লন্ডন সফররত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সময় কাটছে পারিবারিকভাবেই। দুই দিন আগে তিনি এখানে এসেছেন। হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে কিছুক্ষণের জন্য সোফিটেল হোটেলে গিয়ে এরপর সরাসরি বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পশ্চিম লন্ডনের বাসায় গিয়ে উঠেছেন বেগম জিয়া। তিন রুমের এ বাসায় তারেক রহমান, দুই ছেলের দুই পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান ও শামিলা রহমান এবং তিন নাতনির সঙ্গে দীর্ঘদিনের জমানো গল্প করেই সময় কাটছে ক্লান্ত-শ্রান্ত খালেদা জিয়ার।
তবে পারিবারিক বিষয় ছাড়াও মা খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথাবার্তা বলছেন বলেই মনে করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পরিবারের লোকজন ছাড়া গত দুই দিনে কাউকেই সময় দেননি বিএনপি প্রধান। অবশ্য বুধবার সন্ধ্যার পর লন্ডন বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতা বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। তারা খালেদা জিয়ার লন্ডনে দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা করেন। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রগুলো জানায়, বিরোধী দলে থাকা এবং সংসদের বাইরে থাকা দীর্ঘ আট বছরে সরকারের নানা দমনপীড়নের নানা দিক নিয়েও তারেক রহমানের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলছেন মা খালেদা জিয়া। আলোচনায় আসছে আন্দোলনের সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের নানা কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলোও। সর্বশেষ তিন মাসের আন্দোলনে গুলশান কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ থাকা দিনগুলোর কথা নিয়ে ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতনিদের সঙ্গে গল্প করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
জানা যায়, ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর দুই মেয়েকে নিয়ে বেশ কয়েকদিন আগেই লন্ডনে যান শামিলা রহমান। তারেক রহমানের বাসার কাছাকাছি একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে কোকোর দুই মেয়েকে। এখন থেকে স্থায়ীভাবে কোকোর স্ত্রী বাচ্চাদের নিয়ে লন্ডনেই থাকবেন। এ বিষয়েও পারিবারিকভাবে আলোচনা করছেন জিয়া পরিবারের সদস্যরা।
জানা যায়, আজ লন্ডনের একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর পায়ের সমস্যা নিয়েও আরেক চিকিৎসকের কাছে যাবেন। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই দুই সপ্তাহের কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন তিনি। এ বিষয়টি দেখভাল করছেন তারেক রহমান নিজেই।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডন এসেছেন চোখের চিকিৎসার জন্য। স্বাভাবিকভাবেই বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) ভাইয়ার (তারেক রহমান) বাসায় থাকবেন। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। বিশ্রাম নিয়ে দু-এক দিন পর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করবেন। তবে ঈদের দিন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
লন্ডন বিএনপির একাধিক নেতা প্রতিবেদককে বলেন, জিয়া পরিবারসহ দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মামলা-হামলা গ্রেফতারসহ সাজা আতঙ্কের নানা দিকগুলোও উঠে আসতে পারে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের আলোচনায়। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতাদের সাজা দেওয়া হলে দলের নেতৃত্ব কীভাবে চলবে-সে বিষয়গুলো নিয়েও কথাবার্তা বলছেন মা-ছেলে। বিগত তিন মাসের আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা নেতাদের নেতৃত্ব নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসতে পারে।
সূত্রমতে, দলের নেতাদের মধ্যে নানামুখী চিন্তাভাবনার বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলছেন মা-ছেলে। বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া, আগামী দিনে তারুণ্যনির্ভর ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব, ভবিষ্যতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপরেখাসহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা হচ্ছে বিএনপির এই শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে। মঙ্গলবার লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বুধবার স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৭টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেন খালেদা জিয়া। চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য সফরে যাওয়া বেগম খালেদা জিয়া দুই সপ্তাহ লন্ডনে থাকবেন। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি পরিবার ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। ব্রিটিশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তার বৈঠকের কথা রয়েছে। তবে আপাতত তার কর্মসূচি গোপন রাখা হয়েছে। প্রথমবারের মতো লন্ডনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বিএনপি বলছে, ব্যক্তিগত সফর হলেও ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন খালেদা জিয়া। এই প্রথম তারেক রহমান প্রকাশ্যে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ড্রাইভিং সিটে বসে মা খালেদা জিয়াকে নিয়ে বাসায় যান। এ নিয়েও লন্ডনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
সমালোচকরা বলছেন, তারেক রহমানের গাড়ি চালানোর বৈধ লাইসেন্স আছে কি না? ব্রিটেনের বাংলা কমিউনিটিতেও এ নিয়ে ছিল ‘টক অব দ্য টাউন’। লন্ডন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলে তারেক রহমান লাইসেন্স পান কীভাবে? তবে যুক্তরাজ্য বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা সভাপতি এম এ মালেক এবং সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ দুজনেই এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন, ২০১০ সালে তারেক রহমান ব্রিটেনের নিয়মনীতি মেনে কার ড্রাইভিংয়ে প্রথমে থিউরি এবং পরে প্র্যাকটিক্যাল পাস করেন। এরপর তারেক রহমান নিয়মিতই গাড়ি চালাতেন।-বিডিপ্রতিদিন