এক সময় সকালে ঘুম ভাঙ্গত যে ঢেঁকির ধুমধাম শব্দে, তা আজ আর শোনা যায় না। গ্রামবাংলার বধুরা এক সময় ঢেঁকি পারের তালে তালে গান গাইতো। আর তা শুনে মনের দুঃখ-কষ্ট দুর করতো বাড়িতে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ। ঢেঁকি পারের শব্দে মনের ক্লান্তি দুর করে আবার কাজে মন দিত কৃষক।
গ্রামবাংলার ঐহিত্যবাহী ঢেঁকি নিয়ে অনেক কবি লেখক কবিতা আর গান লিখেছেন। যেমন- ঢেঁকির তালে হেলে দুলে ধান যে ভানতে পারে তেমনি বউ চাই গ্রামের সাধারণ কৃষকের। কিন্তু সেই ঢেঁকির আজ আর কোনো কদন নেই। আজ মানুষ যান্ত্রিক যন্ত্রপাতির দিকে ঝুঁকে পড়ে আগের দিনের গ্রামের ঐতিহ্যকে একেবারেই ভুলে যেতে বসেছে।
গ্রামের বধুরা এক সময় ঢেঁকির তালে তালে ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, ঘেটু গানের সুর তুলতো। তারা মনের আনন্দে ‘ও ধান ভানোরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া/আমি নাচি ঢেঁকি নাচে হেলিয়া-দুলিয়া, ও ধান ভানোরে’ গানটি গাইতেন।
বিয়ের কনেকে গাঁয়ে গলুদ মাখাতে পাড়ার মহিলারা একত্রে হয়ে বিয়ের গীত গাইতো। সেই দিনের সেই সময়গুলো আজ শুধুই স্বপ্ন। কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে বাড়ির উঠানে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে যখন সারাদেশে মাতোয়ারা ঠিক তখন গ্রামের মহিলারা নতুন ধানে পিঠা তৈরিতে মনোনিবেশ করতো। আর পিঠা তৈরির জন্য চাউলের গুড়া করতে ঢেঁকির কোনো বিকল্প ছিল না।
ঢেঁকি ছাটা চাউলের ভাত গ্রামের কৃষকের প্রাণের চাওয়া ছিল। আর আজ দেশে যান্ত্রিক মেশিনে ছাটা চাউল আগের দিনের মতো হয় না। ঢেঁকিতে করা চাউলের গুড়া দিয়ে তৈরি হয়েছে মন মাতানো সব পিঠা। যার মধ্যে পুলি, ভাপাপুলি, চিতাই, পাটিসাপটা, কুশলি, ভাজাপিঠাসহ নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার।
এখন গ্রাম থেকে সেই ঢেঁকি উঠে গেছে। এলাকার দু‘একটি বাড়িতে ঢেঁকি দেখা গেলেও তার প্রচলন আর আগের মতো নেই। বলা চলে, ঢেঁকি শিল্পটি প্রায়ই বিলুপ্তির পথে।