হাওর বার্তা ডেস্কঃ তফসিল ঘোষণার আগে ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এরপর আরেকটি সভা শেষে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে কমিশন। এজন্য ভোটের তিনটি সম্ভাব্য তারিখও রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
গতকাল রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে বলেন, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সময়সূচি ১ নভেম্বর বিকাল ৪টায় রয়েছে। ৩০ অক্টোবর থেকে সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ-গণনা শুরু হওয়ায় চলতি মাসের শেষ সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে চায় সাংবিধানিক সংস্থাটি। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের সিদ্ধান্ত নেয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য ২০ ডিসেম্বর, ২৭ ডিসেম্বর বা ৩০/৩১ ডিসেম্বর প্রাথমিক তারিখ চিন্তা করা হচ্ছে।
আর ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর ৮ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণাও হতে পারে। এর আগে দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তৎকালীন কাজী রকিব কমিশন। পরে ২৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা বেশি বলে ইসির সিনিয়র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা বলেন, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগামী ১১-১৮ ডিসেম্বর এই পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও এখন ২৯ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে তা শেষ করতে আদেশ জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নভেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণার জন্য ৩০ অক্টোবরের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিলসহ সংশ্লিষ্ট ফরম-প্যাকেটসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্য মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হবে। নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত ম্যানুয়েলও ৫ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত করে ৮ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০ ডিসেম্বর ভোট হলে ৭ অথবা ৮ নভেম্বর তফসিল হবে। ২৭ ডিসেম্বর ভোট হলে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তফসিল এবং ৩০/৩১ ডিসেম্বর ভোট হলে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল হতে পারে। তবে ২৭ ডিসেম্বর ভোট হওয়ার বিষয়টি মিডিয়ায় আসায় নভেম্বরের শুরুতে তফসিল দিয়ে ২০ ডিসেম্বরও ভোট করার কথাও ভাবছে কমিশন।
কাপড়ের পোস্টার ও জীবন্ত প্রাণী ব্যবহারে মানা : নির্বাচনে প্রার্থীর প্রচারণায় জীবন্ত প্রাণী ও কাপড়ের পোস্টার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটিতে রাজনৈতিক নেতাদের থাকতে কোনো বাধা নেই। গতকাল কমিশন সভায় এ সংক্রান্ত সংশোধন এনে? রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় দুটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। সিইসি কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে বিকালে কমিশনের ৩৭তম সভা হয়েছে। এতে তিন নির্বাচন কমিশনার, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে সফরে থাকায় অনুপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আচরণ বিধিমালা সংশোধনের বিষয়ে দুটি প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। প্রতীক হিসেবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না। ওয়ার্ল্ড লাইফ রিজারভেশন অ্যাক্ট ১৯১২ এবং যারা পরিবেশবাদী তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এই নতুন ধারাটি সংযোজন করা হয়েছে।
তিনি জানান, পোস্টারের সংজ্ঞায় সংশোধন করা হয়েছে। পোস্টারের সংজ্ঞায় ছিল—কাগজ, কাপড়, রেক্সিন ডিজিটাল ডিসপ্লে বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমসহ অন্য যে কোনো মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত কোনো প্রচারপত্র, প্রচারচিত্র, বিজ্ঞাপনচিত্র, বিজ্ঞাপনপত্র এর অন্তর্ভুক্ত হবে। এখানে শুধু কাপড় শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে। আচরণবিধির ৭ ধারায় ‘পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ব্যবহার’ এর বাধা-নিষেধ স্পষ্ট করা হয়েছে। নির্বাচনী ব্যয় সীমার মধ্যে এ বিধান মেনেই প্রার্থীদের প্রচারসামগ্রী তৈরি ও ব্যবহার করতে হয়। ডিজিটাল প্রচারে বাধা নেই।
সচিব জানান, এমপি, মন্ত্রীসহ সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের বিদ্যমান আচরণবিধি অনুযায়ী প্রচারণায় অংশ নিতে হবে। তাদের জন্য নতুন করে কোনো নিয়ন্ত্রণারোপ করা হচ্ছে না।