ঢাকা ০২:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা উন্মাদনা কবে থেকে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৬:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জুন ২০১৮
  • ৩৮৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের বিশ্বকাপের সিংহভাগ জুড়ে থাকে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা নিয়ে উন্মাদনা। বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগে থেকেই রাস্তাঘাট পতাকায় ছেয়ে যায়। জার্মানি, ফ্রান্স বা স্পেনের মতো দলের সমর্থক থাকলেও মূলত ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা নিয়েই আলোচনা বেশি হয় বাংলাদেশে।

বিশ্বকাপ শুরুর আগে ঢাকার ছোট-বড় পোশাক কারখানা থেকে শুরু করে পাড়ার দর্জির দোকানেও যেসব পতাকা তৈরি হয় তার সিংহভাগই ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার।

চায়ের দোকানের আড্ডায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুবান্ধব, অফিসের সহকর্মীরাও এই এক মাস ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মত টেলিভিশনে বিশ্বকাপ ফুটবল দেখানো হয় ১৯৮২ সালে। প্রবীণ ফুটবল ভক্তদের মতে, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে ব্যাপক উম্মাদনার শুরুটা তখন থেকেই।

সে সময় আবাহনী-মোহামেডানের খেলা ছিল তরুণ ফুটবল ভক্তদের আলোচনার প্রধান বিষয়। তাই স্বভাবতই ছিয়াশির বিশ্বকাপ সেসময়কার তরুণদের মনে দাগ কাটে।

প্রবীণ সাংবাদিক নাজমুল আমিন কিরণ বলেন, বাংলাদেশের ফুটবলের স্বর্ণালী যুগ যখন শুরু হয় তখনই এই ফুটবল নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। ব্রাজিল আর্জেন্টিনা বরাবরই এদেশে ফেভারিট।

“একটা সময় পেলের কারণে ব্রাজিল, ম্যারাডোনার কারণে আর্জেন্টিনা”।

“তখন টিভি বলতেই ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন। চার বছর পর বিশ্বকাপ দেখাতো তাও সবগুলো ম্যাচ দেখাতো না”।
কিরণ বলেন, জার্মানী বা ফ্রান্সও তখন ভালো খেলতো কিন্তু ব্রাজিল অথবা আর্জেন্টিনার মতো তারকা খেলোয়াড় ছিল না। আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা, ব্রাজিলের পেলে প্রথমে, পরে রোনালদো, এখন আর্জেন্টিনার মেসি।

মূলত ছিয়াশি ও নব্বইয়ের বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার প্রদর্শনী মানুষকে আর্জেন্টিনার সমর্থনে উদ্বুদ্ধ করে। এরপর ম্যারাডোনার সমর্থকরাই আর্জেন্টিনার সমর্থন দিয়ে আসছে। এরপরের যুগটাই ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফুটবলে রাজত্ব করে।

১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ জেতে শক্তিশালী ইটালিকে হারিয়ে, ১৯৯৮ সালে ফাইনালে উঠে স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে হেরে যায়, ২০০২ সালে আবারো বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল।

মূলত: বাংলাদেশে টেলিভিশনে বিশ্বকাপ দেখানোর পর থেকে টানা পাঁচটি বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের দাপট থাকার কারণেই এই সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি হয় ও এই দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। কখনো এটা খুনসুটির পর্যায়ে থাকলেও, মারামারির মতো গুরুতর ঘটনাও ঘটেছে বাংলাদেশে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কয়েক দশক যাবত চা বিক্রি করছেন আব্দুল জলিল স্বপন, তিনি ঢাকায় আসেন ১৯৮৪ সালে। তিনি বলেন, ছিয়াশির বিশ্বকাপে খেলা দেখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে টিভি নিয়ে আসা হয়। প্রচুর মানুষ আসতো তখন খেলা দেখতে। তখনই ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সমর্থকগোষ্ঠী দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ব্রাজিলের ভক্তরা আর্জেন্টিনার ভক্তদের পছন্দ করে না, তেমনি আর্জেন্টিনার ভক্তরাও ব্রাজিলের ভক্তদের পছন্দ করতো না। “এটা অনেকটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থনের মতো হয়ে যায়”।

আর্জেন্টিনার একজন সমর্থক জাহিদ ই হাসানের মতে, আর্জেন্টিনার সমর্থক তৈরিতে টেলিভিশনেরর একটি বড় ভূমিকা আছে।

তিনি বলেন, টেলিভিশন আসার পর যে দুটি বিশ্বকাপ দেখতে পেরেছে বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা। তার প্রথমটিতে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, পরেরটিতে ফাইনাল খেলেছে। তাই এই দুটি বিশ্বকাপ এখানে বড় ভূমিকা পালন করেছে।

শুরুতে ম্যারাডোনার ব্যক্তিত্ব, খেলার ধরণ ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করে। মি. জাহিদের মতে, ম্যারাডোনাই আর্জেন্টিনার এতো বড় সমর্থক গোষ্ঠী তৈরির অন্যতম প্রভাবক।

ব্রাজিলের একজন সমর্থক শান্ত কৈরির মতে, ব্রাজিলের সমর্থক তৈরি হয়েছে দুটো প্রজন্মকে ঘিরে। প্রথমটি পেলের যুগ, ষাটের দশকে অনেকেই পেলের খেলার কারণে ব্রাজিল সমর্থন করতো কিন্তু তখন প্রচার বেশি ছিল না। তাই মাতামাতি কম ছিল।

এরপর নব্বইয়ের দশকে ফুটবল অঙ্গনে ব্রাজিলের উত্থান বড় ভূমিকা রাখে সমর্থক গোষ্ঠী তৈরিতে।

তবে খেলা ছাড়াও অনেকেই পারিবারিক কারণে ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা সমর্থন করে আসছেন।

সূত্র: বিবিসি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা উন্মাদনা কবে থেকে

আপডেট টাইম : ১২:১৬:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জুন ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের বিশ্বকাপের সিংহভাগ জুড়ে থাকে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা নিয়ে উন্মাদনা। বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগে থেকেই রাস্তাঘাট পতাকায় ছেয়ে যায়। জার্মানি, ফ্রান্স বা স্পেনের মতো দলের সমর্থক থাকলেও মূলত ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা নিয়েই আলোচনা বেশি হয় বাংলাদেশে।

বিশ্বকাপ শুরুর আগে ঢাকার ছোট-বড় পোশাক কারখানা থেকে শুরু করে পাড়ার দর্জির দোকানেও যেসব পতাকা তৈরি হয় তার সিংহভাগই ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার।

চায়ের দোকানের আড্ডায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুবান্ধব, অফিসের সহকর্মীরাও এই এক মাস ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মত টেলিভিশনে বিশ্বকাপ ফুটবল দেখানো হয় ১৯৮২ সালে। প্রবীণ ফুটবল ভক্তদের মতে, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে ব্যাপক উম্মাদনার শুরুটা তখন থেকেই।

সে সময় আবাহনী-মোহামেডানের খেলা ছিল তরুণ ফুটবল ভক্তদের আলোচনার প্রধান বিষয়। তাই স্বভাবতই ছিয়াশির বিশ্বকাপ সেসময়কার তরুণদের মনে দাগ কাটে।

প্রবীণ সাংবাদিক নাজমুল আমিন কিরণ বলেন, বাংলাদেশের ফুটবলের স্বর্ণালী যুগ যখন শুরু হয় তখনই এই ফুটবল নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। ব্রাজিল আর্জেন্টিনা বরাবরই এদেশে ফেভারিট।

“একটা সময় পেলের কারণে ব্রাজিল, ম্যারাডোনার কারণে আর্জেন্টিনা”।

“তখন টিভি বলতেই ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন। চার বছর পর বিশ্বকাপ দেখাতো তাও সবগুলো ম্যাচ দেখাতো না”।
কিরণ বলেন, জার্মানী বা ফ্রান্সও তখন ভালো খেলতো কিন্তু ব্রাজিল অথবা আর্জেন্টিনার মতো তারকা খেলোয়াড় ছিল না। আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা, ব্রাজিলের পেলে প্রথমে, পরে রোনালদো, এখন আর্জেন্টিনার মেসি।

মূলত ছিয়াশি ও নব্বইয়ের বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার প্রদর্শনী মানুষকে আর্জেন্টিনার সমর্থনে উদ্বুদ্ধ করে। এরপর ম্যারাডোনার সমর্থকরাই আর্জেন্টিনার সমর্থন দিয়ে আসছে। এরপরের যুগটাই ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফুটবলে রাজত্ব করে।

১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ জেতে শক্তিশালী ইটালিকে হারিয়ে, ১৯৯৮ সালে ফাইনালে উঠে স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে হেরে যায়, ২০০২ সালে আবারো বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল।

মূলত: বাংলাদেশে টেলিভিশনে বিশ্বকাপ দেখানোর পর থেকে টানা পাঁচটি বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের দাপট থাকার কারণেই এই সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি হয় ও এই দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। কখনো এটা খুনসুটির পর্যায়ে থাকলেও, মারামারির মতো গুরুতর ঘটনাও ঘটেছে বাংলাদেশে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কয়েক দশক যাবত চা বিক্রি করছেন আব্দুল জলিল স্বপন, তিনি ঢাকায় আসেন ১৯৮৪ সালে। তিনি বলেন, ছিয়াশির বিশ্বকাপে খেলা দেখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে টিভি নিয়ে আসা হয়। প্রচুর মানুষ আসতো তখন খেলা দেখতে। তখনই ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সমর্থকগোষ্ঠী দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ব্রাজিলের ভক্তরা আর্জেন্টিনার ভক্তদের পছন্দ করে না, তেমনি আর্জেন্টিনার ভক্তরাও ব্রাজিলের ভক্তদের পছন্দ করতো না। “এটা অনেকটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থনের মতো হয়ে যায়”।

আর্জেন্টিনার একজন সমর্থক জাহিদ ই হাসানের মতে, আর্জেন্টিনার সমর্থক তৈরিতে টেলিভিশনেরর একটি বড় ভূমিকা আছে।

তিনি বলেন, টেলিভিশন আসার পর যে দুটি বিশ্বকাপ দেখতে পেরেছে বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা। তার প্রথমটিতে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, পরেরটিতে ফাইনাল খেলেছে। তাই এই দুটি বিশ্বকাপ এখানে বড় ভূমিকা পালন করেছে।

শুরুতে ম্যারাডোনার ব্যক্তিত্ব, খেলার ধরণ ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করে। মি. জাহিদের মতে, ম্যারাডোনাই আর্জেন্টিনার এতো বড় সমর্থক গোষ্ঠী তৈরির অন্যতম প্রভাবক।

ব্রাজিলের একজন সমর্থক শান্ত কৈরির মতে, ব্রাজিলের সমর্থক তৈরি হয়েছে দুটো প্রজন্মকে ঘিরে। প্রথমটি পেলের যুগ, ষাটের দশকে অনেকেই পেলের খেলার কারণে ব্রাজিল সমর্থন করতো কিন্তু তখন প্রচার বেশি ছিল না। তাই মাতামাতি কম ছিল।

এরপর নব্বইয়ের দশকে ফুটবল অঙ্গনে ব্রাজিলের উত্থান বড় ভূমিকা রাখে সমর্থক গোষ্ঠী তৈরিতে।

তবে খেলা ছাড়াও অনেকেই পারিবারিক কারণে ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা সমর্থন করে আসছেন।

সূত্র: বিবিসি