ন ত্বরান্বিতকরণ; ৭. শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কমিটি দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখা; ৮. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নসহ শিক্ষা উন্নয়নে প্রতিটি জাতীয় কর্মসূচিতে, এসডিজি ৪ বাস্তবায়নে শিক্ষকদের প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্তকরণ; শিক্ষকদের পক্ষে প্রতিজ্ঞাপত্রে উল্লেখ করা হয়: ১. বিষয়বস্তু যথাযথভাবে অবহিত হয়ে শুদ্ধ উচ্চারণে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান। পাঠদানের ক্ষেত্রে গাইড বই, নোট বই ব্যবহার থেকে বিরত থাকা; ২. ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জানার আগ্রহ ও ঔত্সুক্য বৃদ্ধির জন্য তাদেরকে শ্রেণীকক্ষে প্রশ্ন করায় উৎসাহ দেয়া; ৩. ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক শাস্তি প্রদান ও মানসিক নিপীড়ন বন্ধের সিদ্ধান্ত পূর্ণ বাস্তবায়ন; ৪. শিক্ষক কর্তৃক সেলফোন বন্ধ রেখে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান; ৫. ছাত্রী উত্ত্যক্তের ঘটনা প্রতিরোধ করতে নারী অভিভাবকসহ অভিভাবকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ; ৬. দীর্ঘদিন শ্রেণীকক্ষে অনুপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানে অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ; ৭. ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানচর্চা পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সীমিত না রেখে সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রম, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চায় অংশগ্রহণে উৎসাহ দেয়া; ৮. শতভাগ স্বাক্ষরতা অর্জনের জাতীয় কর্মসূচিতে শিক্ষা উন্নয়ন উদ্যোগ ও এসডিজি ৪ বাস্তবায়নে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ; ৯. প্রত্যেক শিক্ষকের ২০২০ সালের মধ্যে নিজ ই-মেইল ঠিকানা চালু।

উপসংহারে আমি শিক্ষা ও শিক্ষক দরদি শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি নিশ্চিত দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সব শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী তাদের অনুকূলে গৃহীত সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ও আশ্বস্ত বোধ করবেন। মন থেকে তার জন্য দোয়া ও আশীর্বাদ করবেন। ভবিষ্যতে আরো অর্জনের জন্য যথাসম্ভব তার প্রতি অকৃপণ, স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা প্রসারিত করবেন। কারণ কোনো ভালোবাসাই একতরফা হয় না। সেই সঙ্গে এ প্রত্যাশাও ব্যক্ত করব যে দেশে প্রচলিত শিক্ষক আন্দোলনের ধারা বদল হবে। পেশাগত অধিকার আদায়ের কর্মসূচিতে অপরিহার্যভাবে শিক্ষার্থী তথা শিক্ষা উন্নয়নের বিষয়টিও যুক্ত ও সমন্বিত হবে।

লেখক: জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর