হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওরে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, হাওরের প্রধান ফসল হচ্ছে ধান। এক সময়ে হাওরে ধান কাটার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক আসতেন। এখন মানুষের জীবন মানের উন্নতি হওয়ায় তারা আর সেভাবে আসে না। তবে দেশে ধান কাটার প্রযুক্তি এসেছে।
হাওরের একটা সমস্যা হলো, ধান কাটার সময় জমিতে পানি থাকে। এখন এমন প্রযুক্তিও তৈরি হয়েছে যে, জমিতে কাদা থাকলেও ধান কাটা যায়। এছাড়া ড্রাই মেশিনে ধান শুকানোও যায়। এসব প্রযুক্তিগুলো আমাদের-আপনাদের কাজে লাগাতে হবে। প্রতিটি হাওরেই কৃষকের সুবিধার জন্য সাবমার্সেবল রাস্তা করা হচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হাওরের রাস্তায় ট্রাক্টর কোনোভাবেই যেন চলাচল করতে না পারে, এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন।
মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে ইটনা উপজেলা সদরের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত গণসংবর্ধনায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এসব কথা বলেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় নিজের সাবেক সংসদীয় আসনের ইটনা উপজেলায় রাষ্ট্রপতিকে এই গণসংবর্ধনা দেয়া হয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি আপনাদের সাথে দেখা করার জন্য এসেছি। আপনারা আমাকে ভালবাসেন, আমিও আপনাদেরকে ভালবাসি। হাওর এলাকার উন্নয়নে আমার তীব্র আকাংক্ষা ছিল। এক সময়ে হাওর এলাকাকে মানুষ চিনতো না। এখন হাওর এলাকাকে সবাই চেনে-জানেন।
ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে রাষ্ট্রপতি আগামী দিনেও তাঁর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তৃতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, কেবল বর্তমান সরকারি দল নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যারা নির্বাচন করবে, নির্বাচনটা প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই করা উচিত বলে আমি মনে করি। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের উচিত জনগণের কাছে যাওয়া, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা।
সুতরাং প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, এটা আমি কামনা করি। এমন সরকার আসুক, যে সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে মন্তব্য করে জনগণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার পর আপনারা অনেক সরকার দেখেছেন। এরমধ্যে কে আপনাদের উন্নয়ন করেছে, তা আপনারা ভাল জানেন। যারা উন্নয়ন করেছে তাদেরকে নির্বাচিত করা উচিত।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমি মনে করি, সব রাজনৈতিক দলেরই উচিত সৎ এবং নীতিবান লোকদের মনোনয়ন দেয়া। জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যাচাই করবেন, কাকে ভোট দিলে আপনাদের এলাকার উন্নয়ন হবে। দেশের উন্নয়ন হবে, দেশের কল্যাণ হবে, দেশ এগিয়ে যাবে।
নাগরিক কমিটি আয়োজিত এই গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন।
এতে অন্যদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য দিলারা বেগম আছমা, কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক, ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন মিল্কী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মানপত্র পাঠ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ইসলাম উদ্দীন।
এছাড়া গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, বিপিএমসহ বিভিন্ন সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পাঁচ দিনের সরকারি সফরে সাবেক নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরের তিন উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন সফরে সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে অষ্টগ্রামে অবতরণ করেন। মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তিনি হেলিকপ্টারযোগে অষ্টগ্রাম থেকে ইটনা উপজেলায় যান।
পাঁচদিনের এই সফরে রাষ্ট্রপতি বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হেলিকপ্টারযোগে ইটনা থেকে নিজ উপজেলা মিঠামইনে যাবেন। সেখানে বিকাল ৩টায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক সরকারি কলেজ মাঠে রাষ্ট্রপতিকে গণসংবর্ধনা দেয়া হবে।