ঢাকা ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওরেগুলোতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অবাধে শামুক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৯:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • ৫০৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওরগুলোতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অবাধে শামুক ধরা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র। শামুক ধরার পর প্রতি বস্তা শামুক বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। এদিকে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে শামুক নিধন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা উল্লেখ না থাকায় মৎস্য অধিদপ্তরও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

নিকলীসদর, দামপাড়া, কারপাশা, সিংপুর, জারুইতলা, গুরুই ও ছাতিরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওরে শামুক নিধন ও বিক্রি চলছে। হাঁসের খামার ও মৎস্য খামারের জন্য হাওরের শামুকের কদর থাকায় এসব খামারের মালিকদের নিকট বিক্রিও হচ্ছে শামুক।

সরেজমিনে গত প্রায় তিন সপ্তাহের বিভিন্ন সময়ে নিকলীর কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ‘ভাসান পানির’ মৌসুম থাকায় হাওর এলাকা অনেকটা সুনসান। মাছ ধরার জন্য নির্ধারিত জলমহালগুলোতে মৎস্যজীবীদের একটি অংশ শামুক ধরছে। শামুক ধরার পর বিক্রি করছে এরা।

এ উপজেলার হাওরগুলো থেকে শামুক ধরে সেগুলো বস্তাাবন্দী ও নৌকায় করে বিক্রির জন্য রাখা হয়। পরে হাঁসের খামার ও মৎস্য খামারের লোকজন সেগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় নদীর পাড়ে ১০-১২টি নৌকায় শামুক দেখা যায়। প্রতিটি নৌকায় প্রায় ১৫-২০ মণের মতো শামুক রয়েছে বলে জানা যায়। নিকলীর বড় হাওর, সোয়াইজনী নদী, করগাঁও খাল, পুড্ডার হাওর, কুর্শা হাওর, মহরকোনা হাওর, সিংপুর হাওর, নরসুন্দা নদী, এলাকা থেকে জেলেরা হর-হরি জাল দিয়ে শামুক সংগ্রহ করে।

হাওরের শামুককে ঘিরে নিকলীতে দুই শতাধিক হাসের খামার চলছে। শুধু হাসের খামার নয়, শামুককে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন অসংখ্য মাছের খামারি। হাওরে শামুক কিনতে আসেন অনেকেই। কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, হাঁসের খামার ও মাছের খামারের জন্য প্রতি বস্তা ২৫০-৩০০ টাকা দরে কিনছেন তাঁরা।

হাওর থেকে শামুক ধরে বিক্রি করেন এমন কয়েকজন বলেন, স্থানীয় মৎস্যজীবী হাসেঁর খামারীদের সঙ্গে আগেই যোগাযোগ করে শামুক বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করা থাকে। এরপর নৌকা বোঝাই করে শামুক এনে সেগুলো বস্তায় ভরা হয়,শামুক ধরার প্রতিটি নৌকায় তিনজন লোক নিয়োজিত থাকে সারা রাত শামুক ধরে সকালে সে গুলো বিক্রি করে জনপ্রতি ৭ থেকে ৮ শত টাকা করে তারা পায়।

নির্বিচারে শামুক ধরার বিষয়ে নিকলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো আবু সাঈদ বলেন, শামুক হাওরাঞ্চলের জলজ প্রাণীর জীবনচক্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। শামুক এভাবে আহরণ করা হলে হাওরের জীববৈচিত্র পুরোপুরি নষ্ট হবে। শামুকের প্রজননক্ষমতাও নষ্ট হবে। অনেক শামুক আছে, যেগুলো মাছের জন্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খায়। আবার মাছও শামুক খায়। শামুকের সংকট দেখা দিলে মাছেরও আকাল তীব্র হবে। শামুক ধরার ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকলেও শামুক নিধন রোধ করতে হাওরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে জানিয়েছেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওরেগুলোতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অবাধে শামুক

আপডেট টাইম : ১২:৫৯:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওরগুলোতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অবাধে শামুক ধরা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র। শামুক ধরার পর প্রতি বস্তা শামুক বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। এদিকে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে শামুক নিধন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা উল্লেখ না থাকায় মৎস্য অধিদপ্তরও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

নিকলীসদর, দামপাড়া, কারপাশা, সিংপুর, জারুইতলা, গুরুই ও ছাতিরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওরে শামুক নিধন ও বিক্রি চলছে। হাঁসের খামার ও মৎস্য খামারের জন্য হাওরের শামুকের কদর থাকায় এসব খামারের মালিকদের নিকট বিক্রিও হচ্ছে শামুক।

সরেজমিনে গত প্রায় তিন সপ্তাহের বিভিন্ন সময়ে নিকলীর কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ‘ভাসান পানির’ মৌসুম থাকায় হাওর এলাকা অনেকটা সুনসান। মাছ ধরার জন্য নির্ধারিত জলমহালগুলোতে মৎস্যজীবীদের একটি অংশ শামুক ধরছে। শামুক ধরার পর বিক্রি করছে এরা।

এ উপজেলার হাওরগুলো থেকে শামুক ধরে সেগুলো বস্তাাবন্দী ও নৌকায় করে বিক্রির জন্য রাখা হয়। পরে হাঁসের খামার ও মৎস্য খামারের লোকজন সেগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় নদীর পাড়ে ১০-১২টি নৌকায় শামুক দেখা যায়। প্রতিটি নৌকায় প্রায় ১৫-২০ মণের মতো শামুক রয়েছে বলে জানা যায়। নিকলীর বড় হাওর, সোয়াইজনী নদী, করগাঁও খাল, পুড্ডার হাওর, কুর্শা হাওর, মহরকোনা হাওর, সিংপুর হাওর, নরসুন্দা নদী, এলাকা থেকে জেলেরা হর-হরি জাল দিয়ে শামুক সংগ্রহ করে।

হাওরের শামুককে ঘিরে নিকলীতে দুই শতাধিক হাসের খামার চলছে। শুধু হাসের খামার নয়, শামুককে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন অসংখ্য মাছের খামারি। হাওরে শামুক কিনতে আসেন অনেকেই। কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, হাঁসের খামার ও মাছের খামারের জন্য প্রতি বস্তা ২৫০-৩০০ টাকা দরে কিনছেন তাঁরা।

হাওর থেকে শামুক ধরে বিক্রি করেন এমন কয়েকজন বলেন, স্থানীয় মৎস্যজীবী হাসেঁর খামারীদের সঙ্গে আগেই যোগাযোগ করে শামুক বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করা থাকে। এরপর নৌকা বোঝাই করে শামুক এনে সেগুলো বস্তায় ভরা হয়,শামুক ধরার প্রতিটি নৌকায় তিনজন লোক নিয়োজিত থাকে সারা রাত শামুক ধরে সকালে সে গুলো বিক্রি করে জনপ্রতি ৭ থেকে ৮ শত টাকা করে তারা পায়।

নির্বিচারে শামুক ধরার বিষয়ে নিকলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো আবু সাঈদ বলেন, শামুক হাওরাঞ্চলের জলজ প্রাণীর জীবনচক্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। শামুক এভাবে আহরণ করা হলে হাওরের জীববৈচিত্র পুরোপুরি নষ্ট হবে। শামুকের প্রজননক্ষমতাও নষ্ট হবে। অনেক শামুক আছে, যেগুলো মাছের জন্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খায়। আবার মাছও শামুক খায়। শামুকের সংকট দেখা দিলে মাছেরও আকাল তীব্র হবে। শামুক ধরার ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকলেও শামুক নিধন রোধ করতে হাওরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে জানিয়েছেন তিনি।