ঢাকা ০৪:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেট্রোরেলের কমলাপুর অংশ নিয়ে জটিলতা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
  • ৩ বার

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হওয়া মেট্রোরেলের বর্ধিতাংশ নিয়ে বিপাকে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের কাজের ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে চলছে জটিলতা। এ অংশের কাজের জন্য অতিরিক্ত দরপ্রস্তাব করেছে ভারতীয় ঠিকাদার।

বলা হচ্ছে আগের ১৬টি স্টেশনের কাজের চেয়ে চড়ামূল্যে অনুমোদন দিলে বিতর্ক বাড়তে পারে। আবার উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দিলে আরও দুই বছর বেশি সময় লাগবে। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় জানতে আজ মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের বোর্ডসভায় বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। সাধারণ হিসেবে ২০২৬ সালের মধ্যে কমলাপুর পর্যন্ত ট্রেন চালুর কথা। দেড় বছর ধরে ওই অংশের কার্যাদেশ নিয়ে জটিলতা চলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাইকার সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যমান ঠিকাদার দিয়ে কাজ করার কথা। অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স কাজের জন্য নতুন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিলে ইকুইপমেন্ট সরবরাহ নিয়ে বেগ পেতে পারে নতুন প্রতিষ্ঠান। ১৬টি স্টেশনের জন্য এক রকম ব্যবস্থা। এখন নতুন করে ভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিলে কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। কারণ ভিন্ন সার্ভার। ভিন্ন ব্যবস্থাপনা। তা ছাড়া ম্যানুফ্যাকচারার সময়মতো কাজ সরবরাহ করতে পারবে কিনা এ নিয়ে কিছুটা শঙ্কা আছে বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন প্যাকেজে সিগন্যালিং, টেলিকমিউকেশন, এনার্জি স্টোরেজসহ নানা বিষয় রয়েছে।

এ অবস্থায় কারিগরি জটিলতার আশঙ্কায় মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের কার্যাদেশ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। আবার বিনা দরপত্রে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজটি করালে চড়া দর গুনতে হবে। উন্মুক্ত দরপত্রে কাজ দিতে হলে জাইকার সঙ্গে চুক্তি সংশোধন করে ভেন্ডর নির্ধারণের সুযোগ হতে পারে। তবে পণ্য সরবরাহ নিয়ে অসুবিধা হয় কিনা তা খতিয়ে দেখতে হচ্ছে। আর এমআরটি-৬ প্রকল্পে নিযুক্ত অন্য ঠিকাদারদের মাধ্যমে তেমন কোনো প্রস্তাব মেলেনি ওই ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৭৪ কোটি টাকার দরপ্রস্তাব ৫৭০ কোটিতে ঠেকেছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া বলেন, কমলাপুর পর্যন্ত অংশ বিদ্যমান ঠিকাদারের মাধ্যমে ভেরিয়েশন করাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু চড়া দরপ্রস্তাবের কারণে সমস্যা হচ্ছে। নতুন করে দরপত্র শেষে পণ্য সরবরাহে আরও বোশি সময় লাগে কিনা, তাও দেখার বিষয়। এটি আগামী বোর্ডসভায় উত্থাপন করলে সিদ্ধান্ত আসবে আশা করি।

জানা গেছে, মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন হয়েছে ২০২২ সালে। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশ প্রথম ধাপে এবং ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ দ্বিতীয় ধাপে মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হয়েছে। বর্তমানে শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল রুটে এবং সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মতিঝিল থেকে উত্তরা উত্তর রুটে নির্ধারিত মেট্রো ট্রেন বাণিজ্যিকভাবে চলাচল করছে। এ ছাড়া গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ থেকে প্রতি শুক্রবার বিকাল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মেট্রো ট্রেন চলাচল করছে। ঠিকাদার বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক কাজের জন্য অতিরিক্ত হারের দরপ্রস্তাব করায় মেট্রোরেল কোম্পানিটি উত্তরা-মতিঝিল রুটের কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ সময়মতো শেষ করার ব্যাপারে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে।

২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইন ৬ (এমআরটি লাইন ৬) প্রকল্পের চুক্তির সপ্তম (সিপি ৭) প্যাকেজের জন্য একটি প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছিল। বিদ্যমান এমআরটি-৬ ব্যবস্থার সঙ্গে মেলে এমন নতুন সিস্টেম স্থাপনের যুক্তি দেখিয়ে নিয়ে অতিরিক্ত হার জমা দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে একটি অংশ মনে করছে, ঢাকা মেট্রোর কমলাপুর এক্সটেনশন প্রকল্প বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিকভাবে বেশকিছু বড় ঝুঁঁকি বহন করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিতকরণে প্রথম ১৬টি স্টেশনের তুলনায় অনেক বেশি মূল্য দাবি নিয়ে ঠিকাদারের একচেটিয়া মনোভাব ফুঠে ওঠে। তারা বলছেন, প্রকল্পের প্রকৃতি প্রায় একই রকম হওয়া সত্ত্বেও এই মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা নেই। যদি এই চুক্তি অনুমোদন করা হয়, তা হলে এটি ভবিষ্যতে অন্যান্য প্রকল্পগুলোর জন্যও একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যেখানে ঠিকাদাররা নিজেদের অবস্থান ব্যবহার করে অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের চেষ্টা করতে পারে। তা ছাড়া প্যাকেজটি শুধু একটি প্রকল্প নয়, বরং এটি পুরো মেট্রো-ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। তাই একটি মাত্র কোম্পানির ওপর নির্ভর করা অবকাঠামোগত দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করছে কেউ কেউ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মেট্রোরেলের কমলাপুর অংশ নিয়ে জটিলতা

আপডেট টাইম : ১০:৪৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হওয়া মেট্রোরেলের বর্ধিতাংশ নিয়ে বিপাকে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের কাজের ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে চলছে জটিলতা। এ অংশের কাজের জন্য অতিরিক্ত দরপ্রস্তাব করেছে ভারতীয় ঠিকাদার।

বলা হচ্ছে আগের ১৬টি স্টেশনের কাজের চেয়ে চড়ামূল্যে অনুমোদন দিলে বিতর্ক বাড়তে পারে। আবার উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দিলে আরও দুই বছর বেশি সময় লাগবে। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় জানতে আজ মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের বোর্ডসভায় বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। সাধারণ হিসেবে ২০২৬ সালের মধ্যে কমলাপুর পর্যন্ত ট্রেন চালুর কথা। দেড় বছর ধরে ওই অংশের কার্যাদেশ নিয়ে জটিলতা চলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাইকার সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যমান ঠিকাদার দিয়ে কাজ করার কথা। অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স কাজের জন্য নতুন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিলে ইকুইপমেন্ট সরবরাহ নিয়ে বেগ পেতে পারে নতুন প্রতিষ্ঠান। ১৬টি স্টেশনের জন্য এক রকম ব্যবস্থা। এখন নতুন করে ভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিলে কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। কারণ ভিন্ন সার্ভার। ভিন্ন ব্যবস্থাপনা। তা ছাড়া ম্যানুফ্যাকচারার সময়মতো কাজ সরবরাহ করতে পারবে কিনা এ নিয়ে কিছুটা শঙ্কা আছে বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন প্যাকেজে সিগন্যালিং, টেলিকমিউকেশন, এনার্জি স্টোরেজসহ নানা বিষয় রয়েছে।

এ অবস্থায় কারিগরি জটিলতার আশঙ্কায় মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের কার্যাদেশ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। আবার বিনা দরপত্রে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজটি করালে চড়া দর গুনতে হবে। উন্মুক্ত দরপত্রে কাজ দিতে হলে জাইকার সঙ্গে চুক্তি সংশোধন করে ভেন্ডর নির্ধারণের সুযোগ হতে পারে। তবে পণ্য সরবরাহ নিয়ে অসুবিধা হয় কিনা তা খতিয়ে দেখতে হচ্ছে। আর এমআরটি-৬ প্রকল্পে নিযুক্ত অন্য ঠিকাদারদের মাধ্যমে তেমন কোনো প্রস্তাব মেলেনি ওই ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৭৪ কোটি টাকার দরপ্রস্তাব ৫৭০ কোটিতে ঠেকেছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া বলেন, কমলাপুর পর্যন্ত অংশ বিদ্যমান ঠিকাদারের মাধ্যমে ভেরিয়েশন করাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু চড়া দরপ্রস্তাবের কারণে সমস্যা হচ্ছে। নতুন করে দরপত্র শেষে পণ্য সরবরাহে আরও বোশি সময় লাগে কিনা, তাও দেখার বিষয়। এটি আগামী বোর্ডসভায় উত্থাপন করলে সিদ্ধান্ত আসবে আশা করি।

জানা গেছে, মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন হয়েছে ২০২২ সালে। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশ প্রথম ধাপে এবং ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ দ্বিতীয় ধাপে মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হয়েছে। বর্তমানে শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল রুটে এবং সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মতিঝিল থেকে উত্তরা উত্তর রুটে নির্ধারিত মেট্রো ট্রেন বাণিজ্যিকভাবে চলাচল করছে। এ ছাড়া গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ থেকে প্রতি শুক্রবার বিকাল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মেট্রো ট্রেন চলাচল করছে। ঠিকাদার বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক কাজের জন্য অতিরিক্ত হারের দরপ্রস্তাব করায় মেট্রোরেল কোম্পানিটি উত্তরা-মতিঝিল রুটের কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ সময়মতো শেষ করার ব্যাপারে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে।

২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইন ৬ (এমআরটি লাইন ৬) প্রকল্পের চুক্তির সপ্তম (সিপি ৭) প্যাকেজের জন্য একটি প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছিল। বিদ্যমান এমআরটি-৬ ব্যবস্থার সঙ্গে মেলে এমন নতুন সিস্টেম স্থাপনের যুক্তি দেখিয়ে নিয়ে অতিরিক্ত হার জমা দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে একটি অংশ মনে করছে, ঢাকা মেট্রোর কমলাপুর এক্সটেনশন প্রকল্প বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিকভাবে বেশকিছু বড় ঝুঁঁকি বহন করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিতকরণে প্রথম ১৬টি স্টেশনের তুলনায় অনেক বেশি মূল্য দাবি নিয়ে ঠিকাদারের একচেটিয়া মনোভাব ফুঠে ওঠে। তারা বলছেন, প্রকল্পের প্রকৃতি প্রায় একই রকম হওয়া সত্ত্বেও এই মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা নেই। যদি এই চুক্তি অনুমোদন করা হয়, তা হলে এটি ভবিষ্যতে অন্যান্য প্রকল্পগুলোর জন্যও একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যেখানে ঠিকাদাররা নিজেদের অবস্থান ব্যবহার করে অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের চেষ্টা করতে পারে। তা ছাড়া প্যাকেজটি শুধু একটি প্রকল্প নয়, বরং এটি পুরো মেট্রো-ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। তাই একটি মাত্র কোম্পানির ওপর নির্ভর করা অবকাঠামোগত দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করছে কেউ কেউ।