ঢাকা ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরের ধান কাটা শ্রমিকের অভাবে দিশাহারা কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:১৭:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৮
  • ৫৪১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অষ্টগ্রাম উপজেলায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাম্পার এই ফলনের পরও স্বস্তিতে নেই কৃষক। চড়া পারিশ্রমিকেও মিলছে না ধান কাটা শ্রমিক। ফলে কৃষক তার জমির পাকা ধান কাটতে পারছেন না। কোন কোন এলাকার কৃষক জমির ধান কাটতে পারলেও বেহাল যোগাযোগের কারণে কাটা ধান কৃষক বাড়িতে নিতে পারছেন না। ফলে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের একমাত্র কষ্টফসল।

কৃষকেরা জানান, একদিকে ধান কাটার কৃষি শ্রমিকের সংকটের কারণে পাকা ধান কাটা যাচ্ছে না। আর অন্যদিকে কর্দমাক্ত কাচা রাস্তার কারণে হাওর থেকে কাটা ধান জমি থেকে বাড়িতে নেয়া যাচ্ছে না। ফলে জমির ধান তোলা নিয়ে কৃষক এখন দিশাহারা। উপজেলার দু’য়েকটি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি সবক’টি ইউনিয়নের ধান হাওর থেকে ট্রলি কিংবা গাড়ি দিয়ে বাড়ি পৌঁছানোর মত কোন ব্যবস্থা নেই। যেসব কাঁচা রাস্তা রয়েছে, সেসবও বৃষ্টির কারণে কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এই রাস্তা দিয়ে কোন পরিবহন চলাচল করতে পারে না। এছাড়া অন্যান্য বছর বোরো মৌসুমে ধান কাটার সময় পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, রংপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকেরা ধান কাটার জন্য আসতো। বিগত বছরসমূহে পর পর অকাল বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বোরো ফসলের ক্ষতি হওয়ায় আগের মতো আর ধান কাটা শ্রমিকেরাও আসছে না।

এই সুযোগে স্থানীয় ধান কাটা শ্রমিকেরা চড়া পারিশ্রমিক ছাড়া ধান কাটছে না। যেখানে এক একর জমি কাটার জন্য চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগত, সেখানে এখন বার থেকে চৌদ্দ হাজার টাকা দিয়েও শ্রমিক মিলছে না।

উপজেলার আব্দুল্লাহপুর বাজুকা গ্রামের কৃষক মো. জামাল মিয়া জানান, বালিচাপড়া হাওরে তিনি ৮ একর জমি করেছিলেন। মাত্র এক একর জমি তিনি কেটেছেন। বাকি জমির ধান পাঁকলেও শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছেন না।

গয়েশপুর গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদ জানান, বারচর হাওরে তিনি ১২ একর জমি করেছেন। জমির ধানও পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিক না পাওয়া কোন রকমে পাঁচ একর জমির ধান কাটতে পেরেছেন। বাকি জমি যে কিভাবে কাটবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই! কাস্তুল গ্রামের কৃষক গোলাম কিবরিয়া কল্লোল জানান, সবিয়ারগোপ হাওরে তিনি তিন একর জমি করেছিলেন।
পুরো জমিই পেঁকে রয়েছে।

কিন্তু ধান কাটা শ্রমিকের অভাবে এখন পর্যন্ত তিনি এক মুঠো ধানও কাটতে পারেননি। কৃষকেরা জানিয়েছেন, ধান কাটা শ্রমিকের সংকট হাওরে প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে ধান কাটা শ্রমিকের চাহিদাও বেড়ে গেছে। একর প্রতি চার-পাঁচ হাজার টাকার বিপরীতে অনেককে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায়ও শ্রমিক সংগ্রহ করে ফসল কাটতে দেখা যাচ্ছে। তারপরও শ্রমিক মিলছে না।

অনেক কৃষক শ্রমিক না পেয়ে হাওরের পাড়ে বসে নিজের জমির দিকে তাকিয়ে বিলাপ করতেও দেখা গেছে। ধান কাটা শ্রমিক সংকটে কাবু এখন হাওরের কৃষক। জমিতে ফলানো সোনার ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত তাদের স্বস্তি নেই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরের ধান কাটা শ্রমিকের অভাবে দিশাহারা কৃষক

আপডেট টাইম : ০৬:১৭:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অষ্টগ্রাম উপজেলায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাম্পার এই ফলনের পরও স্বস্তিতে নেই কৃষক। চড়া পারিশ্রমিকেও মিলছে না ধান কাটা শ্রমিক। ফলে কৃষক তার জমির পাকা ধান কাটতে পারছেন না। কোন কোন এলাকার কৃষক জমির ধান কাটতে পারলেও বেহাল যোগাযোগের কারণে কাটা ধান কৃষক বাড়িতে নিতে পারছেন না। ফলে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের একমাত্র কষ্টফসল।

কৃষকেরা জানান, একদিকে ধান কাটার কৃষি শ্রমিকের সংকটের কারণে পাকা ধান কাটা যাচ্ছে না। আর অন্যদিকে কর্দমাক্ত কাচা রাস্তার কারণে হাওর থেকে কাটা ধান জমি থেকে বাড়িতে নেয়া যাচ্ছে না। ফলে জমির ধান তোলা নিয়ে কৃষক এখন দিশাহারা। উপজেলার দু’য়েকটি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি সবক’টি ইউনিয়নের ধান হাওর থেকে ট্রলি কিংবা গাড়ি দিয়ে বাড়ি পৌঁছানোর মত কোন ব্যবস্থা নেই। যেসব কাঁচা রাস্তা রয়েছে, সেসবও বৃষ্টির কারণে কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এই রাস্তা দিয়ে কোন পরিবহন চলাচল করতে পারে না। এছাড়া অন্যান্য বছর বোরো মৌসুমে ধান কাটার সময় পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, রংপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকেরা ধান কাটার জন্য আসতো। বিগত বছরসমূহে পর পর অকাল বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বোরো ফসলের ক্ষতি হওয়ায় আগের মতো আর ধান কাটা শ্রমিকেরাও আসছে না।

এই সুযোগে স্থানীয় ধান কাটা শ্রমিকেরা চড়া পারিশ্রমিক ছাড়া ধান কাটছে না। যেখানে এক একর জমি কাটার জন্য চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগত, সেখানে এখন বার থেকে চৌদ্দ হাজার টাকা দিয়েও শ্রমিক মিলছে না।

উপজেলার আব্দুল্লাহপুর বাজুকা গ্রামের কৃষক মো. জামাল মিয়া জানান, বালিচাপড়া হাওরে তিনি ৮ একর জমি করেছিলেন। মাত্র এক একর জমি তিনি কেটেছেন। বাকি জমির ধান পাঁকলেও শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছেন না।

গয়েশপুর গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদ জানান, বারচর হাওরে তিনি ১২ একর জমি করেছেন। জমির ধানও পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিক না পাওয়া কোন রকমে পাঁচ একর জমির ধান কাটতে পেরেছেন। বাকি জমি যে কিভাবে কাটবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই! কাস্তুল গ্রামের কৃষক গোলাম কিবরিয়া কল্লোল জানান, সবিয়ারগোপ হাওরে তিনি তিন একর জমি করেছিলেন।
পুরো জমিই পেঁকে রয়েছে।

কিন্তু ধান কাটা শ্রমিকের অভাবে এখন পর্যন্ত তিনি এক মুঠো ধানও কাটতে পারেননি। কৃষকেরা জানিয়েছেন, ধান কাটা শ্রমিকের সংকট হাওরে প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে ধান কাটা শ্রমিকের চাহিদাও বেড়ে গেছে। একর প্রতি চার-পাঁচ হাজার টাকার বিপরীতে অনেককে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায়ও শ্রমিক সংগ্রহ করে ফসল কাটতে দেখা যাচ্ছে। তারপরও শ্রমিক মিলছে না।

অনেক কৃষক শ্রমিক না পেয়ে হাওরের পাড়ে বসে নিজের জমির দিকে তাকিয়ে বিলাপ করতেও দেখা গেছে। ধান কাটা শ্রমিক সংকটে কাবু এখন হাওরের কৃষক। জমিতে ফলানো সোনার ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত তাদের স্বস্তি নেই।