সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পুঁজিবাজারে কারসাজি করা একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
হারুন অর রশীদ বলেন, পুঁজিবাজার স্পর্শকাতর জায়গা। এখানে অনেক বিনিয়োগকারী তাদের সর্বস্ব বিনিয়োগ করেন। অল্পতেই এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একটি স্বার্থান্বেষী চক্র মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে আসছিল। এ অভিযোগে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। গ্রেপ্তারকৃতরা মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর জন্য ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামে গোপন গ্রুপ ব্যবহার করে। এসব গ্রুপে শেয়ারবাজার সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য দেয় প্রতারকরা। বিভিন্ন প্রকার মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগে প্রকাশ করে দেয় তারা। এমনকি তারা বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের নামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে। এছাড়া, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিভিন্ন ইস্যুতে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে সেসব কোম্পানি সম্পর্কে অনলাইনে অপপ্রচার শুরু করে। এমনকি কোম্পানির অফিসগুলোতে হামলা করে। তারা বিভিন্ন শেয়ারের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে। এসব করার জন্য গোপনীয় গ্রুপ ব্যবহার করে প্রতারকরা। এসব গ্রুপের সদস্যদের একটি নির্দিষ্ট ফি দিয়ে গ্রুপে যুক্ত হতে হয়। শেয়ারে লাভ হলে লভ্যাংশ অংশ দিতে হয়। কিন্তু, লোকসান হলে তারা দায়িত্ব নেয় না।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত অন্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। অনলাইনে গুজব ছড়িয়ে যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে।
ডিবি প্রধান জানান, গ্রেপ্তার আমির হোসাইন ছদ্মনাম নূর নূরানী ব্যবহার করে গ্রুপগুলো পরিচালনা করে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামে ৮-১০টি গ্রুপ চালায় সে। নুরুল হক হারুন বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি পরিচয়ে অন্য সদস্যদের একত্রিত করে চাঁদাবাজি করে। আব্দুল কাইয়ুম রয়েল ক্যাপিটাল নামক ব্রোকারেজ হাউজের সঙ্গে যুক্ত। সে হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন শেয়ার সম্পর্কে তথ্য দেয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, প্রতারকরা পুঁজিবাজার ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিএসইসি, কমিশনের চেয়্যারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে আসছিল।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাতে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের (দক্ষিণ) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) সাইফুর রহমান আজাদের নেতৃত্বে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. আমির হোসাইন ওরফে নূর নূরানী (৩৭), নুরুল হক হারুন (৫২) এবং আব্দুল কাইয়ুমকে (৩৯) গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, গ্রেপ্তার ৩ জনের পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা সংশ্লিষ্ট ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া তারা আরও বেশ কয়েকজনের নাম জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, যারা নেপথ্যের কারিগর হিসেবে কাজ করে থাকেন। আশা করছি, দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।