ঢাকা ১১:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুলিশকে শক্ত থাকতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা : ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
  • ২ বার

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যেহেতু নির্বাচন আসছে, নানারকম সমস্যা হবে, নানারকম চাপ আসবে। সবাই ডেস্পারেট হয়ে যাবে। আমাদেরকে (পুলিশ বাহিনী) সেখানে শক্ত থাকতে হবে। আইনের ভেতরে থাকতে হবে। সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসবে, তারা যেন আইনের সরকার হয়। আইন ভেঙে যে আসবে সেই সরকার কোনোদিন আইন রাখতে পারবে না। কারণ তার ভাঙারই অভ্যাস। কাজেই এই সুযোগটা এমন যে ভবিষ্যতের সরকার যেন আইন মানার সরকার হয়। সেটারও দায়িত্ব তোমাদের হাতে, যেহেতু নির্বাচন তোমাদের (পুলিশ) হাত দিয়ে হবে। কারও কথা মানার দরকার নাই। আইন যা বলে তুমি আইনের ভেতরে থাকো। আমাদের শুধু ভয় হলো আবার যেন অন্ধকারে হারিয়ে না যাই। ছাত্ররা আমাদের রক্ষা করেছে, আবার যেন আমরা সেই গর্তে ঢুকে না যাই।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা ইতোমধ্যে সাত মাস পার করেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কি কি সংস্কার করতে চাই করে ফেলতে হবে। আপনারাও সংস্কারের কথা বলেছেন। কারো জন্য অপেক্ষা করে কোনো ফায়দা হবে না। কাজটা করতে হবে এবং সেটা আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এবং আইজিপি বাহারুল আলম। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহী পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, আমরা একটা যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছি। ৮ আগস্টের পর আমরা ভুলে গেছি যে, যুদ্ধ নাই, শেষ। কথা ঠিক না। আমরা একটা অনবরত যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছি। এটা যেন মনে থাকে। এই যুদ্ধাবস্থা থেকে আমাদের জয়ী হয়ে বেরিয়ে আসতে হবে। লোকে সুযোগ গ্রহণ করে, যারা পরাজিত শক্তি তারা সুযোগ গ্রহণ করে একটা কিছু উসকিয়ে দেবে, গোলমাল পাকিয়ে দেবে। এটা প্রথমেই আসবে পুলিশের নজরে। তার (পরাজিত শক্তি) চেষ্টাই হবে গোলযোগ পাকিয়ে দেওয়া। কারণ সে তো সম্মুখ যুদ্ধে আসতে পারছে না। এখানেও সম্মুখে থাকবে পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি নজরে রাখা এবং খেয়াল রাখা। তার মানে এই নয় যে, কাউকে সন্দেহের বশে কারাগারে নেওয়া।

তিনি বলেন, এই যুদ্ধাবস্থা ক্রমাগত ঘনীভ‚ত হবে। কালো মেঘ থেকে ঘূর্ণিঝড় হতে থাকবে। আমরা সতর্ক থাকলে এটা বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ নেই। নিত্যনতুনভাবে অপপ্রচার হবে। অপপ্রচারের একটা কারখানা আছে। তোমাদেরকেও দ্বিধার মধ্যে ফেলে দেবে, কাজেই সতর্ক থাকতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন উঠিয়ে দেওয়ার পর অনেকেই বলা শুরু করলো রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট পেয়ে যাবে। আমরা বলেছি যে, রোহিঙ্গাদের তো ডাটাবেজ ইউএনএইচসিআর’র কাছে আছে। বায়োমেট্রিক চেক করলেই বুঝে যাবে যে, এটা তো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। কারণ এই দুটো ডাটাবেজ কানেক্টেড হয়ে যাবে। তাহলে সেখানে আর সেই সুযোগ থাকবে না। পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষই ঠিক করবে কাজটা। কাজেই এখানে পুলিশ ভেরিফিকেশনের দরকার নেই, যেহেতু প্রযুক্তি আমাদের সাহায্য করছে। কয়েকদিনের মধ্যে স্টারলিংক চালু হয়ে যাবে। শুরু হয়ে গেলে দেখবেন ইন্টারনেটের গতি কেমন। এত দ্রæত গতির ইন্টারনেট আগে ছিল না। তাতে সব কিছু হাতের মুঠোয় চলে আসবে।

তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম সহজ করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি অনলাইনে মামলার আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি পুলিশ সুপারদের কাজের মূল্যায়নের ওপর জোর দেন, যাতে মাঠ পর্যায়ে প্রতিযোগিতা আরও গতিশীল হয়।

তিনি বলেন, পুলিশের কথা প্রসঙ্গে বারবার আমরা দুটো শব্দ বলছি- আইন ও শৃঙ্খলা। পুলিশের হাতেই এটাকে এক্সিকিউট করতে হবে। এই পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে সরকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানুষের অধিকার, নাগরিকের অধিকার-কিছুই থাকে না। আমরা পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখসারির মানুষ। তারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করলেই বাকি জিনিসগুলো হয়। আইন-শৃঙ্খলা না থাকলে যত বড় বড় চিন্তাই হোক, যত টাকাই থাকুক, কোনো কাজে আসবে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পুলিশকে শক্ত থাকতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা : ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে

আপডেট টাইম : ১০:৫৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যেহেতু নির্বাচন আসছে, নানারকম সমস্যা হবে, নানারকম চাপ আসবে। সবাই ডেস্পারেট হয়ে যাবে। আমাদেরকে (পুলিশ বাহিনী) সেখানে শক্ত থাকতে হবে। আইনের ভেতরে থাকতে হবে। সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসবে, তারা যেন আইনের সরকার হয়। আইন ভেঙে যে আসবে সেই সরকার কোনোদিন আইন রাখতে পারবে না। কারণ তার ভাঙারই অভ্যাস। কাজেই এই সুযোগটা এমন যে ভবিষ্যতের সরকার যেন আইন মানার সরকার হয়। সেটারও দায়িত্ব তোমাদের হাতে, যেহেতু নির্বাচন তোমাদের (পুলিশ) হাত দিয়ে হবে। কারও কথা মানার দরকার নাই। আইন যা বলে তুমি আইনের ভেতরে থাকো। আমাদের শুধু ভয় হলো আবার যেন অন্ধকারে হারিয়ে না যাই। ছাত্ররা আমাদের রক্ষা করেছে, আবার যেন আমরা সেই গর্তে ঢুকে না যাই।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা ইতোমধ্যে সাত মাস পার করেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কি কি সংস্কার করতে চাই করে ফেলতে হবে। আপনারাও সংস্কারের কথা বলেছেন। কারো জন্য অপেক্ষা করে কোনো ফায়দা হবে না। কাজটা করতে হবে এবং সেটা আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এবং আইজিপি বাহারুল আলম। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহী পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, আমরা একটা যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছি। ৮ আগস্টের পর আমরা ভুলে গেছি যে, যুদ্ধ নাই, শেষ। কথা ঠিক না। আমরা একটা অনবরত যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছি। এটা যেন মনে থাকে। এই যুদ্ধাবস্থা থেকে আমাদের জয়ী হয়ে বেরিয়ে আসতে হবে। লোকে সুযোগ গ্রহণ করে, যারা পরাজিত শক্তি তারা সুযোগ গ্রহণ করে একটা কিছু উসকিয়ে দেবে, গোলমাল পাকিয়ে দেবে। এটা প্রথমেই আসবে পুলিশের নজরে। তার (পরাজিত শক্তি) চেষ্টাই হবে গোলযোগ পাকিয়ে দেওয়া। কারণ সে তো সম্মুখ যুদ্ধে আসতে পারছে না। এখানেও সম্মুখে থাকবে পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি নজরে রাখা এবং খেয়াল রাখা। তার মানে এই নয় যে, কাউকে সন্দেহের বশে কারাগারে নেওয়া।

তিনি বলেন, এই যুদ্ধাবস্থা ক্রমাগত ঘনীভ‚ত হবে। কালো মেঘ থেকে ঘূর্ণিঝড় হতে থাকবে। আমরা সতর্ক থাকলে এটা বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ নেই। নিত্যনতুনভাবে অপপ্রচার হবে। অপপ্রচারের একটা কারখানা আছে। তোমাদেরকেও দ্বিধার মধ্যে ফেলে দেবে, কাজেই সতর্ক থাকতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন উঠিয়ে দেওয়ার পর অনেকেই বলা শুরু করলো রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট পেয়ে যাবে। আমরা বলেছি যে, রোহিঙ্গাদের তো ডাটাবেজ ইউএনএইচসিআর’র কাছে আছে। বায়োমেট্রিক চেক করলেই বুঝে যাবে যে, এটা তো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। কারণ এই দুটো ডাটাবেজ কানেক্টেড হয়ে যাবে। তাহলে সেখানে আর সেই সুযোগ থাকবে না। পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষই ঠিক করবে কাজটা। কাজেই এখানে পুলিশ ভেরিফিকেশনের দরকার নেই, যেহেতু প্রযুক্তি আমাদের সাহায্য করছে। কয়েকদিনের মধ্যে স্টারলিংক চালু হয়ে যাবে। শুরু হয়ে গেলে দেখবেন ইন্টারনেটের গতি কেমন। এত দ্রæত গতির ইন্টারনেট আগে ছিল না। তাতে সব কিছু হাতের মুঠোয় চলে আসবে।

তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম সহজ করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি অনলাইনে মামলার আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি পুলিশ সুপারদের কাজের মূল্যায়নের ওপর জোর দেন, যাতে মাঠ পর্যায়ে প্রতিযোগিতা আরও গতিশীল হয়।

তিনি বলেন, পুলিশের কথা প্রসঙ্গে বারবার আমরা দুটো শব্দ বলছি- আইন ও শৃঙ্খলা। পুলিশের হাতেই এটাকে এক্সিকিউট করতে হবে। এই পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে সরকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানুষের অধিকার, নাগরিকের অধিকার-কিছুই থাকে না। আমরা পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখসারির মানুষ। তারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করলেই বাকি জিনিসগুলো হয়। আইন-শৃঙ্খলা না থাকলে যত বড় বড় চিন্তাই হোক, যত টাকাই থাকুক, কোনো কাজে আসবে না।