চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য সরকার বড় ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এখন থেকে চাকরির জন্য নিজ হাতে লিখিত আবেদনের প্রয়োজন নেই। আবেদনের সঙ্গে অসংখ্য সনদ দেয়ারও বিধান বাতিল করা হয়েছে। পোস্টাল অর্ডার, পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফট সংযুক্ত করার বিধান রহিত করার বিষয়টিও সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে কি না বা আবেদন সঠিকভাবে লেখা হয়েছে কী না-তা পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে বছরের পর বছর আবেদন ফেলে রাখার সংস্কৃতি রয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদের নিয়োগের বিলম্ব খুঁজতে গিয়ে এ অব্যবস্থা ধরা পড়েছে উল্লেখ করে মুখ্য সচিব বলেন, ‘এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে যারা নির্ধারিত ফরমে আবেদন করবেন তারাই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।’
তিনি জানান, আবেদনের সঙ্গে জন্মসনদ, নাগরিক সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অভিজ্ঞতার সনদ, চারিত্রিক সনদসহ অনেক ধরনের কাগজপত্র সংযুক্ত করার বিধান ছিল। এটা আবেদনকারীদের জন্য অতিরিক্ত বিড়ম্বনা। সে চাকরি পাবে কি না-তার নিশ্চয়তা নেই-অথচ তার আগেই আবেদন করতে গিয়ে তাকে নানা ঘাটে পয়সা গুনতে হয়, না হয় হয়রানির মুখে পড়তে হয়। এসব থেকে চাকরি প্রত্যাশীদের মুক্তি দিতেই সরকার নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
তিনি জানান, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধুমাত্র নির্ধারিত ফরমে চাকরি প্রত্যাশীকে আবেদন করতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার সময়ে আবেদনপত্রে উল্লেখ করা শর্তের সপক্ষে প্রমাণপত্র হাজির করতে হবে। তবে আবেদন ফরমে প্রার্থীকে অঙ্গীকার করতে হবে যে, তার দেয়া তথ্য সঠিক। ভুল তথ্য দিলে প্রার্থী আইনানুগ শাস্তি গ্রহণে বাধ্য থাকবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী ইত্তেফাককে জানান, ইতোমধ্যে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তর-অধিদপ্তরসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে সরকারের নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত ফরমের ছকও পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অন-লাইন বা ফরম ডাউনলোড করে খামেও আবেদন করা যাবে। এতে প্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে এবং চাকরি দেয়ার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা দূর হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জানিয়েছেন, সকল আবেদনকারীকে চাকরি দেয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে না। লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারায় বেশিরভাগ প্রার্থী ঝরে যায়। দেখা যায় একটি পদে ৫০০ প্রার্থীর আবেদন রয়েছে। সেসব বিবেচনায় নিয়ে সকল চাকরি প্রত্যাশীর কাছ থেকে কিছু টাকা যে পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে নেয়া হয় সেটি ঠিক কী না তা পর্যালোচনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে খুব শিগগির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ইতিপূর্বে ডাক বিভাগ ও খাদ্য অধিদপ্তরে প্রার্থীদের দেয়া টাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আত্মসাত্ করেছিলেন। এ নিয়ে মামলাও হয়েছিল। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তর এবং রেলওয়েতে চাকরি প্রত্যাশীদের তিন লাখ আবেদন এখনো বিবেচনা করে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ২০০৪ সাল থেকে এসব আবেদন পড়ে আছে। আর আবেদনপত্রের সঙ্গে যুক্ত ১০০ টাকার পোষ্টাল অর্ডারের ভাগ্যে কি হয়েছে তাও জানা যায় না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এক পাতার আবেদনে সংযুক্ত করতে হবে শুধুমাত্র ৫/৫ সেন্টিমিটার সাইজের সদ্যতোলা দুই কপি ছবি। পদের নাম, বিজ্ঞপ্তির তারিখ, প্রার্থীর নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ, জন্ম জেলা, জন্ম নিবন্ধন নম্বর, প্রার্থীর বয়স, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, বর্তমান ও স্থায়ী, জাতীয়তা, ধর্ম, জেন্ডার, পেশা শিক্ষাগত যোগ্যতা, বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়, পাসের সাল, গ্রেড/ শ্রেণি বা বিভাগ, চালান/ব্যাংক ড্রাফট নম্বর, বিভাগীয় প্রার্থী কী না, মোবাইল বা টেলিফোন নম্বর বা ই-মেইল যদি থাকে। পরিশেষে প্রার্থীর স্বাক্ষর।
এসব তথ্যের সপক্ষে কোন সনদ সত্যায়িত করে সংযুক্ত করার দরকার নেই। শুধুমাত্র মৌখিক বা চূড়ান্ত নিয়োগ পরীক্ষার সময়ে তা হাজির করতে হবে।