বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব নিখোঁজ সালাহউদ্দিন আহমেদের বিষয়ে সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ‘নির্বিকার’ রয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘তাহলে সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা কোথায়?’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির মতো একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব ও প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী, তার মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ নাগরিককে দীর্ঘদিন গায়েব করে রেখে যদি সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন নির্বিকার থাকতে পারে, তাহলে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা কোথায়?’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশে আইন ও প্রাতিষ্ঠানিকতা কি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে? কাউকে কি কখনো কিছুর দায় নিতে বা জবাবদিহি করতে হবে না?’
রোববার বিকেলে এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। এতে দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপনের স্বাক্ষর রয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তার পরিবারের কাছে ফেরৎ দেওয়ার দাবি জানান বিএনপি নেত্রী।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করছি যে, বিএনপির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি বাসা থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও, এখনো পর্যন্ত তার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।’
সালাহউদ্দিন আহমেদের জন্য তার পরিবার এবং দলের উৎকণ্ঠা দিন দিন আরো গভীর হচ্ছে জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমরা বারংবার তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করে আসছি। তার স্ত্রী, প্রাক্তন সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বারবার আবেদন করছেন, স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সালাহউদ্দিনকে নিয়ে নিষ্ঠুর কটাক্ষ করলেও তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেননি।’
সালাহউদ্দিনের বিষয়ে তার স্ত্রী থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি অভিযোগ করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘যদিও পুলিশ নিজে থেকে একটা জিডি করেছে, কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও তার সন্ধান আজও দেওয়া হয়নি।’
আওয়ামী লীগ সরকারের লাগাতার দুই আমলে বিএনপির অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী, বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু, হুমায়ুন কবির পারভেজ, ছাত্রদলের প্রাক্তন সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন ও সিলেটের ছাত্রনেতা ইফতেখার আহমদ দিদারসহ বিরোধী দলের বহু নেতা-কর্মীকে বলপূর্বক গায়েব করে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন তাদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে দীর্ঘ দিনেও সন্ধান পাওয়া যায়নি। জানা যায়নি তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে।
তিনি বলেন, ‘গুম করে ফেলা এসব নেতা-কর্মী ও নাগরিকদের স্বজনেরা প্রিয়জনের ফিরে আসার অপেক্ষায় উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছে। তারা জানেন না, তাদের নিখোঁজ স্বজনেরা আটক অবস্থায় বিনা বিচারে হত্যার শিকার হয়েছেন কি-না। খুনের শিকার হয়ে থাকলে, সেই খুনের বিচার দূরে থাকুক, লাশটি পর্যন্ত তারা পাননি। জানতে পারেননি মৃত্যুর তারিখটিও। সুযোগ পাননি প্রিয়জনের লাশ দাফন, কবর জিয়ারত কিংবা মৃত্যু দিবসে দোয়া খায়ের ও মাগফিরাত কামনা করার।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘দাবি করছি, সকল নাগরিকের বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা হোক। সর্বস্তরে স্বেচ্ছাচারিতার বদলে আইনের শাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক রীতি-নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হোক। আইনের প্রয়োগ, তদন্ত ও বিচারিক ক্ষেত্রে নৈরাজ্যের অবসান ঘটিয়ে শৃঙ্খলা ও নিয়ম-নীতি ফিরিয়ে আনা হোক।’