ঢাকা ১০:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাহাকারের পর উৎসব এলো হাওরে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫১:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মে ২০১৮
  • ৫৬৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওর এলাকা দূর থেকে দেখতে যতটা মনোমুগ্ধকর, উদার, বিস্তীর্ণ খোলামেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মনে হয়, কাছ থেকে এসে দেখলে ঠিক ততটাই এই হাওর এলাকার জীবনমানই অনিশ্চিত ও দুর্বিষহ। এখানকার মানুষ জন্মের পর থেকে দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে থাকেন। এই দুর্যোগ কখনো মানবসৃষ্ট, কখনো প্রাকৃতিক। হাওর এলাকা মানুষের জন্য কখনো আশীর্বাদ, আবার কখনো অভিশাপ।

২০১৭ সাল সুনামগঞ্জের জন্য অভিশাপ হয়েই এসেছিল। কারণ, স্মরণকালের ভয়াবহ মানবসৃষ্ট এবং একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে এসেছিল। গত বছর সুনামগঞ্জ জেলায় একমাত্র বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় প্রতিটি হাওরপাড়ে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল। মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করেছে। আগাম ভারি বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলে জেলার একমাত্র বোরো ধানের শতভাগই হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানির নিচে তলিয়ে যায়। আর সেই ধান পানিতে পচে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সৃষ্টির ফলে সব হাওর ও নদীর মাছ মরে সাফ হয়ে গিয়েছিল। আর গো-খাদ্যের অভাবে মানুষ পানির দামে সব গরু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল। ওই সময় দুর্যোগে হাহাকার ছাড়া হাওরপাড়ে চোখে পড়ার মতো ছিল না। হাওরের যাঁরা অবস্থাসম্পন্ন ছিলেন, তাঁরা নীরবে কেঁদেছেন। সব হারিয়ে সারা রাত লাইনে ১০ টাকা দামের টিএসসির পাঁচ কেজির চালের জন্য সকাল ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। কোনো দিন চাল পেয়েছেন, কোনো দিন চাল শেষ হয়ে যাওয়ায় খালি হাতেই বাড়ি ফিরেছেন।

কিন্তু গত তিন বছর পর মানুষের জন্য এই হাওরই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে। কারণ, গত বছর যখন এই সময়টাতে হাওরে ফসলের জন্য হাহাকার ছিল, ঠিক এ বছর একই সময়ে মানুষ ধান কাটতে ও তা শুকিয়ে গোলায় তোলার উৎসব পালন করছেন। এই উৎসবমুখর পরিবেশ যে শুধু কৃষকদের জন্য তা নয়, বরং তিন বছর পর ধান আসায় হাওর এলাকার প্রত্যেক মানুষ এ উৎসবে যোগ দিয়েছেন। কৃষক ধান কেটে হাওর এলাকায় জড়ো করছেন আর কিষানিরা সেই ধান মাড়াই করে শুকাতে দিচ্ছেন খলাতে। তাঁদের সঙ্গে বৃদ্ধ থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণির স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীও যোগ দিয়েছে।হাওরের পাশের উঁচু জায়গায় ধান শুকানোর খলা তৈরি করা হয়। আর সেখানে সকাল থেকে রাতের অন্ধকার নামার আগ পর্যন্ত কিষান-কিষানি, বৃদ্ধ, শিশু সবাই একসঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ধান নেড়ে দিচ্ছেন, তো কেউ কুলা দিয়ে ধান থেকে খড় ছাড়াচ্ছেন তো কেউ শুকানো ধান বস্তায় ভরে অন্যজনের কাঁধে তুলে দিচ্ছেন। স্কুল-কলেজপড়ুয়ারা বড়দের সহায়তা করছেন। মোটামুটি সুনামগঞ্জের প্রতিটি হাওরের দৃশ্যই এমন।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মদনপুর প্রামের দেখার হাওরপাড়ের আছদ্দর আলী (৭০) বলেন, ‘আমার দীর্ঘ জীবনে গত বছর যে ফসলডুবি হয়েছে, তা দেখিনি। শুধু আমি না, আমার মতো আর কেউ দেখেনি। আমার সব ফসল দেখার হাওরে পানির নিচে ছিল। আমি প্রতিদিন সকালে এসে পানি দেখতাম আর কাঁদতাম। নিজের চোখের সামনে সোনার ফসল পচতে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। ধান কাঁচা থাকায় কয়দিন পানির নিচে থাকার পর পচে গিয়েছিল। আর দুই বছর আগে মাত্র অর্ধেক ধান তুলেছিলাম। কিন্তু এ বছর আল্লায় মুখ তুলে চেয়েছেন। আমার ২০ একর জমির মধ্যে ৪০০ মণ বোরো ধান হয়েছে। আমি ক্ষেত থেকে সব ধান কেটে ফেলেছি। এখন রোদ দিলে শুকিয়ে ঘরে নেব।’

ওই একই গ্রামের বাসিন্দা আকসা বিবি (৬০)জানান, তিনি গত বছর ছেলের বউদের নিয়ে খলা তৈরি করেছিলেন ধান কাটার পর শুকানোর জন্য। কিন্তু বাঁধ ভেঙে তাঁর ছেলেদের লাগানো সব ধান পানিতে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এ বছর তিনি তার নাতি-নাতনি ছেলে স্ত্রীসহ সেই একই খলাতে ধান শুকাচ্ছেন।

দুবাইপ্রবাসী সুজন মিয়া (৩৪) জানান, তিনি দুবাইতে ১৪ বছর ধরে একটি হোটেলে কাজ করেন। গত বছরও তিনি ধান চাষ করেছিলেন, কিন্তু সব ধান চলে গিয়েছিল। তাই এ বছর ধান পাকার খবর শুনেই দুবাই থেকে চলে এসেছেন শখের বশে। কারণ, গত কয়েক বছরে এবারই ভালো ধান হয়েছে। তাই সবার সঙ্গে ধান শুকাতে ও ঘরে নিতে অন্যদের সহায়তা করছেন।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘গত বছর সবশেষ শনির হাওরের ধান তলিয়েছিল। আমরা তাহিরপুরের সব মানুষ দিন-রাত চেষ্টা করে বাঁধটি টিকিয়ে রেখেছিলাম; কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারিনি। কিন্তু এ বছর দৃশ্য ভিন্ন। তাহিরপুরের সব হাওরে মানুষ হাসিমুখে ধান কাটছে। তাহিরপুরে এখন পর্যন্ত অর্ধেক ধান কাটা হয়েছে। শ্রমিক সংকট আছে, তারপরও আরো কয়েক দিনের মধ্যে সব ধান কেটে ফেলা যাবে যদি না বড় ধরনের কোনো বিপদ না আসে।’

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাওর অংর্শের ৮৫ ভাগ ধান কেটে ফেলা হয়েছে। যদিও কয়েক দিন বৃষ্টিপাত হয়েছে, তারপরও হাওর এলাকায় এখনো পানি ততটা হয়নি। এ দু-চার দিন যে সময় আছে, তাতে হাওর অংশের সব ধান কেটে ফেলা সম্ভব হবে। তবে সুনামগঞ্জে ধান কাটার শ্রমিক সংকট থাকায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে, নইলে এত দিনে সব ধান কেটে ফেলা সম্ভব হতো। তারপরও যদি আরো দু-চার দিন টানা বৃষ্টিপাতও হয়, তাতে আশা করি, কোনো ধানের ক্ষতি হবে না। আমরা আশা করছি, এ বছর বোরো ধান বাংলাদেশের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার রেকর্ড করবে।’

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম সাংবাদিককে বলেন, ‘এ বছর সঠিক সময়ে বাঁধ নির্মাণ, সঠিকভাবে বাঁধের তদারকি করায় ভালো ধান হয়েছে। আমরা আশা করছি, যদি আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, তাহলে সব ধান গোলায় তুলে ফেলার পর কৃষকদের নিয়ে বড় পরিসরে নবান্ন উৎসব পালন করব।’

গত বছর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ঠিকাদারদের সীমাহীন দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারণে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার সব ছোট-বড় হাওরের শতভাগ ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেইসঙ্গে ধান পানির নিচে পচে অ্যামেনিয়া গ্যাস সৃষ্টির ফলে সব হাওর ও নদীর মাছ মরে যায়। হাওর এলাকার মানুষের ঘরে খাদ্য না থাকায় এবং সব এলাকা পানির নিচে থাকায় গো-খাদ্যের অভাবে সব গরু বিক্রি করে দিয়েছিল।

সূত্রঃ এন টিভি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

হাহাকারের পর উৎসব এলো হাওরে

আপডেট টাইম : ১০:৫১:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মে ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওর এলাকা দূর থেকে দেখতে যতটা মনোমুগ্ধকর, উদার, বিস্তীর্ণ খোলামেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মনে হয়, কাছ থেকে এসে দেখলে ঠিক ততটাই এই হাওর এলাকার জীবনমানই অনিশ্চিত ও দুর্বিষহ। এখানকার মানুষ জন্মের পর থেকে দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে থাকেন। এই দুর্যোগ কখনো মানবসৃষ্ট, কখনো প্রাকৃতিক। হাওর এলাকা মানুষের জন্য কখনো আশীর্বাদ, আবার কখনো অভিশাপ।

২০১৭ সাল সুনামগঞ্জের জন্য অভিশাপ হয়েই এসেছিল। কারণ, স্মরণকালের ভয়াবহ মানবসৃষ্ট এবং একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে এসেছিল। গত বছর সুনামগঞ্জ জেলায় একমাত্র বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় প্রতিটি হাওরপাড়ে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল। মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করেছে। আগাম ভারি বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলে জেলার একমাত্র বোরো ধানের শতভাগই হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানির নিচে তলিয়ে যায়। আর সেই ধান পানিতে পচে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সৃষ্টির ফলে সব হাওর ও নদীর মাছ মরে সাফ হয়ে গিয়েছিল। আর গো-খাদ্যের অভাবে মানুষ পানির দামে সব গরু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল। ওই সময় দুর্যোগে হাহাকার ছাড়া হাওরপাড়ে চোখে পড়ার মতো ছিল না। হাওরের যাঁরা অবস্থাসম্পন্ন ছিলেন, তাঁরা নীরবে কেঁদেছেন। সব হারিয়ে সারা রাত লাইনে ১০ টাকা দামের টিএসসির পাঁচ কেজির চালের জন্য সকাল ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। কোনো দিন চাল পেয়েছেন, কোনো দিন চাল শেষ হয়ে যাওয়ায় খালি হাতেই বাড়ি ফিরেছেন।

কিন্তু গত তিন বছর পর মানুষের জন্য এই হাওরই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে। কারণ, গত বছর যখন এই সময়টাতে হাওরে ফসলের জন্য হাহাকার ছিল, ঠিক এ বছর একই সময়ে মানুষ ধান কাটতে ও তা শুকিয়ে গোলায় তোলার উৎসব পালন করছেন। এই উৎসবমুখর পরিবেশ যে শুধু কৃষকদের জন্য তা নয়, বরং তিন বছর পর ধান আসায় হাওর এলাকার প্রত্যেক মানুষ এ উৎসবে যোগ দিয়েছেন। কৃষক ধান কেটে হাওর এলাকায় জড়ো করছেন আর কিষানিরা সেই ধান মাড়াই করে শুকাতে দিচ্ছেন খলাতে। তাঁদের সঙ্গে বৃদ্ধ থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণির স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীও যোগ দিয়েছে।হাওরের পাশের উঁচু জায়গায় ধান শুকানোর খলা তৈরি করা হয়। আর সেখানে সকাল থেকে রাতের অন্ধকার নামার আগ পর্যন্ত কিষান-কিষানি, বৃদ্ধ, শিশু সবাই একসঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ধান নেড়ে দিচ্ছেন, তো কেউ কুলা দিয়ে ধান থেকে খড় ছাড়াচ্ছেন তো কেউ শুকানো ধান বস্তায় ভরে অন্যজনের কাঁধে তুলে দিচ্ছেন। স্কুল-কলেজপড়ুয়ারা বড়দের সহায়তা করছেন। মোটামুটি সুনামগঞ্জের প্রতিটি হাওরের দৃশ্যই এমন।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মদনপুর প্রামের দেখার হাওরপাড়ের আছদ্দর আলী (৭০) বলেন, ‘আমার দীর্ঘ জীবনে গত বছর যে ফসলডুবি হয়েছে, তা দেখিনি। শুধু আমি না, আমার মতো আর কেউ দেখেনি। আমার সব ফসল দেখার হাওরে পানির নিচে ছিল। আমি প্রতিদিন সকালে এসে পানি দেখতাম আর কাঁদতাম। নিজের চোখের সামনে সোনার ফসল পচতে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। ধান কাঁচা থাকায় কয়দিন পানির নিচে থাকার পর পচে গিয়েছিল। আর দুই বছর আগে মাত্র অর্ধেক ধান তুলেছিলাম। কিন্তু এ বছর আল্লায় মুখ তুলে চেয়েছেন। আমার ২০ একর জমির মধ্যে ৪০০ মণ বোরো ধান হয়েছে। আমি ক্ষেত থেকে সব ধান কেটে ফেলেছি। এখন রোদ দিলে শুকিয়ে ঘরে নেব।’

ওই একই গ্রামের বাসিন্দা আকসা বিবি (৬০)জানান, তিনি গত বছর ছেলের বউদের নিয়ে খলা তৈরি করেছিলেন ধান কাটার পর শুকানোর জন্য। কিন্তু বাঁধ ভেঙে তাঁর ছেলেদের লাগানো সব ধান পানিতে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এ বছর তিনি তার নাতি-নাতনি ছেলে স্ত্রীসহ সেই একই খলাতে ধান শুকাচ্ছেন।

দুবাইপ্রবাসী সুজন মিয়া (৩৪) জানান, তিনি দুবাইতে ১৪ বছর ধরে একটি হোটেলে কাজ করেন। গত বছরও তিনি ধান চাষ করেছিলেন, কিন্তু সব ধান চলে গিয়েছিল। তাই এ বছর ধান পাকার খবর শুনেই দুবাই থেকে চলে এসেছেন শখের বশে। কারণ, গত কয়েক বছরে এবারই ভালো ধান হয়েছে। তাই সবার সঙ্গে ধান শুকাতে ও ঘরে নিতে অন্যদের সহায়তা করছেন।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘গত বছর সবশেষ শনির হাওরের ধান তলিয়েছিল। আমরা তাহিরপুরের সব মানুষ দিন-রাত চেষ্টা করে বাঁধটি টিকিয়ে রেখেছিলাম; কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারিনি। কিন্তু এ বছর দৃশ্য ভিন্ন। তাহিরপুরের সব হাওরে মানুষ হাসিমুখে ধান কাটছে। তাহিরপুরে এখন পর্যন্ত অর্ধেক ধান কাটা হয়েছে। শ্রমিক সংকট আছে, তারপরও আরো কয়েক দিনের মধ্যে সব ধান কেটে ফেলা যাবে যদি না বড় ধরনের কোনো বিপদ না আসে।’

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাওর অংর্শের ৮৫ ভাগ ধান কেটে ফেলা হয়েছে। যদিও কয়েক দিন বৃষ্টিপাত হয়েছে, তারপরও হাওর এলাকায় এখনো পানি ততটা হয়নি। এ দু-চার দিন যে সময় আছে, তাতে হাওর অংশের সব ধান কেটে ফেলা সম্ভব হবে। তবে সুনামগঞ্জে ধান কাটার শ্রমিক সংকট থাকায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে, নইলে এত দিনে সব ধান কেটে ফেলা সম্ভব হতো। তারপরও যদি আরো দু-চার দিন টানা বৃষ্টিপাতও হয়, তাতে আশা করি, কোনো ধানের ক্ষতি হবে না। আমরা আশা করছি, এ বছর বোরো ধান বাংলাদেশের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার রেকর্ড করবে।’

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম সাংবাদিককে বলেন, ‘এ বছর সঠিক সময়ে বাঁধ নির্মাণ, সঠিকভাবে বাঁধের তদারকি করায় ভালো ধান হয়েছে। আমরা আশা করছি, যদি আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, তাহলে সব ধান গোলায় তুলে ফেলার পর কৃষকদের নিয়ে বড় পরিসরে নবান্ন উৎসব পালন করব।’

গত বছর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ঠিকাদারদের সীমাহীন দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারণে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার সব ছোট-বড় হাওরের শতভাগ ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেইসঙ্গে ধান পানির নিচে পচে অ্যামেনিয়া গ্যাস সৃষ্টির ফলে সব হাওর ও নদীর মাছ মরে যায়। হাওর এলাকার মানুষের ঘরে খাদ্য না থাকায় এবং সব এলাকা পানির নিচে থাকায় গো-খাদ্যের অভাবে সব গরু বিক্রি করে দিয়েছিল।

সূত্রঃ এন টিভি