হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহ বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সূরা বাকারা : ১৮৩)। ইসলামে রোজা ফরজ হওয়াসংক্রান্ত এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইসলাম-পূর্ব সব যুগেই রোজার বিধান ছিল। আলী (রা.) ও হাসান বসরি (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে, আদম (আ.) এর যুগ থেকে শুরু করে সব উম্মতের ওপরই রোজা ফরজ ছিল। মুুসা (আ.) এর রোজা প্রসঙ্গ কোরআন মজিদে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, মুসার জন্য আমি ৩০ রাত নির্ধারিত করি এবং আরো ১০ দ্বারা তা পূর্ণ করি, এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময় ৪০ রাতে পূর্ণ হয়।’ (সূরা আরাফ : ১৪২)।
মুুসা (আ.) তাওরাত প্রাপ্তির জন্য প্রথমে ৩০ দিন, পরে আরও ১০ দিন বাড়িয়ে মোট ৪০ দিন রোজাসহ ইতিকাফ অবস্থায় ধ্যানমগ্ন হয়ে থেকে ছিলেন। ইহুদিদের আশুরার রোজা ও দাউদ (আ.) এর রোজা প্রসঙ্গ হাদিসে বর্ণিত আছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করে। তিনি তাদের এ দিনের রোজার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বলল, এ দিনে মুসা (আ.) ফেরাউনের ওপর বিজয় লাভ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা (মুসলমানরা) মুসা (আ.) এর অধিক নিকটবর্তী। কাজেই তোমরাও রোজা পালন করো।’ (সুনান আদ-দারিমি : ২/৩৬)।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আল-আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, তুমি কি সব সময় রোজা রাখ আর রাতভর নামাজ আদায় করে থাক? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এরূপ করলে তোমার চোখ বসে যাবে এবং শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। যে বছরজুড়ে রোজা রাখল সে যেন রোজাই রাখল না। আর তুমি প্রতি মাসে তিন দিন করে রোজা রাখ তাই বছরজুড়ে রোজা রাখা বা বছরজুড়ে রোজা রাখার মতো। তিনি বললেন, আমি এর চেয়ে বেশি সামর্থ্য রাখি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে তুমি দাউদ (আ.) এর রোজা রাখ। তিনি একদিন রোজা রাখতেন আর একদিন রোজা ছেড়ে দিতেন। তিনি শত্রুর সম্মুখীন হলে পলায়ন করতেন না। (বোখারি ২/৬৯৮)। ইসলামে রোজার প্রবর্তন
ইসলাম-পূর্ব সব যুগেই রোজার বিধান থাকলেও সেসব শর্ত, প্রকৃতি ও ধারাবাহিকতায় ইসলামে রোজা ফরজ হয়নি। বরং ইসলামে রোজা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। আত্মিক, নৈতিক ও চারিত্রিক কল্যাণের আধার। রহমত, বরকত ও মাগফেরাত দ্বারা সমৃদ্ধ। স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে ভরপুর মাসব্যাপী এই রোজা দ্বিতীয় হিজরিতে ফরজ করা হয়। রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার দ্বিতীয় বছরে শাবান মাসের শেষ দশকে রমজানের রোজা আদায়ের নির্দেশনা আসে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের।
তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পুরো করে নিতে হবে। তা যাদেরকে অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদয়া একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর রোজা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানতে। রমাজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। আর কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পুরো করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্য ক্লেশকর তা চান না। এ জন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ (সূরা বাকারা : ১৮৩- ১৮৫)।
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা (১০ মহররম) এবং আইয়ামে বিয তথা চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর সেসব রোজার বিধান নফলে পরিণত হয়েছে। মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাজ তিন ধাপে পরিবর্তিত হয়েছে এবং রোজাও তিন ধাপে পরিবর্তিত হয়েছে। রোজার তিন ধাপের তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
প্রথম ধাপ : রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি মাসে তিন দিন (আইয়ামে বিয তথা চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা) এবং আশুরার রোজা (১০ মহররম) পালন করতেন।
দ্বিতীয় ধাপ : এরপর অবতীর্ণ হয় ‘(হে মোমিনরা! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পুরো করে নিতে হবে। তা যাদেরকে অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদয়া একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর রোজা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানতে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৩-১৮৪)। তখন যে চায় রোজা রাখে আর যে চায় রোজা না রেখে এর পরিবর্তে ফিদয়াÑ একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করে। এভাবে এক বছর যায়।
তৃতীয় ধাপ : এরপর অবতীর্ণ হয়Ñ ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। আর কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পুরো করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্য ক্লেশকর তা চান না। এ জন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)। তারপর থেকে রমজান মাস উপস্থিত হলে রোজার অবশ্যকতা প্রমাণিত হয়। আর মুসাফিরদের জন্য কাজা আদায় এবং রোজা আদায়ের সামর্থ্য নেই এমন বৃদ্ধদের জন্য ফিদয়া প্রদানের সুযোগ অব্যাহত থাকে। (আবু দাউদ : ১/ ১৯৭)।