ঢাকা ০১:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোগী দেখতে যাওয়ার প্রতিদান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৭:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
  • ১০ বার
ইসলামী শরিয়তে রোগীর সেবা করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। কোরআন ও হাদিসে রোগীর সেবা করার একাধিক পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একজন পেশাদার চিকিৎসক, যিনি হাসপাতাল থেকে বেতন পান বা রোগীর কাছ থেকে সম্মানী নেন, তিনি কি রোগীর শুশ্রূষা করার সওয়াব পাবেন? কেননা বাহ্যত তিনি অর্থ উপার্জনের জন্য রোগী দেখেন। উত্তর হলো, নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকও যদি তাঁর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার নিয়ত করেন এবং তাঁর আচরণে সদিচ্ছা প্রকাশ পায়, তবে তিনি সওয়াব পাবেন।

নিম্নে বিষয়টি আরো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।রোগীর দেখলে সওয়াব মেলে

সওয়াব লাভের জন্য রোগীর সেবা করা শর্ত নয়, বরং রোগীকে দেখতে যাওয়াই যথেষ্ট। আলী (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কোনো ব্যক্তি তার রুগ্ণ মুসলমান ভাইকে দেখতে গেলে সে না বসা পর্যন্ত জান্নাতের খেজুর আহরণ করতে থাকে। অতঃপর সে বসলে রহমত তাকে ঢেকে ফেলে।

সে ভোরবেলা তাকে দেখতে গেলে ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। সে সন্ধ্যাবেলা তাকে দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৪২)অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি রোগী দেখতে গেলে আকাশ থেকে একজন আহ্বানকারী তাকে ডেকে বলেন, তুমি উত্তম কাজ করেছ, তোমার পথ চলা কল্যাণময় হোক এবং তুমি জান্নাতে একটি বাসস্থান নির্ধারণ করে নিলে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৪৩)

রোগীর সেবায় আল্লাহর সেবা

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদিসে কুদসি থেকে বোঝা যায়, মানুষের সেবা করা আল্লাহর সেবা করার নামান্তর।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, হে মানব সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি আমাকে দেখনি, সে বলবে, হে আল্লাহ আপনাকে কিভাবে দেখব, অথচ আপনি দুজাহানের প্রতিপালক? তিনি বলবেন, তুমি জানো না আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল তুমি তাকে দেখনি, তুমি জানো না যদি তাকে দেখতে তবে আমাকে তার কাছে পেতে? (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৯)অর্থ গ্রহণ পুণ্য লাভে অন্তরায় নয়

রোগী দেখে বেতন বা নগদ অর্থ নেওয়া সওয়াব পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় নয়। কেননা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হলো নিয়ত ও নিষ্ঠার গুণে তিনি পার্থিব কাজকে পুণ্যের মর্যাদা দেন। যেমন পরিবারের জন্য খরচ করা ব্যক্তির পার্থিব দায়িত্ব। কিন্তু সওয়াবের নিয়ত করলে সে সওয়াব পাবে। উম্মু সালামা (রা.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! (আমার স্বামী) আবু সালামার সন্তান, যারা আমারও সন্তান, তাদের জন্য ব্যয় করলে আমার সওয়াব হবে? তিনি বললেন, তাদের জন্য ব্যয় কোরো।

তাদের প্রতি ব্যয় করার সওয়াব তুমি অবশ্যই পাবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪৬৭)সওয়াব পাওয়ার শর্ত

নির্ধারিত বেতন, ভাতা ও সম্মানী গ্রহণের পরও একজন চিকিৎসক সওয়াব পেতে পারেন, যদি তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত করেন এবং রোগীর সঙ্গে সদাচার করেন। শায়খ ওমর সুলাইমান আশকার (রহ.) বলেন, ‘জাগতিক কাজে নিযুক্ত মুসলিম কর্মীরা, যেমন—চিকিৎসক, প্রকৌশলী, গবেষক তারা নিজেদের কাজকে নেক নিয়তের মাধ্যমে পুণ্যে পরিণত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে এসব কাজের সুযোগ-সুবিধা পরিহার করা আবশ্যক নয়।’ (মাকাসিদুল মুকাল্লিফিন, পৃষ্ঠা ৪০০)

আল্লাহ সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করার তাওফিক দিন। আমিন।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রোগী দেখতে যাওয়ার প্রতিদান

আপডেট টাইম : ০৬:৩৭:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
ইসলামী শরিয়তে রোগীর সেবা করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। কোরআন ও হাদিসে রোগীর সেবা করার একাধিক পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একজন পেশাদার চিকিৎসক, যিনি হাসপাতাল থেকে বেতন পান বা রোগীর কাছ থেকে সম্মানী নেন, তিনি কি রোগীর শুশ্রূষা করার সওয়াব পাবেন? কেননা বাহ্যত তিনি অর্থ উপার্জনের জন্য রোগী দেখেন। উত্তর হলো, নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকও যদি তাঁর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার নিয়ত করেন এবং তাঁর আচরণে সদিচ্ছা প্রকাশ পায়, তবে তিনি সওয়াব পাবেন।

নিম্নে বিষয়টি আরো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।রোগীর দেখলে সওয়াব মেলে

সওয়াব লাভের জন্য রোগীর সেবা করা শর্ত নয়, বরং রোগীকে দেখতে যাওয়াই যথেষ্ট। আলী (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কোনো ব্যক্তি তার রুগ্ণ মুসলমান ভাইকে দেখতে গেলে সে না বসা পর্যন্ত জান্নাতের খেজুর আহরণ করতে থাকে। অতঃপর সে বসলে রহমত তাকে ঢেকে ফেলে।

সে ভোরবেলা তাকে দেখতে গেলে ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। সে সন্ধ্যাবেলা তাকে দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৪২)অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি রোগী দেখতে গেলে আকাশ থেকে একজন আহ্বানকারী তাকে ডেকে বলেন, তুমি উত্তম কাজ করেছ, তোমার পথ চলা কল্যাণময় হোক এবং তুমি জান্নাতে একটি বাসস্থান নির্ধারণ করে নিলে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৪৩)

রোগীর সেবায় আল্লাহর সেবা

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদিসে কুদসি থেকে বোঝা যায়, মানুষের সেবা করা আল্লাহর সেবা করার নামান্তর।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, হে মানব সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি আমাকে দেখনি, সে বলবে, হে আল্লাহ আপনাকে কিভাবে দেখব, অথচ আপনি দুজাহানের প্রতিপালক? তিনি বলবেন, তুমি জানো না আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল তুমি তাকে দেখনি, তুমি জানো না যদি তাকে দেখতে তবে আমাকে তার কাছে পেতে? (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৯)অর্থ গ্রহণ পুণ্য লাভে অন্তরায় নয়

রোগী দেখে বেতন বা নগদ অর্থ নেওয়া সওয়াব পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় নয়। কেননা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হলো নিয়ত ও নিষ্ঠার গুণে তিনি পার্থিব কাজকে পুণ্যের মর্যাদা দেন। যেমন পরিবারের জন্য খরচ করা ব্যক্তির পার্থিব দায়িত্ব। কিন্তু সওয়াবের নিয়ত করলে সে সওয়াব পাবে। উম্মু সালামা (রা.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! (আমার স্বামী) আবু সালামার সন্তান, যারা আমারও সন্তান, তাদের জন্য ব্যয় করলে আমার সওয়াব হবে? তিনি বললেন, তাদের জন্য ব্যয় কোরো।

তাদের প্রতি ব্যয় করার সওয়াব তুমি অবশ্যই পাবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪৬৭)সওয়াব পাওয়ার শর্ত

নির্ধারিত বেতন, ভাতা ও সম্মানী গ্রহণের পরও একজন চিকিৎসক সওয়াব পেতে পারেন, যদি তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত করেন এবং রোগীর সঙ্গে সদাচার করেন। শায়খ ওমর সুলাইমান আশকার (রহ.) বলেন, ‘জাগতিক কাজে নিযুক্ত মুসলিম কর্মীরা, যেমন—চিকিৎসক, প্রকৌশলী, গবেষক তারা নিজেদের কাজকে নেক নিয়তের মাধ্যমে পুণ্যে পরিণত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে এসব কাজের সুযোগ-সুবিধা পরিহার করা আবশ্যক নয়।’ (মাকাসিদুল মুকাল্লিফিন, পৃষ্ঠা ৪০০)

আল্লাহ সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করার তাওফিক দিন। আমিন।