হাওর বার্তা ডেস্কঃ জেলার ভূঞাপুরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে দীর্ঘদিন যাবৎ সন্ত্রাসী পাহারায় চলছে অবৈধ ইটভাটা। আঁখি ব্রিক্স নামের এ ইটভাটাটি ভূঞাপুর পৌরসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মিত হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে চালাচ্ছে ভাটাটি। পরিবেশ বিপর্যয়সহ এলাকাবাসী বিপাকের মুখে পড়লেও প্রশাসনের নিরবতার সচেতন মহলের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠেছে।
জানা যায়, আঁখি ব্রিক্স নামক এ ইট ভাটাটির মালিক বিএনপির নেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নির্মূলে ২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সালাম পিন্টু ও তার ভাই তাজউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সহচর ও ব্যবসায়ী পার্টনার নূরে আলম এবং শফিকুল ইসলাম তপন। ২০১৬ সালে জুলাই মাসে ভূঞাপুর পৌর শহরের শিয়ালকোল মহল্লায় নিরিহ কিছু লোকজনের জমি দখল করে ভাটা নির্মাণ শুরু করে। এলাকাবাসী বাধা দিলে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পাহারায় ভাটার কাজ অব্যাহত রাখে।
নিরুপায় হয়ে এলাকাবাসী স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পৌর মেয়র, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ ও আদালতে মামলা করেও বন্ধ করতে পারেনি ইটভাটাটি। সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মুখে প্রতিহত হয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন করে। গত ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) এর নেতারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে। এদিকে পৌর শহরে আবাসিক এলাকায় অবস্থিত অবৈধ ইটভাটাটির অদূরে রয়েছে, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা খাদ্যগুদাম, দুটি পেট্রোল পাম্প, ফায়ার সার্ভিস ভবন, কটন মিল, দেশের অন্যতম এক্সপোর্ট ট্রেডিং কোম্পানি নামক ডাল উৎপাদনের কারখানাসহ একাধিক উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির ও বাজার।
এসব জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় মারাত্বক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটার কারণে পরিবেশ অধিদপÍর, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশন, পৌরসভা কর্তৃক ইটভাটা বন্ধের জন্য দফায় দফায় নোটিশ প্রদান করলেও বন্ধ হয়নি ইটভাটাটি। এমনকি আদালতের আদেশকেও বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সন্ত্রাসী পাহারায় সচল রেখেছে এ ইটভাটা। প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই স্থানে ১৯৯৪ সনে নূরে আলম ও তার বড় ভাই জয়নাল আবেদীন ইট ভাটা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
সে সময় শিয়ালকোল গ্রামের হাতেম আলী নামক এক ব্যক্তি মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে তারা সেখানে ইট ভাটা না করার জন্য আদালতে মুচলেকা প্রদান করে অব্যাহতি পান। এর পর ২০১৬ সালের জুলাই মাসের দিকে আবারো একই স্থানে ইটভাটা নির্মাণের কাজ শুরু করে। গত ১৯ জুলাই ২০১৬ তারিখে ইটভাটা নির্মাণ বন্ধের দাবীতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে শতাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৯জুলাই ২০১৬ তারিখে উপপরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদান করেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০০২) এর বিধি ০৭(৪) মতে ইটভাটা নির্মাণের পূর্বে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক এবং বিধি ০৭ (৪) মতে ইটভাটার কোন কার্যক্রম করতে পারে না। এছাড়া ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা নির্মাণ আইন ৮ (খ) মতে সিটি করপোরেশন ও পৌর সভার মধ্যে কোন প্রকার ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না।
সে মতে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ সরজমিন প্রতিবেদনে ভূঞাপুর পৌর শহরের নির্মিত আঁখি ব্রিক্স নামে ইট ভাটাটি ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ধারা ৮উপধারা ১ (ক), (খ), (ঘ), ৩ (ক), (ঙ) মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেন। গত ২৬/১২/২০১৬ তারিখের আদেশে মেসার্স আঁখি ব্রিক্সকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে ইটভাটা বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
ইট ভাটার মালিক শফিকুল ইসলাম তপনের কাছে ইটভাটার বৈধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঝোটন চন্দ জানান, আমি যথারীতি ইটভাটাটি পরিদর্শন করেছি এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।