হাওর বার্তা ডেস্কঃ সড়কে কোনোভাবেই শৃঙ্খলা ফিরছে না। ফলে বন্ধ হচ্ছে না অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনা। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ঈদের ছুটি ও আগে-পরে মিলিয়ে গত সাত দিনে ঝরে গেছে ১০৯টি তাজা প্রাণ। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, এর মধ্যে ৬৮ জনই ছিল ব্যাটারিচালিত টমটম, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনার মতো ছোট ছোট গাড়ির যাত্রী। জাতীয় ২২টি মহাসড়কে এসব যানবাহন নিষিদ্ধ হলেও প্রায় কেউই তা মানছে না। আবার মানতে বাধ্য করার মতো কোনো উদ্যোগও খুব একটা চোখে পড়ে না। না মানার কিছু বাস্তব কারণও আছে। মহাসড়কের পাশে বা সমান্তরালে বিকল্প সড়ক বা লেন না থাকায় ছোটখাটো দূরত্বে মানুষ বাধ্য হয় এসব যানবাহনে চড়তে। আর এতেই ঘটে বড় বিপত্তি।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ছোট ছোট এ যানবাহনের বেশির ভাগ চালকেরই লাইসেন্স নেই, মহাসড়কে চলাচলের মতো দক্ষতা নেই, গাড়িগুলোর ফিটনেস নেই, গাড়ির নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাও খুব দুর্বল। এসব গাড়ি মহাসড়কে উঠে এলে দ্রুতগতির গাড়িগুলোর স্বচ্ছন্দ চলাচল ব্যাহত হয়। তদুপরি নিয়ম-কানুন না জানা ও না মানার কারণে দুর্ঘটনার হার বেড়ে যায়। এতে ছোট গাড়িগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত শনিবার নাটোর-পাবনা মহাসড়কের বড়াইগ্রামে বাস-লেগুনার সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ১৫ জন, সবাই লেগুনার যাত্রী। গত সোমবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীতে বাস-লেগুনার সংঘর্ষে প্রাণ গেছে ১১ জনের, তারাও ছিল লেগুনার যাত্রী। এ রকম দুর্ঘটনা সারা দেশে অহরহ ঘটছে। অনেক দিন ধরেই চলে আসছিল এমন নৈরাজ্য।
স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন, এমনকি অযান্ত্রিক যানবাহনও মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল, আর ঘটছিল একের পর এক দুর্ঘটনা। এসব কারণে ২০১৫ সালের ১ আগস্ট ২২টি মহাসড়কে অটোরিকশা, অটোটেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, শুরুতে এর যথেষ্ট সুফলও পাওয়া গিয়েছিল। দুর্ঘটনার হার অনেক কমে এসেছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের দুর্বলতায় ধীরে ধীরে মহাসড়কে আবার এসব যানবাহনের উপস্থিতি বেড়ে যায়। ঈদের ছুটিতে কিংবা ছুটির আগে ও পরে মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। যানবাহনগুলোর মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতাও থাকে। ফলে এ সময় দুর্ঘটনার হারও বেড়ে যায়। এবারের ঈদুল আজহায়ও তা-ই হয়েছে। শতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছে আরো অনেকে।
একতরফাভাবে ছোট যানবাহনকে দোষ দিলেও হবে না। দেখতে হবে, মানুষ কেন এসব যানবাহনে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। যে ২২টি সড়কে এসব যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেসব সড়কের অনেক স্থানেই কম দূরত্বে চলাচলের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। মহাসড়কে চলাচলকারী বাসে ওঠারও সুযোগ নেই। এ অবস্থায় এসব অঞ্চলের মানুষ বাধ্য হয়েই ছোট যানবাহনে চড়ে। তাই দুর্ঘটনার উচ্চহার কমাতে হলে আগে চলাচলের বিকল্প সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, তারপর নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। আমরা আশা করি, দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।