হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামীতে র্যাবের সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও তিনটি ব্যাটালিয়ন বাড়ানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র্যাবের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় (৩ মে, বৃহস্পতিবার) র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান আধুনিক ও যুগোপযুগী হবে।
আমরা যেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারি। সেজন্য পুলিশের বিশেষায়িত ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) অত্যাধুনিক, ত্রিমাত্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। সেজন্য বাজেটও দিয়েছি। আগামীতে র্যাবের সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও তিনটি ব্যাটালিয়ন বাড়ানো হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নে আমরা অনেক কিছু ঢেলে সাজাচ্ছি। সুন্দরবনের নিরাপত্তাসহ আরও ৩টি ব্যাটালিয়ন প্রয়োজন র্যাবের সেটা করে দেয়া হবে। র্যাবকে আমরা আরও আধুনিক করে দিচ্ছি। আগামী বাজেট আলোচনা চলছে। আগামী বাজেটেই এটা করে দেয়া হবে। বিশ্বের সঙ্গে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে পারি। চেষ্টা আমরা করছি। মানবসম্পদ সবড় সম্পদ। সেটা আমরা কাজে লাগাতে চাই।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, দেশীয় উৎসব ও বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন কাজ। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের একমাত্র এলিটফোর্স র্যাব যেকোনো অনুষ্ঠান কিংবা দিবস সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। র্যাবের যে মূল প্রতিপাদ্য বা শ্লোগান ‘বাংলাদেশ আমার অহঙ্কার’। আমি ধন্যবাদ জানাই এই প্রতিপাদ্যের জন্য। সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ আমার অহঙ্কার।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকতে চাই। বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘ভিক্ষুক জাতি কখনও অহঙ্কারের সঙ্গে বাঁচতে পারে না’। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা কর সে পথেই নেয়া হয়েছিল দেশকে। আমরা সে পথ থেকে বেরিয়ে যেতে চাই। আমাদের বাজেটের ৯০ ভাগ অর্থ এখন নিজস্ব। শুধু তাই নয়, পদ্মা সেতুর মতো সেতু আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করছি। আমরা কারো উন্নয়ন সহায়তা নিচ্ছি না। ধার নিচ্ছি পরিশোধ করছি। উন্নয়ন সহযোগিতা হিসেবে আমরা মিথ্যে অভিযোগ শুনতে রাজি নই। আমরা যে পারি সেটা দেখিয়েছি। সেটাই আমাদের ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে দেখতে চাই। নিজস্ব পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নের কোন জায়গায় দেখতে চাই। ৪১ সালের বাংলাদেশকে কেমন বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চাই। উন্নত দেশ হিসেবে আমাদের তিনটি কাজ করতে হবে। সেটা আমরা করে যাচ্ছি।
এসময় প্রধানমন্ত্রী র্যাব ফোর্সেস সদর দফতর কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং বিভিন্ন সময় অভিযানে নিহত র্যাব সদস্যদের স্মরণে তৈরি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ‘প্রেরণা ধারা’র শুভ উদ্বোধন করেন।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠাকালে র্যাব সদর দফতরসহ ব্যাটালিয়ন ছিল সাতটি। লোকবল ছিল পাঁচ হাজার ৫২১ জন। প্রয়োজনের তাগিদে বেড়েছে র্যাবের জনবল ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা। পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের চৌকস কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের নিয়ে এখন ১৪টি ব্যাটালিয়নে প্রায় সাড়ে আট হাজার র্যাব সদস্য কর্মরত রয়েছেন। নতুন তিনটি ব্যাটালিয়ন পেলে র্যাবের ব্যাটালিয়ন হবে ১৭টি।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে গত ১৪ বছর ধরে র্যাবের নিজস্ব ভবন না থাকায় সিভিল এভিয়েশন অথিরিটির একটি ভবন ভাড়া করে র্যাব সদর দফতর নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
গত ২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে হাজী ক্যাম্প সংলগ্ন ৮ দশমিক ৫৬ একর জমি বরাদ্দ দেন। পরবর্তিতে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেক সভায় ‘র্যাব ফোর্সেস সদর দফতর নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদিত হয়।
র্যাব সদর দফতরের ওই ভবন নির্মাণের পরিকল্পনায় মহাপরিচালকের অফিসসহ সকল উইংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা, সেই সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ বিবেচনায় আনা হয়েছে। ২৭ হাজার বর্গমিটারের ১২ তলা ভবনে সকল অফিসকে সুবিন্যাস্ত করা হয়েছে।