হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বহির্বিশ্বে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরতে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান দেশে-বিদেশে পৌঁছে দিতে হবে। আর আকাশ-সংস্কৃতির ডামাডোলে গা ভাসিয়ে দিলে চলবে না; বরং তা থেকে ভালো দিকগুলো গ্রহণ করে মন্দ দিকগুলো বর্জন করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদের সমৃদ্ধ অংশ। গারো পাহাড়ের পাদদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়বেষ্টিত এক বর্ধিষ্ণু জনবসতি ময়মনসিংহ। উদার প্রকৃতি এ অঞ্চলের মানুষকে করেছে সহজ-সরল ও অতিথিপরায়ণ। জাতিসত্তা বিকাশেও বৃহত্তর ময়মনসিংহের রয়েছে অনন্য ভূমিকা। স্বাধিকার, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের জনগণের সাহসী ভূমিকা ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। বুধবার বিকেলে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক লোকসংস্কৃতি উৎসব উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলে জন্মেছেন বহু কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিক, সমাজসেবক, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। মনসামঙ্গল কাব্যের রচয়িতা কবি দ্বিজ বংশীদাস, বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী, শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী, সুকুমার রায়, বিখ্যাত ফার্সি গ্রন্থ শাহনামার অনুবাদক মনির উদ্দীন ইউসুফ, সাহিত্যিক অধ্যাপক নিরোদ চন্দ্র চৌধুরী, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়সহ বহু গুণী এ ভূখণ্ডে জন্মেছেন। তারা এ অঞ্চলকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে তুলে ধরেছেন বর্ণাঢ্যভাবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনের দর্পণ। সংস্কৃতিই ব্যক্তি, জাতি ও দেশের প্রকৃত পরিচয় বহন করে। আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহু পুরনো ও সমৃদ্ধশালী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘যতদিন বাংলার আকাশ-বাতাস থাকবে, ততদিন বাংলার সংস্কৃতি থাকবে।’
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট লোকগবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার। বক্তব্য দেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসজিডি মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সবুজ কলি সেন, ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের প্রপৌত্রি দেবকন্য সেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান শেলী, নেত্রকোনা উৎসব আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মতিয়র রহমান খান প্রমুখ।
এ সময় রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠানের সভাপতি মোস্তাফা জব্বারকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করেন। রাষ্ট্রপতিকে সাবেক উৎসব উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরু এবং নেত্রকোনা পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম খান ক্রেস্ট প্রদান করেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি মোক্তারপাড়া এলাকায় পুরাতন জেলখানায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিভিউশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
উৎসবে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলার লোকসংস্কৃতি শিল্পীদের অংশগ্রহণে গান, নৃত্য, নাটক পরিবেশিত হয়।