সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে প্রায় সাত বছর পর নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এই পদে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এ নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের প্রায় ২০ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক পেতে যাচ্ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. জ্ঞানেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, সারা দেশে বিপুলসংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য পড়ে আছে। এর ওপর প্রতিদিনই প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষা ও বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পদগুলো দ্রুত পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সম্ভব হয়নি। এখন পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে প্রধান শিক্ষকের কতটি পদ শূন্য রয়েছে তার সংখ্যা নিরূপণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের এ-সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে বলেছে। চলতি মাসের মধ্যেই এ সংখ্যা নির্ধারণ করে পিএসসিতে পাঠানো হবে। এরপর নভেম্বর থেকে পিএসসি এসব পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ সহকারী শিক্ষকের মধ্য থেকে পদোন্নতি এবং ৩৫ শতাংশ নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে পূরণ করা হয়। এই পদে দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ থাকায় একাডেমিক সমস্যার পাশাপাশি সহকারী শিক্ষকদের মধ্যেও পদোন্নতি নিয়ে হতাশা বিরাজ করছে। সহকারী শিক্ষক হিসেবে সাত বছরের অভিজ্ঞতা, গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি এবং সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন অথবা ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন সম্পন্ন করা থাকলে প্রধান শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করা যায়।
দেশের প্রায় ৬৩ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালেয়ের প্রায় ২০ হাজার প্রধান শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বছর দুয়েক আগে সরকারীকরণের আওতায় আসা ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা। শূন্য পদে বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকরা চলতি দায়িত্ব হিসেবে পালন করছেন।
জানা গেছে, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ ২০০৯ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। একজন শিক্ষকের দায়ের করা মামলাকে কেন্দ্র করে এই নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ই এ পদে নিয়োগ দিত। কিন্তু গত বছরের ৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার (যদিও শেষ পর্যন্ত তাদের নন-গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে) পদমর্যাদায় উন্নীত করার ঘোষণা দেওয়ার পর এই পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া আর মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকেনি। এরপরও নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন করার স্বার্থে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা চেয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামতসহ তা উপস্থাপন করতে বলা হয়। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। তারা প্রধান শিক্ষক পদে নতুন নিয়োগ এবং পদোন্নতির বিষয়টি পিএসসির মাধ্যমে সম্পন্ন করার কথা বলেছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি পিএসসির অধীনে চলে যাওয়ায় এ পদে সহকারী শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সরাসরি পদোন্নতির আর সুযোগ হয়তো থাকবে না। সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদেরও পদোন্নতি পেতে প্রশাসনিক ও বিভাগীয় পরীক্ষায় অংশ নিতে হতে পারে। তবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএসসি অনুমোদন দিলে যাতে দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন করা যায় তার জন্য সারা দেশের সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের উপজেলাভিত্তিক জ্যেষ্ঠতার তালিকা করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
ড. জ্ঞানেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে যেসব শূন্যপদ পূরণ হবে, তার জন্য জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্যানেল লিস্ট তৈরির চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে। এতে করে কোনো এলাকায় প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে সঙ্গে সঙ্গে ওই তালিকা থেকে পূরণ করা সম্ভব হবে।