হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওরে ধানের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়েছে। এবার ফলন ভাল হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। জেলার দিরাই-শাল্লার বরাম, ছায়া এবং ধর্মপাশার চন্দ্রসোনার তাল হাওরের সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা বলেছেন, ‘আগামী শুক্র – শনিবার থেকে পুরো হাওরজুড়েই ধান কাটা উৎসব শুরু হবে।’ এদিকে, হাওরাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায়ই ধান কাটা শ্রমিক নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা। বিশেষ করে বড় কৃষকরা পড়েছেন বেকায়দায়। অগ্রিম টাকা দিয়েও ধান কাটা শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি করতে পারছেন না তারা।
শাল্লার ছায়ার হাওরের পূর্বপাড়ের আঙ্গাউড়া গ্রামের কৃষক প্রেমানন্দ দাস বলেন,‘আমি ৪ একর জমি চাষাবাদ করেছি, এর মধ্যে ২৮ জাতের ৩০ শতক ধান সোমবার কেটে বাড়িতে এনেছি। এই জমি সেচ প্রকল্পের আওতায় করেছিলাম। আগাম ধান অর্থাৎ ২৮ জাতের ধানে ফলন কিছুটা কম হয়। তবুও ৩০ শতক জমিতে কমপক্ষে ১৫ মণ ধান পাওয়া যাবে।’
এই উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের গড়গাঁও গ্রামের কৃষক আজহার উদ্দিন বললেন,‘পাকা ধানের গন্ধ বের হওয়া শুরু হয়েছে হাওরে। ১৫-২০ দিন আবহাওয়া ভাল থাকলেই ধান কাটা-মাড়াই শেষে গোলায় ওঠানো সম্ভব। ধান কেটে ঘরে আনা গেলে, এবার যেভাবে ফলন হয়েছে, গত বছরের ক্ষতি পুষাতে পারবেন কৃষকরা।’
আঙ্গাউড়া গ্রামের কফিন্দ্র শুক্লবৈদ্য ২ কেয়ার জমির ধান কেটেছেন। কফিন্দ্র শুক্লবৈদ্য জানালেন, সোমবার সকালে নিজেরাই (পরিবারের সদস্যরা মিলে) জমির ধান কেটেছেন। বিকালে মাড়াই মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করবেন। ২ কেয়ার জমিতে ৩২ মণের মতো ধান পাবেন বলে জানান এই কৃষক।
এদিকে, পুরো হাওর এলাকায় ধান কাটার শ্রমিক নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা। বিশেষ করে বড় কৃষকদের অনেকে ধান কাটা শ্রমিকদের সঙ্গে এখনো চুক্তি করতে না পারায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, ফসল ভাল হলে ধান পাকার ১৫ দিন আগেই ধান কাটা শ্রমিকের সঙ্গে চুক্তি সারেন তারা। এজন্য ভাগালোদের (ধান কাটা শ্রমিকদের) আগেই অগ্রিম দেওয়া হয়। এবার কোন কোন কৃষক অর্থ সংকটের কারণে, আবার কেউবা শ্রমিক না পাওয়ায় চুক্তি করতে পারেন নি।
শাল্লার ভান্ডা বিলের পাড়ের হবিবপুরের বড় গৃহস্থ দীপক সরকার বলেন,‘৫০ কেয়ার (প্রায় ১৭ একর) জমি এবার চাষাবাদ করেছি। ফসলও ভাল হয়েছে। কিন্তু এখনও ধান কাটা শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি করতে পারিনি। ময়মনসিংহের কিছু শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছি। কেয়ার প্রতি ৩০ হাজার টাকা চায় তারা। এভাবে এনে পুষাবে না, অন্যান্য বছর ১৫-১৬’শ টাকায় এনেছি। এখন কীভাবে কী করি চিন্তা করছি। ৫ বছর আগেও পাব না, নোয়াখালী, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসতো। এখন ঐসব এলাকার মানুষ আমাদের চেয়ে স্বাবলম্বি।’
এই উপজেলার আঙ্গাউড়ার কৃষক কফিন্দ্র শুক্লবৈদ্য বলেন,‘ধান কাটার মেশিন দিয়ে আমাদের এলাকায় ধান কাটা যায় না। তবে মাড়াই কলে (মাড়াই মেশিন) অসম্ভব উপকার হয়েছে। একটি মাড়াই কল দিনে তিন-চার হাল জমির ধান মাড়াই করতে পারে। মাড়াই কল গ্রামে গ্রামে থাকায় শ্রমিকদের কাজ কিছুটা কমেছে।’
বিশ্বম্ভরপুরের করচার হাওর পাড়ের রাধানগরের কৃষক কফিল আহমদ বলেন,‘৬ হাল জমি (২৪ একর) চাষাবাদ করেছি। এখনও ধান কাটা শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি করতে পারিনি। সলুকাবাদ ও ধনপুরের কিছু শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছি। এরা বারকী শ্রমিক। আসতে চাচ্ছে না। বালু-পাথর মহালে কাজ থাকলে এরা আসতে চায় না।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার সাহা বললেন,‘সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় এবার ২ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন। এবার ফলন যেভাবে হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। হাওরে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পর্যাপ্ত যন্ত্র থাকায় এবং কিছু কিছু এলাকায় ধান কাটার মেশিন আসায় শ্রমিকের সংকট থাকবে না। তবুও কীভাবে ধান কাটা শ্রমিক বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলবো।