বিলুপ্ত ৭ ধারা নিয়ে আতঙ্কিত বিএনপি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে বিলুপ্ত ৭ ধারা নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ- আরপিওতে সংযোজন করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ‘অপচেষ্টা’ চলছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উল্লেখ্য, এর আগে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণার ১০ দিন আগে ৭ নম্বর ধারা বাদ দিয়ে বিএনপি দলীয় গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেয়। বিএনপির গঠনতন্ত্রে ৭ নম্বর ধারায় ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা’ শিরোনামে বলা আছে, ‘নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীপদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’ তাঁরা হলেন :

(ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দতি ব্যক্তি। (খ) দেউলিয়া, (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি, (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি। গতকাল রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে দলীয় গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সর্বসম্মত প্রস্তাবে বিলুপ্ত ৭ নম্বর ধারার অনুরূপ একটি ধারা নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিওতে সংযোজন করার অপচেষ্টা চলছে।’, ‘এরপর ওই ধারার দোহাই দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি-কে বিপর্যস্ত করতে ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছেন শেখ হাসিনা। মঈন-ফখরুদ্দীন যে কায়দায় বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করেছিল, সেই একই কায়দায় পুনরায় বিছানো হচ্ছে ষড়যন্ত্রের জাল।’, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করা হবে। এরই অংশ হিসেবে সরকারের সংস্থাগুলো নানামুখী তৎপরতায় যুক্ত হয়ে পড়েছে। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরকার তার বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিএনপির দলীয় গঠনতন্ত্র এবং নির্বাচন কমিশনের আরপিওসংক্রান্ত কিছু উদ্দেশ্যপূর্ণ রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করার জন্য মাঠে নেমেছে’ অভিযোগ ফখরুলের।তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে সপ্তম ধারা বাতিলসহ দলের গঠনতন্ত্রে সর্বশেষ সংশোধন করা হয়। যা পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়। ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য কাউন্সিলে দলীয় গঠনতন্ত্রের অংশ দলের সদস্যপদের আবেদনপত্র সংশোধন করে ‘আমি কখনোই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না’ এ বাক্যটি সংযোজন করা হয়। আমাদের জানামতে কোন দলের গঠনতন্ত্রে সদস্য পদ লাভের জন্য এমন ঘোষণা দেওয়ার বিধান নেই।’ তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত থেকে দুর্নীতির দায়ে ১৩ বছরের সাজা পেয়েও আদালতকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে সরকারের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এখনো সংসদে, মন্ত্রিসভায় এবং আওয়ামী লীগে তার সদস্যপদ ও নেতৃত্ব বহাল রেখেছেন।’

‘অথচ সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র নিয়ে কাল্পনিক সিন্ডিকেট-সংবাদ পরিবেশন করার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর একই রকম বক্তব্যে প্রমাণিত হয়, সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুটিল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে’ বলেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো-বিএনপি গঠনতন্ত্র থেকে যে ধারা বিলুপ্ত করেছে তার সঙ্গে মিল রেখে অনুরূপ একটি ধারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিওতে) অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্র তৈরি করা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির পক্ষ থেকে আমি ‘দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বিলুপ্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অপপ্রচার ও সরকারি ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) কোনো ধরনের সংশোধনী আনা হচ্ছে না। আরপিও সংশোধনের একটা উদ্যোগ আগে নেওয়া হয়েছিল। তবে সেটা এখন আর হচ্ছে না। ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, আরপিও সংশোধনের জন্য কয়েক মাস আগে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি একটি খসড়া তৈরি করে কমিশনে জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে হাতে যথেষ্ট সময় না থাকায় ইসি আপাতত আরপিও সংশোধনের চিন্তাভাবনা করছে না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর