হাওর বার্তা ডেস্কঃ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইন্টারনেটের কোনও নির্ধারিত মূল্য ঠিক করতে পারেননি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তবে শিগগিরই তা করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে সাংবাদিককে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ে ইন্টারনেটের দামের (দাম কমানোর) বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি ইন্টারনেটের দাম কমবে।’
সম্প্রতি সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দফতরে সাংবাদিককে সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেছেন। সেবার মানের ব্যাপারে মানুষের অভিযোগ আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ফোরজি নেটওয়ার্ক থেকে এমএনপি পর্যন্ত (নম্বর না বদলে অপারেটর পরিবর্তন পদ্ধতি) এই পুরো জায়গাটার ভেতরে মানুষের অনেক অভিযোগ আমি পেয়েছি। অভিযোগ আছে সার্ভিসের মান নিয়ে। অভিযোগ আছে ইন্টারনেটের দামের ওপরে।
আমার কাছে এটা সুস্পষ্ট এবং প্রমাণ রয়েছে যে, আমাদের দেশে ইন্টারনেটের দাম অনেক বেশি। যেভাবে ডাটা প্রাইসিং (ইন্টারনেটের দাম) করা হয় সেই পদ্ধতিটি সঠিক নয়। আমি সরাসরি বলতে চাই, আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) থেকে কেনা হচ্ছে ব্যান্ডউইথ আর বিক্রি করা হচ্ছে ডাটা। তার মানে ব্যান্ডউইথকে ডাটাতে কনভার্সনের মধ্যে যা দাঁড়ায়, তাতে ভালোভাবে মনোযোগ দেওয়া গেলে এই জায়গায় প্রচুর সুযোগ আছে জনগণকে সহায়তা করার।’
ইন্টারনেটের কস্ট মডেলিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে আইটিইউ (ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন)-এর কাছ থেকে ইন্টারনেটের দামের ওপর একটা কস্ট মডেলিং এর রিপোর্ট পেয়েছি। বিটিআরসিকে বলেছি একটা কস্ট মডেলিং দাঁড় করাতে। আমার জানা মতে, এটা এখন ফাইনাল স্টেজে আছে। নির্বাচনকালীন সরকারের মধ্যে এটাও চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’
দায়িত্ব গ্রহণের পরে ইন্টারনেটের দাম কমানো এবং সেবার মানের ব্যাপারে তার দেওয়া প্রতিশ্রুতির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘মোবাইল ফোনের কোয়ালিটি অব সার্ভিসের দিকে মনোযোগ দিতে পেরেছি। আর ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়ে প্রসেসটুকু অন্তত শেষ করতে পেরেছি। চূড়ান্ত করতে আরও কিছু সময় লাগবে। কিন্তু আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি ইন্টারনেটের দাম কমবে। আমার কাছে যে ডাটা (তথ্য) আছে, তা বলে ইন্টারনেটের দাম কমতে হবে। দাম কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে বাধ্য করা হবে। প্রকৃত অর্থে মোবাইল অপারেটরগুলোর ব্যান্ডউইথ কেনা থেকে বিক্রি করা পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ার মধ্যে যে গ্যাপগুলো রয়েছে সেগুলো আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। এটা একটা বড় কাজ ছিল। আমি মোবাইল অপারেটরগুলোকে যখনই বলেছি তারা বলেছে যে, আমরা কস্টের সঙ্গে সামান্য প্রফিট যোগ করে বিক্রি করি। কিন্তু এখন আমার কাছে তথ্য আছে। আমি তাদের বলতে পারছি এই এই জায়গাগুলোতে তারা প্রফিট বেশি করছে। ফলে ইন্টারনেটের দাম তাদের কমাতেই হবে।’
দায়িত্ব পালনের সময়কালের অপ্রাপ্তির কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যদি টার্গেটের কথা বলি, তাহলে বলব ইন্টারনেটের প্রাইসিংটা করতে পারিনি। তবে একটা অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। আমরা ফেব্রুয়ারিতে ফোর-জি উদ্বোধন দিয়ে শুরু করি। এই ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ৭০-৮০ ভাগ বেড়েছে। আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ছিল ৫০০-৫৫০ জিবিপিএস (গিগা বাইট পার সেকেন্ড)। এখন তা ৮০০ জিবিপিএস ছাড়িয়ে গেছে। আমার জানা মতে, গত দুই ঈদের সময় দেশে আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ অ্যাপের ব্যবহার বাড়ার কারণে। মানুষ ভয়েস থেকে ডাটার দিকে শিফট করছে। এটার ফলে বোঝা যায়, আমাকে এখন ডাটাকে প্রায়োরিটি দিতে হবে।’
প্রাপ্তি বা সফলতার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার প্রাপ্তিকে এককভাবে দেখি না। আমার প্রধানতম কাজগুলো ছিল চলমান প্রকল্পগুলোকে (টেলিযোগাযোগ বিভাগের) সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাওয়া এবং যেগুলো শেষ হবে না সেগুলো একটি পর্যায়ে নিয়ে আপডেটেড অবস্থায় রাখা। আমি শুরু করেছি ফোর-জি লঞ্চিং দিয়ে। এরপরে এখন পর্যন্ত আমার দায়িত্ব ছিল এ খাতের ব্যাকলকগুলো সরিয়ে দেওয়া। লাইসেন্সিং থেকে শুরু করে নীতিমালা, অ্যাক্টকে ঠিক জায়গায় নিয়ে আসা।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘তবে আমার একটা ডিস্যাটিসফেকশন কাজ করে। এখানে যে কোম্পানিগুলো আছে, সেগুলোর প্রতি আমি ঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারিনি। দুটো কোম্পানি আমার কাছে কমফোর্টেবল জোনে আছে। একটা হলো সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি অন্যটি খুলনা ক্যাবল শিল্প। বাকিগুলোতে আমার আসলে প্রচুর সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল।’
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি আইসিটি বিভাগের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই সেখানে অনেকগুলো প্রজেক্ট চলছিল কিন্তু সেভাবে কোনও ফল আসছিল না। আমাকে প্রায় সবগুলো প্রজেক্টে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। ডিপিপি পরিবর্তন করতে হয়েছে। আইসিটিতে এখন এমন কোনও প্রকল্প নেই যে প্রকল্প নিয়ে আমার ভয় বা শঙ্কা কাজ করে।