ঢাকা ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাসপোর্ট যখন সোনার হরিণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৪:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ মে ২০১৮
  • ৩৮৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাহবুব আলম দুই সন্তান ও স্ত্রীর পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন গত ২০ মার্চ। তাঁকে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল ১২ এপ্রিল। সেদিন থেকেই ঘুরছেন। প্রতিবার নতুন নতুন তারিখ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাসপোর্ট আর হাতে পাচ্ছেন না। কবে পাবেন, তা-ও জানেন না।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে এ রকম অনেক মানুষের ভিড়। পাসপোর্ট নিতে আসা অনেকেই এ কক্ষ থেকে ও কক্ষে ঘুরছেন সমস্যার কথা জানতে। এ অবস্থা শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরের ১৬ জেলার পাসপোর্ট কার্যালয়ের চিত্রও একই রকম। ঢাকার বাইরে পাসপোর্ট কার্যালয়গুলোতেও আবেদনের স্তূপ জমছে। খালি হাতে ফিরে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান এ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, এমনিতেই রমজানের আগে চাহিদা বাড়ে। অনেক মানুষ ওমরাহ করতে যান। এর মধ্যে কুয়েত ও সৌদি আরব থেকে আট লাখ পাসপোর্টের চাহিদা এসেছে। এখন বই ছাপিয়ে কুলাতে পারছেন না। পবিত্র রমজানের মাঝামাঝি পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশা করছেন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পাসপোর্ট বই ছাপানোর যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছিল ১০ বছর আগে। ছাপাখানার কাজের গতি কমে গেছে। এতে বই ছাপা হচ্ছে কম। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এসব যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নের দিকে নজর নেই। তাঁরা তাকিয়ে আছেন ই-পাসপোর্টের দিকে। এ বছরই ই-পাসপোর্টের যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। ই-পাসপোর্ট চালু না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট বিতরণ কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সালমা বেগম। তিনি হজে যাবেন। তাঁর ভাতিজা দ্বীন ইসলাম গত ২২ এপ্রিল আবেদন করেছেন। তাঁর সম্ভাব্য পাসপোর্ট পাওয়ার দিন বলা হয়েছে ১ মে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট পাননি।

সায়মা রহমান গত রোববার এসেছিলেন পাসপোর্ট নিতে। সেদিন তাঁকে বলা হয় দুদিন পরে খোঁজ নিতে। বুধবারে এসে দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর জানানো হয়, নতুন বই না থাকায় এখন পাসপোর্ট দেওয়া যাবে না। ক্ষুব্ধ সায়মা বলেন, ‘ওনাদের বই নেই, সেটা আগে জানিয়ে দিলেই হতো।’

পাসপোর্ট না পেয়ে ফিরে যাওয়া সাতজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের মধ্যে জরুরি পাসপোর্ট আবেদনকারীও আছেন। রবিউল আলম নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘সাত হাজার টাকা দিলাম। তখনো তো বলতে পারত বই নাই। আর্জেন্টের টাকা নিয়া এখনো দিতেছে না। ২০ দিন হইয়া গেছে।’

ঢাকার বাইরের অবস্থা আরও করুণ। উত্তরবঙ্গের একটি জেলার পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বলেন, তাঁর অফিসে এক হাজারের বেশি পাসপোর্ট আবেদন পড়ে আছে। নতুন বই না পাওয়ায় তিনি দিতে পারছেন না। মানুষের রাগারাগি-গালাগালিও শুনতে হচ্ছে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানায়, দেশে প্রতিদিন পাসপোর্ট বইয়ের চাহিদা প্রায় ১৮ হাজার। বর্তমান পরিস্থিতিতে বই ছাপানো হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার। অর্থাৎ প্রতিদিন ছয় থেকে আট হাজার ছাপা হচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আট লাখ নতুন পাসপোর্টের আবেদন। কুয়েত, সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বৈধকরণের সুযোগ দিয়েছে ওই সব দেশের সরকার। এসব দেশের আট লাখ প্রবাসী পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন। এতে পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেছে। সব মিলে পাসপোর্ট নিয়ে মানুষের যে ভোগান্তি, তা শিগগির কমবে না বলেই মনে করছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও।

সূত্রঃ প্রথম আলো

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

পাসপোর্ট যখন সোনার হরিণ

আপডেট টাইম : ১১:২৪:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ মে ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাহবুব আলম দুই সন্তান ও স্ত্রীর পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন গত ২০ মার্চ। তাঁকে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল ১২ এপ্রিল। সেদিন থেকেই ঘুরছেন। প্রতিবার নতুন নতুন তারিখ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাসপোর্ট আর হাতে পাচ্ছেন না। কবে পাবেন, তা-ও জানেন না।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে এ রকম অনেক মানুষের ভিড়। পাসপোর্ট নিতে আসা অনেকেই এ কক্ষ থেকে ও কক্ষে ঘুরছেন সমস্যার কথা জানতে। এ অবস্থা শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরের ১৬ জেলার পাসপোর্ট কার্যালয়ের চিত্রও একই রকম। ঢাকার বাইরে পাসপোর্ট কার্যালয়গুলোতেও আবেদনের স্তূপ জমছে। খালি হাতে ফিরে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান এ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, এমনিতেই রমজানের আগে চাহিদা বাড়ে। অনেক মানুষ ওমরাহ করতে যান। এর মধ্যে কুয়েত ও সৌদি আরব থেকে আট লাখ পাসপোর্টের চাহিদা এসেছে। এখন বই ছাপিয়ে কুলাতে পারছেন না। পবিত্র রমজানের মাঝামাঝি পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশা করছেন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পাসপোর্ট বই ছাপানোর যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছিল ১০ বছর আগে। ছাপাখানার কাজের গতি কমে গেছে। এতে বই ছাপা হচ্ছে কম। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এসব যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নের দিকে নজর নেই। তাঁরা তাকিয়ে আছেন ই-পাসপোর্টের দিকে। এ বছরই ই-পাসপোর্টের যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। ই-পাসপোর্ট চালু না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট বিতরণ কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সালমা বেগম। তিনি হজে যাবেন। তাঁর ভাতিজা দ্বীন ইসলাম গত ২২ এপ্রিল আবেদন করেছেন। তাঁর সম্ভাব্য পাসপোর্ট পাওয়ার দিন বলা হয়েছে ১ মে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট পাননি।

সায়মা রহমান গত রোববার এসেছিলেন পাসপোর্ট নিতে। সেদিন তাঁকে বলা হয় দুদিন পরে খোঁজ নিতে। বুধবারে এসে দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর জানানো হয়, নতুন বই না থাকায় এখন পাসপোর্ট দেওয়া যাবে না। ক্ষুব্ধ সায়মা বলেন, ‘ওনাদের বই নেই, সেটা আগে জানিয়ে দিলেই হতো।’

পাসপোর্ট না পেয়ে ফিরে যাওয়া সাতজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের মধ্যে জরুরি পাসপোর্ট আবেদনকারীও আছেন। রবিউল আলম নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘সাত হাজার টাকা দিলাম। তখনো তো বলতে পারত বই নাই। আর্জেন্টের টাকা নিয়া এখনো দিতেছে না। ২০ দিন হইয়া গেছে।’

ঢাকার বাইরের অবস্থা আরও করুণ। উত্তরবঙ্গের একটি জেলার পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বলেন, তাঁর অফিসে এক হাজারের বেশি পাসপোর্ট আবেদন পড়ে আছে। নতুন বই না পাওয়ায় তিনি দিতে পারছেন না। মানুষের রাগারাগি-গালাগালিও শুনতে হচ্ছে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানায়, দেশে প্রতিদিন পাসপোর্ট বইয়ের চাহিদা প্রায় ১৮ হাজার। বর্তমান পরিস্থিতিতে বই ছাপানো হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার। অর্থাৎ প্রতিদিন ছয় থেকে আট হাজার ছাপা হচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আট লাখ নতুন পাসপোর্টের আবেদন। কুয়েত, সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বৈধকরণের সুযোগ দিয়েছে ওই সব দেশের সরকার। এসব দেশের আট লাখ প্রবাসী পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন। এতে পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেছে। সব মিলে পাসপোর্ট নিয়ে মানুষের যে ভোগান্তি, তা শিগগির কমবে না বলেই মনে করছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও।

সূত্রঃ প্রথম আলো