হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, পুলিশের বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের অভিযোগ আগের তুলনায় অনেক কমেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে আগের মত অভিযোগ এখন আর আসে না। প্রশিক্ষণ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে অভিযোগ কমেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
সম্প্রতি চেকপোস্টে তল্লাশির নামে এক তরুণীকে হয়রানির ঘটনায় তদন্ত অনুযায়ী উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশ সদস্যদের আচরণ কেমন হবে, সে ব্যাপারে আমরা সচেতন রয়েছি। আগে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যাপকহারে খারাপ আচরণের অভিযোগ আসতো, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এখন তার ৫ ভাগ অভিযোগও আসে না। আমাদের কোনো সদস্য অপেশাদার আচরণ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিই।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গভীর রাতে চেকপোস্টে তল্লাশিকালে সিএনজিতে থাকা এক তরুণীর সঙ্গে পুলিশের খারাপ আচরণের ভিডিওটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই ভিডিওটি যিনি আপলোড করেছেন, তিনিও পুলিশেরই সদস্য। তিনি ভেবেছিলেন ওই ভিডিওটা প্রকাশ করলে তার হয়তো সুনাম হবে। কিন্তু তিনি যে অপেশাদার আচরণ করেছেন তা বোঝার ক্ষমতা তার নেই।
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, এর সঙ্গে জড়িতদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু এক্ষেত্রে নয়, আগামীতেও যদি কোনো পুলিশ সদস্য নাগরিকের সঙ্গে পেশাদার আচরণের বাইরে খারাপ আচরণ করে পুলিশের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে, তবে তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট ও কঠোর।
কমিশনার বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করে খারাপ আচরণ কমিয়ে এনেছি। আমরা শুধু মোটিভেশন কিংবা প্রশিক্ষণই দেই না, এ ধরনের অপেশাদার আচরণ যেসব পুলিশ সদস্য করে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিই। আগে প্রায় প্রতিদিনই অভিযোগ পেতাম, এখন মাসেও একটা পাই না।
নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ নেই। আইন-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বিঘ্ন হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা যতটুকু বলি তার শতভাগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করি। এই মহানগর পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, কোনো ধরনের অপতৎপরতার চেষ্টা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং স্বাভাবিক অবস্থা বিঘ্ন হওয়ার সুযোগ নেই। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা বরদাশত করা হবে না। আমাদের পুলিশ সদস্যদের সে সক্ষমতা রয়েছে।
ওই নারীর ভিডিও ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে পুলিশের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ডিসি মতিঝিলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে এবং তারাই ব্যবস্থা নেবে।
এছাড়া, ২৪ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ পালন করছে পুলিশ। এসময় জনসাধারণসহ সবাইকে ট্রাফিক আইন মানার অনুরোধ করেন ডিএমপি কমিশনার।
ঢাকা মহানগরীতে যানজট নিরসনে চলতি বছরে তৃতীয় বারের মত কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে কমিশনার জানান, ঢাকা মহানগরে যানজট নিরসনে ২৪ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ৭ দিন বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ পালিত হবে। এখানে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি ২১৬ জন রোভার স্কাউট এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা কাজ করবে।
বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ চলমান অবস্থায় পথচারীরা আইন মানলেও কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরে আর আইন মানে না এটা কি লোকবলের কারণে এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, লোকবলের কারণেও এটা হয়, আবার আমাদের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতা এবং নিজেদের সচেতন না হওয়ার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। চলতি বছরে আমরা দুইটা ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করেছি এবং আরেকটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সমাজের সকল দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হয় আইন শৃঙ্খলা মেনে চলে তাহলে অধঃস্তনরাও আইন মানতে বাধ্য হবে।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে ট্রাফিক আইনের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছি। যার কারণে সেটার অনেক উন্নতি হয়েছে এবং এই উন্নতিকে স্থায়ী করতে আমরা বিভিন্নভাবে সচেতনামূলক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। টিভিতে বিজ্ঞাপন, লিফলেট বিতরণ করে, ট্রাফিক গাইড বই বিতরণ করার মাধ্যমে এসব সাধারণ পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি।